করোনাভাইরাস অতিমারী সারা পৃথিবীর মানুষকেই একটা অদ্ভুত সংকটের মধ্যে এনে ফেলেছে। চলতি লকডাউনে অনেক সমস্যার মধ্যে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি এই সময়ের অত্যন্ত ইতিবাচক কিছু দিকও উঠে আসছে এবং সেই দিকগুলি নিয়েই কথা বললেন অভিনেত্রী পাওলি দাম। জানালেন ঠিক এইভাবে বহুদিন বোধহয় পরিবারের সঙ্গে থাকা হয়নি তাঁর এবং আরও অনেকেরই।
''আমি এখন বাড়িতে আছি, যে সময়টা পরিবারকে দিতে পারিনি, সেই সময়টা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সবাই সবার কাজ ভাগ করে নিয়েছি। অনেকদিন পর খুব সুন্দর একটা সময় কাটছে। আমার ভাই বাইরে বাইরে থাকে, এখনও ও-ও আছে... সবাই ইউনাইটেড একটা জায়গায়, এটা দারুণ লাগছে'', বলেন পাওলি, ''আরও একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছি, কেউ আর যেন কিছুতে না বলছে না। ধরো কেউ বলল যে এই রান্নাটা করি, কেউ বলছে না কাল করো বা অন্য কিছু করো। সবাই খুব পজিটিভ একটা মানসিকতায় রয়েছে যে যা হচ্ছে, যেটা আসছে, সেটা অ্যাকসেপ্ট করি। এটা খুব বড় একটা বিষয়।''
আরও পড়ুন: মাত্র ১৯ বছরেই থেমে গিয়েছিল জীবন, মৃত্যুদিনে ফিরে দেখা নায়িকাকে
লকডাউনে সবাই গৃহবন্দি রয়েছেন ঠিকই কিন্তু এই পরিস্থিতিকে ঠিক বন্দিদশা না বলাই ভাল। বরং এটাকে বলা উচিত একটা সুযোগ-- বাইরে না বেরিয়ে কীভাবে কোয়ালিটি টাইম কাটানো যায় বাড়িতে, পাশাপাশি নিজের এমন কিছু শখ বা ভালো লাগাকে চিনে নেওয়া যায়, খুঁজে পাওয়া যায়, যা হয়তো দৈনন্দিন কাজের চাপে ঠিক হয়ে ওঠে না। সেই দিকটিতে জোর দিয়েছেন অভিনেত্রী।
আবার মানুষ এমন একটা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পাশের মানুষের প্রতি কতটা সামাজিকভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠছেন, সেই বিষয়েও আলোকপাত করেছেন তিনি। ''আমি যে কমপ্লেক্সে থাকি, সেখানে মাঝে মাঝে সবজিওয়ালা আসছে। আমি দেখছি যে বাজার করতে নেমে মানুষ এটাও ভাবছেন যে যতটা রয়েছে সবাই যেন পায়'', বলেন পাওলি, ''হয়তো দুটো ফুলকপি রয়েছে, একজন দুটো একসঙ্গে কিনছেন না, পিছনে দাঁড়ানো অন্য মানুষের জন্য রাখছেন বা সবজিওয়ালা নিজেও বলছে যে একটা আপনাকে দিই, আর একটা অন্যজনকে দিতে পারব।''
মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা ফিরে আসছে, পাশাপাশি বিলাসিতা আর প্রয়োজনীয়তার পার্থক্য করতে শিখছেন মানুষ এই সংকটে দাঁড়িয়ে, এমনটাই মনে করছেন তিনি। সবাই সবার খোঁজ নিচ্ছেন। লকডাউনে গৃহবন্দি হয়ে কেউ ছবি আঁকছেন, শিল্পীরা অনলাইনে পারফর্ম করছেন-- সামগ্রিক পরিস্থিতির এই ইতিবাচক দিকগুলি মন ছুঁয়ে যাচ্ছে তাঁর।
অন্যান্য বেশ কিছু দেশের তুলনায় এদেশে সংক্রমণের হার অনেকটাই কম। বিগত কয়েক দিনে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু ১৩০ কোটির দেশে খুব কম শতাংশ মানুষই এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত। তবে গোটা পৃথিবীর পরিস্থিতি যদি বিচার করা যায়, তবে এখনও সংকট তার শেষ দেখেনি। আত্মীয়স্বজন-বন্ধুরা ছড়িয়ে রয়েছেন নিউ ইয়র্কে-অস্ট্রেলিয়ায়. তাঁদের নিয়েও কিঞ্চিৎ চিন্তায় আছেন অভিনেত্রী।
আরও পড়ুন: দিল্লির নিজামুদ্দিনের ঘটনা ‘অপরাধমূলক’, শাস্তির দাবি তুলে গর্জে উঠলেন অপর্ণা সেন
পাওলি মনে করেন এমন একটা পরিস্থিতিতে যে মানবসভ্যতা এসে পড়ল, সেটা অনেকটা আয়নার সামনে দাঁড়ানো। ''আমার যেন মনে হয়, প্রকৃতি একটা প্রতিশোধ নিচ্ছে। এই যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, গাছ কেটে ফেলা... এই সবকিছু নিয়েই মানুষকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এই সংকট আমাদের একটা আয়নার সামনে এনে ফেলেছে। এই সময়টা আমাদের ইনট্রোস্পেকশনের সময়'', বলেন অভিনেত্রী, ''উই টুক নেচার ফর গ্রান্টেড। এই সময়টা আমাদের মনে করিয়ে দিল জীবন কতটা মূল্যবান। এই যে আজ সন্ধে পর্যন্ত বেঁচে আছি, এটাই বড় কথা। খুব মেটেরিয়ালিস্টিক জীবনযাপন করতে করতে বোধহয় আমরা ভুলতে বসেছিলাম জীবন আসলে কতটা দামি। হয়তো মাঝে মাঝে এইভাবে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।''