১০ জানুয়ারি মুক্তি পেতেই, প্রথমদিনই দীপিকা পাডুকোন অভিনীত 'ছপাক' দেখলেন মৌবনি। তার আগেই সোশাল মিডিয়াতে মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী যেন মধ্যপ্রদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ছপাক-কে করমুক্ত করা হয়। এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে বিশেষ কথোপকথনে তিনি জানালেন, এই আবেদন শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও।
প্রত্যাখ্যাত প্রেমিকের ছুড়ে দেওয়া অ্যাসিডে ঝলসে গিয়েছিল লক্ষ্মী আগরওয়ালের মুখ। এমন ঘটনা এদেশে বিরল নয়। কিন্তু যা বিরল তা হল, এর পরে লক্ষ্মীর ঘুরে দাঁড়ানো, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আদালতে তাঁর যুদ্ধ এবং অবসাদে ডুবে না গিয়ে নিজের জীবনকে আবার গড়ে তোলা। লক্ষ্মী আগরওয়াল-এর এই জীবন অবলম্বনেই নির্মিত পরিচালক মেঘনা গুলজারের ছপাক, যেখানে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপিকা পাডুকোন।
আরও পড়ুন: Chhapaak movie review: বলিষ্ঠ দীপিকা প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন চরিত্রে
এই ছবিটি ১০ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে এবং প্রথমদিনেই ছবিটি দেখতে গিয়েছেন মৌবনি। পিসি সরকার জুনিয়র-কন্যা অ্যাসিড আক্রমণের বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ''অ্যাসিড আক্রমণ একটি জঘন্য অপরাধ। মানুষের শরীরকে ক্ষইয়ে দেয় এমন একটা তরল নিয়ে কারও শরীর তাক করে ছুড়ে দেওয়া-- এমন একটা অপরাধ যে আজও ঘটে চলেছে তা খুব দুঃখজনক'', বলেন মৌবনী, ''আমার মনে হয় 'ছপাক' এমন একটা ছবি যা রাজ্যে এবং জাতীয় স্তরে, দুই ক্ষেত্রেই করমুক্ত হওয়া উচিত।''
বছর দেড়েক আগে মিস এমপ্রেস ইউনিভার্স বিউটি পেজেন্টে অংশ নিয়েছিলেন মৌবনি। ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন অভিনেত্রী ওই প্রতিযোগিতায় এবং মিস এমপ্রেস ইউনিভার্স সেকেন্ড রানার আপ খেতাব জিতে নেন। প্রতিযোগিতার একটি স্তরে মেয়েদের উপর সংঘটিত অপরাধ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত গবেষণামূলক প্রবন্ধ জমা দিতে হয়েছিল তাঁকে। সেই প্রস্তুতির সময়েই তিনি জানতে পারেন যে অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনায়, পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে ১ নম্বরে। বিচলিত মৌবনি এর পর বহু তথ্য সংগ্রহ করেন এই বিষয়ে। সেইসময় থেকেই এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে নানা ভাবে সরব হয়েছেন তিনি। যে সমস্ত সংস্থা অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করে, তাদের নানা ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকেন অভিনেত্রী।
''শ্রেই সংস্থার দিব্যলোক রায়চৌধুরীর থেকে আমি এই বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। শ্রেই-এর মাধ্যমে এমন অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে যাঁরা অসম্ভব লড়াই করছেন'', বলেন অভিনেত্রী, ''যেমন সঞ্চয়িতা যাদব। উনি এই ঘটনার পরে বেশ কিছুদিন অন্তরালে ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন। একটি কোম্পানির ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজ করেন এখন। আবার ঊষা নস্করকে দেখেছি, যাঁর দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে কিন্তু জীবনের কাছে হেরে যাননি। এঁদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে আমি নিজেও অনেক শক্তি পেয়েছি। এছাড়া আমারই এক ছাত্রী রয়েছে, মনীষা। পরিচালক তূর্য মিত্রের মাধ্যমে আমার মনীষার সঙ্গে পরিচয়। ওর যখন ১৮ বছর বয়স, অ্যাসিডে মুখ ঝলসে যায়। আমি মনীষার কথা জানার পরে ঠিক করি ওকে বিনা পারিশ্রমিকে নাচ শেখাব। যাতে এর পরে ও নিজে পারফর্ম করে নিজেকে সাপোর্ট করতে পারে।''
মৌবনি জানালেন এনসিআরবি ডেটা অনুযায়ী, বিগত দুবছর ধরেই অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ ১ নম্বরে রয়েছে। এখনও যে এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে, তা অত্যন্ত পীড়াদায়ক, জানালেন অভিনেত্রী। ''বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাসিড আক্রমণ যারা করে তাদের ধরতে পারা যায় না। অ্যাসিড ছুড়ে দিয়ে সহজেই ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। যদি কেউ ধরাও পড়ে, তাহলেও তার অপরাধ প্রমাণ করা বেশ কঠিন। আমার মনে হয়, আরও বেশি সংখ্যক মানুষের এই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত, তাই ছবিটি দেখা জরুরি'', বলেন মৌবনি।
আরও পড়ুন: বৃহন্নলাদের মাতৃত্বের গল্প বলবে নতুন ধারাবাহিক
যে কোনও সিনেমার টিকিটের দামের মধ্যে ধরা থাকে ওই ছবির বাণিজ্যিক কর। তাই যদি কোনও ছবি করমুক্ত করা হয়, তবে টিকিটের দাম খানিকটা কমে যায়। তাই মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে মৌবনির অনুরোধ, করমুক্ত করা হোক এই ছবি, যাতে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ ছবিটি দেখতে পারেন। তাঁর মতে, অ্যাসিড আক্রমণ শুধুই নারীদের ইস্যু নয়, এদেশে অনেক পুরুষও অ্যাসিডে আক্রান্ত হন। এটি একটি নৃশংস অপরাধ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, কারও সঙ্গেই এমনটা হওয়া উচিত নয়।
এই ধরনের অপরাধকে যাতে মুছে ফেলা যায় তার জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়তে চান মৌবনি। তাই মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে 'ছপাক'-এর করমুক্তির অনুরোধ। ''আমার এই আবেদনের মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই, বিজেপি-তৃণমূল কোনও কিছুই এখানে কোনও বিষয় নয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার একটা বিনীত আবেদন মাত্র'', বলেন মৌবনি, ''আর আমি তো একটা ম্যাজিক পরিবারের অংশ। আমাদের সকলেরই মনে হয় বিভিন্ন সময়ে যে ম্যাজিক দিয়ে যদি অসম্ভবকে সম্ভব করা যেত। অ্যাসিড আক্রমণ রাতারাতি বন্ধ হবে না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করতে পারি। সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি, তাহলে অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়।''