ক্ষত-বিক্ষত মন। তালিবানরা কবজা করে নিয়েছে গোটা দেশে। তালিবানবাহিনির নারকীয় রাজত্বে ভীত-সন্ত্রস্ত সমগ্র আফগানিস্তান। কচি-বুড়ো, মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে চলছে শোষণ। দক্ষিণ এশিয়ার সে দেশে বেঁচে থাকা এখন দায়। বারুদ, গোলাগুলি, বোমাবাজিতে প্রতিটাক্ষণে মৃত্যু যেন কড়া নাড়ছে। দেখছে গোটা বিশ্ব। ওদেশের শিল্পীরা প্রাণের আশঙ্কায় ভুগছেন। কারণ, শরিয়তি আইন দেখিয়ে সেদেশে এখন যে কোনওরকম সংস্কৃতিমূলক কাজ নিষিদ্ধ। আর তাই আফগানিস্তানের (Afghanistan) শিল্পীরা এখন প্রাণে বাঁচতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। আবারও বিশ্বের কোনও এক কোণায় নতুন করে ঘর পাতবেন তাঁরা। তাঁদের পরিচয়েও তকমা লাগবে 'শরণার্থী'র। মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়ার যে কষ্ট, ক্ষত-বিক্ষত মন নিয়ে সেটাই গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরলেন আফগান মহিলা পরিচালক রোয়া হায়দারি (Roya Heydari)।
কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে কাঁটাতারের এপারে দুই হাঁটু মুড়ে বসে রয়েছেন রোয়া। চোখেমুখে অসহায়তার ছাপ স্পষ্ট। চোখে বাঁচার আশা। হয়তো বা চোখ খুলে রেখেই রোয়া স্বপ্ন দেখছেন আবার নতুন করে জীবন শুরু করার। কিন্তু মাতৃভূমির সঙ্গে এই অবিচ্ছেদ্য টান ভুলবেন কী করে? শিঁকড় ছেড়ার দুঃখ কি কখনো ভোলা যায়?
টুইটারে আফগান মহিলা পরিচালক রোয়া লিখলেন, "দেশের জন্য প্রতিবাদী কণ্ঠ তুলব বলেই আবার দেশ ছেড়ে চললাম।" বুকে করে শুধু ক্যামেরাগুলোকে আঁকড়ে রেখেছেন রোয়া। যাতে অন্য দেশে গিয়েও নিজের দেশ আফগানিস্তানের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারেন সিনেম্যাটিক ভাষায়। ছবিতে দেখা গেল রোয়ার সামনে যৎসামান্য ব্যাগ-পত্তর। অর্থাৎ প্রাণপণে দেশ ছেড়ে পালানোর আগে ক্যামেরা ছাড়া আর অন্য কিছুই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়নি।
<আরও পড়ুন: মাদার টেরেসার ছবি থেকে বাদ জ্যোতি বসু! ‘মেরুদণ্ড বিকিয়েছেন?’ প্রসেনজিৎকে আক্রমণ নেটদুনিয়ায়>
রোয়া হায়দারি টুইটে লিখেছেন, "আমার সারা জীবন, আমার দেশ, আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। শুধুমাত্র নিজের দেশের হয়ে কথা বলতে পারব বলে। আবারও শুন্য থেকে শুরু করতে হবে আমাকে। সুদূর সাগরপাড়ে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি শুধু আমার ক্যামেরাগুলো, আর ক্ষত-বিক্ষত মন। ভারাক্রান্ত আমার হৃদয়। বিদায় হে মাতৃভূমি, যতদিন না আবার আমাদের দেখা হচ্ছে।" আফগান মহিলা পরিচালকের এই কান্নাভেজা কণ্ঠ গোটা বিশ্বের মানুষের মর্মে পশে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই আফগানিস্তানের শিল্পীদের প্রাণের আশঙ্কার কথা শোনা গিয়েছে বলিউড পরিচালক কবীর খানের মুখেও। আফগান মহিলা পরিচালক সাহারা করিমি, কান চলচ্চিত্রে প্রশংসা কুড়নো মহিলা পরিচালক সায়রাবানু সাদাতরা আগেই আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি রেখেছেন গোটা বিশ্বের কাছে। এবার প্রাণে বাঁচতে নিজের মাতৃভমি ছেড়ে পালানোর কষ্ট ফুটে উঠল আরেক মহিলা পরিচালক রোয়া হায়দারির কথায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন