Advertisment

'আমরাও শিল্পী কিন্তু প্রচারে নেই, তবু দুর্দিনে মানুষের পাশে আছি'

কলকাতার ডাবিং শিল্পীদের পারিশ্রমিক জুনিয়র টেকনিশিয়ানদের থেকেও কম। তবু এই সংকটের সময় তাঁরা ঐক্যবদ্ধ, ত্রাণ পাঠিয়েছেন রাজ্য সরকারের তহবিলেও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Amid economic insecurity Kolkata voice over artists extend their help to people

ছবি: 'অবতার'-এর ফেসবুক পেজ থেকে

বাংলা টেলিপর্দায় এমন বহু ছবি বা ধারাবাহিক দেখেছেন দর্শক যা অন্য ভাষার। প্রথম সারির চ্যানেলগুলিতে দক্ষিণী ছবির বাংলা ডাবিং করা ভার্সন অথবা জাতীয় টেলিভিশনের কিছু জনপ্রিয় ধারাবাহিকের বাংলা ডাবিং করা এপিসোড দেখতে অনেকেই পছন্দ করেন। যাঁরা ডাবিং করেন, তাঁরা কিন্তু অন্তরালেই থাকেন এবং তাঁদের পারিশ্রমিক নগণ্য। এই দুর্দিনে অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁদের। তবুও তাঁরা এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন, করোনা সংক্রমণ এবং দীর্ঘ লকডাউনে মানুষের অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলায় তাঁদের কিছু বিশেষ পদক্ষেপের কথা।

Advertisment

ভয়েস ওভার আর্টিস্ট বা ডাবিং আর্টিস্টরা বছরখানেক আগেই তৈরি করেছেন একটি সংগঠন যা ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাক্টের আওতায় রেজিস্টার্ড। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলার মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়েছেন এই সংগঠনের সদস্যরা এবং সম্প্রতি এই সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু অনুদান পাঠানো হয়েছে রাজ্য সরকারের ত্রাণ তহবিলে। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁরা নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা ভাল নেই।

আরও পড়ুন: লকডাউনে হল বন্ধ! অডিও থিয়েটার নিয়ে এল ‘ফোর্থ বেল’

''কোনও সংগঠন আমাদের পাশে নেই। আমরা প্রচারে আসিই না কখনও। ডাবিং আর্টিস্টদের কাজ কী সেটাই জানেন না কেউ। সেই কারণেই এই অ্যাসোসিয়েনশটা তৈরি করা। যাতে মানুষ ডাবিং আর্টিস্টদের কথাও একটু জানতে পারেন, যাতে এই শিল্পীরাও একটু সম্মান পায়'', বলেন সংগঠনের সভাপতি শংকরী প্রসাদ মিত্র, ''আমরা এই মুহূর্তে দুটো পদক্ষেপ নিয়েছি-- প্রথমত, মানুষের সঙ্গে থাকা। আমাদের সংগঠনে যাঁরা যুক্ত বা যুক্ত নন, যদি বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াতে হয়, আমরা আছি। আমরা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট এমার্জেন্সি রিলিফ ফান্ডে সামান্য হলেও কিছু টাকা দিতে পেরেছি। অনেকে হয়তো জানেন না, শুধু ডাবিং করেন যাঁরা, তাঁদের পারিশ্রমিক ১০০ দিনের কাজ যাঁরা করেন, তাঁদের থেকেও কম। তার পরেও মানুষের পাশে থাকতে হবে, এই মানসিকতাটা রয়েছে এই শিল্পীদের।''

Amid economic insecurity Kolkata voice over artists extend their help to people ছবি সৌজন্য: জয়িত্রী চৌধুরী

বাচিক শিল্পীদের মধ্যে অনেক ভাগ রয়েছে। কেউ কেউ এফএম চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত, কেউ বিজ্ঞাপনের ভয়েস ওভার করেন, আবার অনেকে রয়েছেন যাঁরা ট্রান্সক্রিপশনের কাজ করেন-- এঁদের সবাইকেই এক ছাতার তলায় এনেছে 'অ্যাসোসিয়েশন অফ ভয়েস ওভার আর্টিস্টস ট্রান্সক্রিপটারস অ্যান্ড সাউন্ড রি-রেকর্ডিস্টস অফ কলকাতা', সংক্ষেপে 'AVATAR'। যদিও বাংলা বিনোদন জগতের বেশিরভাগটাই অসংগঠিত তবুও এই সংগঠন ভয়েস ওভার শিল্পীদের ট্রেড ইউনিয়নের আওতায় আনতে পেরেছে, যা অত্যন্ত সাধুবাদযোগ্য একটি প্রয়াস।

এই শিল্পীরা এতটাই কম পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য হন যে দীর্ঘ লকডাউনে তাঁদের মধ্যে সাঙ্ঘাতিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ''আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি। পরিকাঠামো যেভাবে ধসে পড়তে শুরু করেছে, যাঁরা শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের কী হবে আমরা জানি না। যাঁরা এফএম-এ আছেন, তাঁরা একটু স্বস্তিতে। কিন্তু বাকিরা? আমরা এখন ভাবতে শুরু করেছি, কলকাতায় যে ১২টা রানিং ভয়েস স্টুডিও রয়েছে, তার মধ্যে চারটে আর থাকবে তো? অথবা যে শিল্পীরা এপিসোড-পিছু ২০০ টাকা পারিশ্রমিকে কাজ করেন, তাঁদের আরও কম পারিশ্রমিকে কাজ করতে বলা হবে না তো? মানুষ জানেন না, আয়ের দিক থেকে ভয়েস শিল্পীদের অবস্থা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জুনিয়র টেকনিশিয়ানদের চেয়েও খারাপ'', বলেন শংকরী প্রসাদ মিত্র।

আরও পড়ুন: ‘বাংলার মধ্যবিত্ত দিনআনি মানুষের কথাও একটু ভাবুন’, আর্জি মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে

সে সব কথা মাথায় রেখেই এই সংগঠনের দ্বিতীয় পদক্ষেপ, ভয়েস শিল্পীদের জন্য একটি রিলিফ ফান্ড তৈরি করা। বিনোদন জগতে সব কাজেরই পেমেন্ট পরে হয়, কাজটি আগে করে দিতে হয়। অভিনেতা থেকে চিত্রনাট্যকার, বেশিরভাগই পারিশ্রমিকের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে কাজ শুরু করেন। কখনও কোনও টাকা হাতে না পেয়েই শুরু হয়ে যায় কাজ। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজটি সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও বাকি পারিশ্রমিক বাকি-ই থেকে যায় বহুদিন। বকেয়া পেমেন্টের সমস্যা ভয়েস আর্টিস্টসদের ক্ষেত্রেও রয়েছে। লকডাউনের আগে যাঁদের পুরনো পেমেন্ট বাকি ছিল, তাঁরা জানেন না ঠিক কবে সেই টাকা পাওয়া যাবে। তাই অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে খুবই সংকটে রয়েছেন।

''আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আর্টিস্টস ফোরামের সদস্য, সবাই নয়। ফোরাম থেকে আমাদের জানানো হয়েছে যে জীবনধারণ যদি অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, তখন অবশ্যই ফোরামকে জানাতে, ফোরাম পাশে থাকবে'', সংগঠনের সভাপতি বলেন, ''কিন্তু বেশিরভাগই তো ফোরামের সদস্য নন, তেমন সব ভয়েস শিল্পীদের কথা ভেবেই আমরা এই ফান্ড তৈরি করছি।'' এখনও অনেক ভয়েস শিল্পীই এই সংগঠনের সদস্য নন, কিন্তু দুর্দিনে তাঁদের পাশে থাকতে সব সময় প্রস্তুত, এমনটাই জানিয়েছেন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। শিল্পীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কঠিন সময়টা পার করবেন, এমনটাই আশা।

coronavirus Bengali Film
Advertisment