বিগত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সোশাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং পিস্তল হাতে তাঁর ক্ষুরধার লুক-এর ছবি। হইচই-এর ওয়েব সিরিজ 'রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ'-এর দ্বিতীয় সিজনে একটি প্রধান চরিত্রে রয়েছেন শাঁওলী চট্টোপাধ্যায়। টেলিভিশনে অথবা ওয়েবে শাঁওলীকে যেভাবে দেখেছেন এতদিন দর্শক, তার থেকে একেবারেই ভিন্ন মেজাজের একটি চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে ওই সিরিজে। রয়েছে একটি জমজমাট অ্যাকশন সিকোয়েন্সও।
আর এই সিকোয়েন্সটিতে শাঁওলী ফাইট করেছেন বাংলা ছবির তিন-চারজন ফাইট স্পেশালিস্টের সঙ্গে। এই সিনটি কাট ছাড়া একবারে শুট করার প্রয়োজন ছিল যা বেশ কঠিন কাজ। কোনও রকম মার্শাল আর্ট বা ফাইট ট্রেনিং ছাড়াই এই কঠিন কাজটি সেরেছেন অভিনেত্রী।
আরও পড়ুন: ঝড় তুলবে মিথিলা-মোস্তফার ‘একাত্তর’, রইল ট্রেলার
''প্রথম যখন এই কাজের কথাটা হল তখন সবার আগে বলেছিলাম যে প্রপার রিহার্সাল করে শুটিং হবে তো কারণ আমি কিন্তু অ্যাকশন করিনি কখনও এর আগে'', বলেন শাঁওলী, ''কিন্তু সেভাবে রিহার্সাল করার স্কোপ পাইনি। আবার লাস্ট মোমেন্টে জানতে পেরেছি, যাদের সঙ্গে ফাইট করব তারা সবাই প্রফেশনাল ফাইটার। যাই হোক চার-পাঁচবার রিহার্সাল করলাম। তিন বার টেক নেওয়া হয়। লাস্ট টেকটাই রাখা হয়েছে।''
যে কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রীর শারীরিক ফিটনেস থাকাটা খুব প্রয়োজনীয়। মার্শাল আর্ট না শিখলেও সেই কৈশোর থেকে থিয়েটার চর্চার মধ্যে রয়েছেন শাঁওলী। আর সঠিক থিয়েটার চর্চায় ভারী সেট বয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে প্রপস গুছিয়ে রাখা-- কুশীলবদের সব ধরনের কাজই করতে হয়। বাংলা বিনোদন জগতে যে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সেরা হয়ে উঠেছেন, তাঁদের বেশিরভাগই কিন্তু প্রস্তুত হয়েছেন থিয়েটারে।
আরও পড়ুন: ফিরবে ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’-এর রোমাঞ্চ, রিমেকের কাজ শুরু
যদিও পর্দার অভিনয় আর মঞ্চের অভিনয়ে অনেকটা পার্থক্য কিন্তু অভিনেতার সার্বিক প্রস্তুতিতে থিয়েটার চর্চার একটা বড় অবদান থাকে। ''আমার থিয়েটার করার শুরু আমার মায়ের জন্যই। আমাকে দেখে মায়ের মনে হয়েছিল যে আমার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের এক্সপ্রেশন রয়েছে। হয়তো আমি অভিনয়টা করতে পারব। আমি থিয়েটার করি ক্লাস ফোর থেকে'', বলেন শাঁওলী, ''মা নিয়ে যায় ওই দলে আর আমার কলেজের ফার্স্ট ইয়ার অবধি ওই দলেই ছিলাম। তার পরেও দল কামাই হয়নি, পড়াশোনার চাপ সত্ত্বেও। আমি পুরোপুরি থিয়েটারের ফুলটাইমার ছিলাম। উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার সময় বাড়িতে কথা বলি যে ড্রামা নিয়েই পড়তে চাই।''
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে স্নাতক ও পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে পাশ করেছেন ড্রামা বিভাগ থেকে। বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল 'প্রাচ্য'-তে কাজ করেছেন ৭ বছর, বর্তমানে 'হাতিবাগান সঙ্ঘারাম'-এর সঙ্গেই থিয়েটার করেন শাঁওলী। সাম্প্রতিক প্রযোজনা 'পন্তুলাহা ২.০' অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। পর্দায় প্রথম কাজ অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের 'দ্বিতীয় পক্ষ' ছবিতে। তখন ক্লাস সেভেনের ছাত্রী। টেলিভিশনে একটা সময় নিয়মিত কাজ করেছেন। বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য 'সুবর্ণলতা', 'দেবদাস' ও 'ভূমিকন্যা' ধারাবাহিকের কথা।
''আমি আসলে বরাবর চেয়েছি এমন কিছু চরিত্রে অভিনয় করতে, যেগুলো করে আমার নিজের ভালো লাগবে, দিনের শেষে আমার নিজের একটা স্যাটিসফ্যাকশন হবে কাজটা করে। বিগত কয়েক বছরে আমি এতগুলো লিড চরিত্রের অফার পেয়েছি টেলিভিশন থেকে, যদি তার কোনও একটিও নিতাম, হয়তো আমাকে আরও বেশি মানুষ চিনতেন। ওয়েব তো খুব বেশি মানুষ দেখেন না আমাদের এখানে। আর ছবি খুব বেশি এখনও করিনি। পাড়ার লোকই প্রশ্ন করে এখন আর অভিনয় করো না, টিভিতে তো দেখতে পাই না। সেটার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। কিন্তু আমার কাছে চরিত্রটা ভাললাগার হতে হবে'', শাঁওলী বলেন।
কিন্তু নবীন প্রজন্মের দর্শকের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়ছে তাঁর। 'রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ টু'-এর পরে আরও একটি ওয়েব সিরিজ-এ আসছেন শাঁওলী যদিও এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি। শাঁওলী অভিনীত জিফাইভ অরিজিনাল ছবি, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী পরিচালিত 'দ্য লাভলি মিসেস মুখার্জি' ও 'সাত নম্বর সনাতন সান্যাল' জাতীয় স্তরেও প্রশংসিত হয়েছে। বাংলা বিনোদন জগতের পরিচালক-চিত্রনাট্যকারেরাও এই ক্ষুরধার অভিনেত্রীকে নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। হয়তো শুধু তাঁর জন্যই লেখা হবে কোনও চরিত্র। বাংলা ছবির জগৎ এই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীর দিকে কঠিন থেকে কঠিনতর চরিত্রের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে, এমনটাই কাম্য।