সম্প্রতি বিজেপি ছেড়ে বাম শিবিরে যোগ দিয়েছেন রূপা ভট্টাচার্য (Rupa Bhattacharjee)। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এখন উত্তাল। বামপন্থী মনোভাবাপন্ন তারকা- রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীলেখারাও বেজায় আপত্তি জানিয়েছেন পদ্ম-ত্যাগী তারকাদের সিপিএমে জায়গা দেওয়ার জন্য। সমালোচনার শিকার হয়েছেন অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপা দুজনেই। এবার সেই প্রেক্ষিতেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে রূপা সাফ জানিয়ে দিলেন তাঁর বিজেপি ছাড়ার কারণ আসলে কী?
অভিনেত্রীর কথায়, "দিলীপ ঘোষ ভন্ড।" পদ্ম শিবিরের রাজ্য সভাপতির রগড়ে দেব মন্তব্যে রূপার হুঁশিয়ারি, "একটা কথা ভুলবেন না! আমায় শিল্পী আপনি বা বিজেপি বানায়নি। মানুষ বানিয়েছে। তাদের প্রতি সৎ এবং দায়বদ্ধ আমি থাকবো-ই।"
১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রূপা? আর কেনই বা ৩ বছরে এই মোহভঙ্গ? যাবতীয় প্রশ্ন উঠেছিল। সেকথাও খোলসা করলেন অভিনেত্রী। বললেন, "আমার আপনাদের হাত ধরার পেছনে কয়েকটা কারণ ছিল। ছোট থেকে বামপন্থী মানসিকতায় বড় হয়ে ওঠার পর আমি বিজেপির হাত ধরায় অনেক বন্ধুই আমায় ত্যাগ করে। তাঁরা ভাবে, আমি ধান্দাবাজ। ঠিক ভেবেছিল। ধান্দা ছিল আমাদের। আমরা যাঁরা একসঙ্গে ওই দিন যোগ দিয়েছিলাম তাদের ২টো ধান্দা ছিল।"
"প্রথমত, এখানে নৈরাজ্যের থেকে মুক্তি। কেন্দ্র ও রাজ্যে যদি এক সরকার হয় তাহলে রাজ্যে কর্মসংস্থান বাড়বে। আমাদের রাজ্য থেকে দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক থেকে পরিযায়ী ইঞ্জিনিয়ার, পরিযায়ী কর্পোরেট, পরিযায়ী শিক্ষক এমনকী পরিযায়ী শিল্পীরা দলে দলে বাঁচার জন্য ঘর ছাড়বে না। আর দ্বিতীয়ত, আসল ধান্দা ছিল নিজেদের ঘর বাঁচানো। আমাদের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের জগৎ কতটা ভুগছিল, কতটা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল সেটা সবাই জানে। সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য চাইছিলাম। যাতে রাজনৈতিক রং না দেখে শুধু যোগ্যতার নীরিখে এখানে শিল্পী, কলাকুশলী, প্রোডিউসার সবাই শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে একজোট হয়ে। এটাই ছিল বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মূল কারণ", মত রূপার।
<আরও পড়ুন: ‘ঘোর কলিযুগে বাস করছি’, অশান্ত আফগানিস্তান দেখে ‘গীতা’ স্মরণে রিয়া চক্রবর্তী!>
দিলীপ ঘোষকে একহাত নিয়ে রূপা ভট্টাচার্য আরও যোগ করলেন, আপনি দিল্লিতে যখন মঞ্চে আমার গলায় উত্তরীয় পরিয়ে বিজেপিতে বরণ করেছিলেন যার ফুটেজ সব মিডিয়া হাউস বারবার দেখায়, তখন আপনার সহজ-সরল আপ্যায়নে মনে হয়েছিল আপনি আর যাই হন ভন্ড নন। আমি এবং আমার সঙ্গে ওই মঞ্চে উপস্থিত সব শিল্পী বন্ধুদের মনে হয়েছিল বিজেপি আমাদের সম্মান করে। আর করবে নাই বা কেন? আমরাই প্রথম একঝাঁক শিল্পী যাঁরা সাহস করেছিলাম শাসক দলের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে। তার আগে হাতে গোনা কয়েকজন ছিলেন। আর প্রথম এই সাহস দেখিয়েছিলেন, বলাই বাহুল্য আমাদের শিল্পীদের সাপোর্ট রূপা গঙ্গোপাধ্যায় দি। আমরা দল বেঁধে যোগ দেওয়ার পরেই কিন্তু রাজ্যের শাসক দল এবং বুদ্ধিজীবী সমাজ বিষয়টায় গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে। সেই অর্থে বলতে গেলে, এটাই ছিল রাজ্যে বিজেপির শিল্প-সংস্কৃতি মহলে গৃহপ্রবেশ। মনে রাখবেন, ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই ওই সময় কিন্তু রাজ্যে বিজেপি হাওয়া ছিল না যে সবাই টিকেট বা ক্ষমতার লোভে গিয়েছিলাম।"
উল্লেখ্য, বাংলা বিজেপির অন্তর্দ্বন্দের কথাও ফাঁস করলেন অভিনেত্রী, বললেন, "বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বুঝলাম এখানে খুব গোলমাল। আসলে মাননীয় মুকুলবাবুর সঙ্গে আগে পরিচয় হয়েছিল, আমাদের এক তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে। যেহেতু আমরা মুকুল রায়ের মাধ্যমে এসেছি তাই আপনার লবি নাকি আমাদের অ্যান্টি। ওরে বাবা, তারপর ২বছর এই লবির জন্য ভয়ঙ্কর নাকানি-চোবানি খেলাম সবাই। এর সাথে গেলে ও রাগ করে করে। এ ডাকলে ও বলে রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ করে দেব। আরে এসব আমরা বুঝি না। আমরা চাই অনেক বেশি কাজ হোক তার জন্যে আপনাদের পলিসি যা যা সাহায্য দরকার, আমরা আছি। এই সব গন্ডগোলে অনেক শিল্পী যারা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা বিরক্ত হয়ে ছিটকে গেলেন। কিন্তু আমরা কয়েকজন মাটি কামড়ে পড়েছিলাম। কারণ জানতাম, রাজনীতিতে ধৈর্য খুব জরুরি গুণ। সরকার বদলালে বিজেপি নেতারা যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নিশ্চয়ই হবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিরও লাভ হবে। আরও বেশি করে কর্মসংস্থান হবে।"
<আরও পড়ুন: হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে তালিবানি সন্ত্রাসের তুলনা! স্বরা ভাস্করকে গ্রেফতারের দাবি তুঙ্গে>
তারকা সদস্যদের টিকিট না পাওয়া নিয়ে যে চাপা ক্ষোভের কথা শোনা গিয়েছিল, সে প্রসঙ্গে রূপার মন্তব্য, "নির্বাচনী হাওয়ায় সারা বাংলা তথা দেশ ধরে নিল বাংলায় এই প্রথম বিজেপি সরকার গড়ছে। সেই হাওয়ায় আরও শিল্পীরা আবার যোগ দিলেন। পার্টিতে যাঁরা নতুন এলেন, তাঁদের সবাইকে টিকেট দিলেন। কিন্তু যে সব শিল্পীরা ২০১৪ থেকে দলের পাশে থেকে মার খেয়েছেন, তাদের চিনলেন না। এমনকী, যাঁরা আমাদের সঙ্গে দলে এসে লড়াই করেছেন এতদিন তাঁদেরও না। শুধু তাই নয়, যাঁরা বছরের পর বছর বিজেপি করেছেন, মার খেয়েছেন, পরিবার নষ্ট হয়েছে, সেইসব কার্যকর্তাকে গুরুত্ব না দিয়ে টিকিট দিতে শুরু করলেন সদ্য দল-বদলে আসা তৃণমূল নেতাদের। আমি জানতাম, বিজেপি পার্টির কর্মীরাই পার্টির মেরুদন্ড। যে কোনও রেজিমেন্টেড পার্টির মত। কিন্তু তা তো হছে না। আমার খটকা লাগল।"
পাশাপাশি অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন তৃণমূল গড়তেই সিবিআই হানা দিল, সেই প্রসঙ্গ তুলেও তার বিরোধীতা করেছেন রূপা। অভিনেত্রীর বক্তব্য, "মহামারীর প্রকোপে মানুষ যখন বিপর্যস্ত, তখন CBI নিজের কাজ করলেন। বেশ করলেন, কিন্তু মহামারী যখন তুঙ্গে তখন দুটো দিন অপেক্ষা করলে হতো না? এই বক্তব্য মানুষ হিসেবে আমরা বলায় আপনাদের দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করলেন উনিও আপনার মতো আমাদের চেনেন না। আমাদের কোনো অস্তিত্বই নাকি নেই দলে।"
শেষে অভিনেত্রীর সাফ মন্তব্য, "আমি আর বিজেপির কেউ নেই। শিল্পীদের কদর করেননি তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু দলের কর্মীদের কদর করুন। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝুন।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন