Advertisment

চারুলতার শেষ দৃশ্য কী হবে, জিজ্ঞেস করার সাহস হয় নি: মাধবী মুখার্জি

মহানগরের শুটিং চলাকালীনই মাণিকদা আমার কাছে জানতে চান, কবে আমরা আবার একসঙ্গে কাজ করতে পারব। আমি তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
satyajit ray 100 years

চারুলতা ছবির দৃশ্যে মাধবী মুখোপাধ্যায় এবং শৈলেন মুখোপাধ্যায়। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আর্কাইভ

সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে তাঁর পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। আজ এই সিরিজের চতুর্থ কিস্তিতে রইল ‘চারুলতা’ ছবিতে অবিস্মরণীয় মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথোপকথনের শ্রেষ্ঠাংশ। তিনি কথা বলেছেন আমাদের প্রতিনিধি অলকা সাহনির সঙ্গে। এর আগে এই সিরিজে প্রকাশিত হয়েছে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মমতা শঙ্কর, এবং বরুণ চন্দের সাক্ষাৎকার।

Advertisment

"সিনেমা অর্থাৎ চলচ্চিত্র, বা চলমান চিত্রের শিল্প। অথচ 'টকি' বা সবাক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সিনেমা হতে শুরু করল সংলাপে-ভারাক্রান্ত। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী (১৯৫৫) এটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল যে সিনেমার মূলমন্ত্র কিন্তু ছবিই, কথা নয়। অপু বা দুর্গার মনের অবস্থা বোঝাতে সত্যজিৎ রায়ের সংলাপের প্রয়োজন পড়ে নি।

এরকম আরও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে তাঁর কাজে। মহানগর (১৯৬৩) ছবিতে আমি যখন প্রথম তাঁর সঙ্গে কাজ করি, আরতি, অর্থাৎ আমার চরিত্র, সম্পর্কে তাঁর দর্শন শুনে একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেসময়ের মধ্যবিত্ত সমাজের সর্বগ্রাসী পিতৃতন্ত্রের আবহে আরতি বাড়ির বাইরে বেরোয় সেলস-এর চাকরি করতে। যতক্ষণ সে বাড়িতে ছিল, তার না ছিল নিজস্ব আইডেন্টিটি, না আত্মবিশ্বাস। তবে ধীরে ধীরে তার মনের জোর বাড়তে থাকে, এবং শেষমেশ আরেকজন নারীর সমর্থনে দাঁড়ায় সে।

আরও পড়ুন: ‘প্রিয় মানিকমামা…’ প্রকাশ্যে ‘চারুলতা’-র রেকর্ডিং নিয়ে কিশোরকুমারের চিঠি

মহানগরের শুটিং চলাকালীনই মাণিকদা আমার কাছে জানতে চান, কবে আমরা আবার একসঙ্গে কাজ করতে পারব। আমি তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই প্রশ্ন তো আমার করার কথা!

এর কিছুদিন পর মাণিকদা আমায় ফোন করে বললেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নষ্টনীড় (১৯০১) গল্পটা পড়তে। আমার পড়া ছিল আগেই, কিন্তু উনি জোর দিয়ে বললেন যেন আবার পড়ি। তারও কিছুদিন পর উনি আমায় স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনালেন, ছবির নাম চারুলতা (১৯৬৪)। স্ক্রিপ্টে সবকিছুই ছিল, শেষ দৃশ্যটা বাদে। আমি জিজ্ঞেস করতে আমায় বললেন, পরে জানাবেন। এত রাশভারী ব্যক্তিত্ব, যে আমার সাহস হলো না আর কিছু জিজ্ঞেস করার। চারুলতার শেষ দৃশ্যে আমরা (শৈলেন মুখোপাধ্যায় এবং মাধবী) বিনা প্রশ্নে ওঁর নির্দেশ মেনে কাজ করেছিলাম।

চারুলতার চেহারাছবি, যা পরবর্তীকালে এত আইকনিক হয়ে যায়, তার প্রতিটা খুঁটিনাটি সত্যজিৎ রায়ের হাতে তৈরি। চারু কী শাড়ি-ব্লাউজ পরবে, তা পর্যন্ত উনি নিজে ঠিক করে দিতেন। এত সমাদর এবং প্রশংসা পেয়েছিল চারুলতা। আজ আচমকা ছবিটায় কাজ করার স্মৃতি মাঝেমাঝেই দরজায় হানা দেয়।"

অনুলিখন: অলকা সাহনি

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment