Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

'প্রিয় মানিকমামা...' প্রকাশ্যে 'চারুলতা'-র রেকর্ডিং নিয়ে কিশোরকুমারের চিঠি

Kishore Kumar's letter to Ray: লকডাউনে বসে কিশোরকুমারের লেখা এই চিঠিটি খুঁজে পেয়েছেন সন্দীপ রায়। আর সেই চিঠি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন অমিত কুমার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Amit Kumar shares Kishore Kumar's letter to Satyajit Ray on Charulata's song recording

কিশোরকুমার ও সত্যজিৎ রায় ( দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আর্কাইভ থেকে)

এবছর সূচনা হল সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকীর। বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি তরফ থেকে জন্মশতবর্ষ উদযাপন ঘিরে। পাশাপাশি বহু পুরনো স্মৃতি, অজানা কথাও উঠে আসছে। লকডাউনে বসেই বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে সন্দীপ রায় খুঁজে পেলেন কিশোরকুমারের একটি চিঠি যা সত্যজিৎ রায়কে তিনি লিখেছিলেন 'চারুলতা' ছবির গান রেকর্ডিং নিয়ে। সেই চিঠির স্ক্যান করা ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন অমিতকুমার।

Advertisment

বলিউডের বিখ্যাত গাঙ্গুলি পরিবার ও কলকাতার ঐতিহ্যবাহী রায় পরিবার যে আত্মীয়তাসূত্রে আবদ্ধ ছিল তা অনেকেই হয়তো জানেন। কিংবদন্তি পরিচালককে আর এক কিংবদন্তি কিশোরকুমার মানিকমামা বলেই ডাকতেন। 'চারুলতা' ছবিতে কিশোরকুমারকে দিয়ে প্লেব্যাক করানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেই চিঠির উত্তরে কী লিখেছিলেন কিশোরকুমার, তা দুই কিংবদন্তির অসংখ্য অনুরাগীদের জানালেন অমিতকুমার একটি ভিডিও বার্তায়। সঙ্গে তাঁর ফেসবুক পেজে আপলোড করলেন চিঠির স্ক্যানড ইমেজ যা তাঁকে ইমেলে পাঠিয়েছেন সন্দীপ রায়।

আরও পড়ুন: ‘হ্যাপি বার্থডে মানিকদা’! শিল্পীর কল্পনায় অজানালোকে মধ্যরাতের সেলফি

লকডাউনে বসে সত্যজিৎ রায়ের পুরনো কাগজপত্র ঘেঁটে এই চিঠি খুঁজে পেয়েছেন সন্দীপ রায়। চিঠিটি লেখা হয়েছে ১৯৬৩ সালের ৪ নভেম্বর। সত্যজিৎ রায় ওই বছরই ছবির কাজ শুরু করেন এবং 'চারুলতা' মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে। তার পরের বছরই বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার বেয়ার পুরস্কার ও জাতীয় পুরস্কারে স্বর্ণকমল প্রাপ্তি। এই ছবিতে কিশোরকুমারের কণ্ঠে গাওয়া 'চিনি গো চিনি তোমারে' এখনও বাংলায় সবচেয়ে বহুলশ্রুত গানগুলির একটি।

Kishore Kumar's letter to Satyajit Ray কিশোরকুমারের চিঠির স্ক্যান করা ইমেজ (অমিতকুমারের ফেসবুক পেজ থেকে)

সত্যজিৎ রায়কে গানটি রেকর্ড করতে যেতে হয়েছিল মুম্বই। কী কারণে সেটিই লেখা রয়েছে কিশোরকুমারের চিঠিতে। শুরুতেই তিনি মানিকমামা বলে সম্বোধন করেছেন কারণ সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় ছিলেন তাঁর মামাশ্বশুর। বিজয়া রায় ছিলেন কিশোরকুমারের প্রথম স্ত্রী এবং অমিতকুমারের মা রুমা গুহঠাকুরতার মাসি। ওই চিঠিতে কিশোরকুমার লিখেছিলেন যে তিনি এই মুহূর্তে গান রেকর্ডিংয়ের জন্য কলকাতায় যেতে পারছেন না তাই যদি সত্যজিৎ রায় সস্ত্রীক বম্বেতে আসেন তাহলে তাঁর পক্ষে একটু সুবিধে হয়। চিঠিটি ইংরেজিতে লেখা। তার একটি অংশ তর্জমা করলে দাঁড়ায়--

''... আমার এখন প্রত্যেকদিনই প্রায় শুটিং রয়েছে এই মাসে। তাছাড়া হরিদ্বার থেকে ফেরার পরে মা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই এখন তাঁকে একা রেখে কলকাতায় যাওয়া ঠিক হবে না।

এই পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে খুব সুবিধে হয় যদি আপনি একটু কষ্ট করে বম্বে আসেন মঙকুমাসিকে নিয়ে ও আমার বাড়িতেই থাকেন। ২৬ তারিখ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে যে কোনও দিন সুবিধেমতো রেকর্ড করে নেওয়া যাবে। আমার বিশ্বাস, আপনার কোনও অসুবিধে হবে না। আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমি রেকর্ডিংয়ের সব ব্যবস্থা করব যথাসম্ভব কম খরচে (খরচ বলতে শুধু মিউজিশিয়ানদের পারিশ্রমিক আর রেকর্ডিংয়ের খরচ)। যদি কোনও কারণে আমার প্রস্তাব আপনি গ্রহণ করতে না পারেন, আমার খুবই খারাপ লাগবে কিন্তু আমি সব রকম পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত...''

আরও পড়ুন: ‘শঙ্কু করতে গিয়ে মনে হয়েছে, উনি সত্যজিৎ রায়ের মতোই ছিলেন’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই গানটি রেকর্ডিংয়ের জন্য কিশোরকুমার কোনও পারিশ্রমিক নেননি সত্যজিৎ রায়ের থেকে। এই চিঠি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন অমিতকুমার ২ মে, সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে। পাশাপাশি একটি ভিডিও বার্তায় আলোচনা করেছেন দুই কিংবদন্তির যোগাযোগের কথা। কলকাতা থেকে ফোনে এই চিঠি নিয়ে কী কথা হয়েছিল সন্দীপ রায়ের সঙ্গে সে সবও জানিয়েছেন তিনি ভিডিও বার্তায়। দেখে নিতে পারেন নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে--

কিশোরকুমারের কণ্ঠে এই গানটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আর একটি কারণেও। পঞ্চাশ-ষাট দশক পর্যন্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চা কিছুটা হলেও সীমাবদ্ধ ছিল মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে। খানিকটা স্টেটাস সিম্বল হিসেবে দেখা হতো রবীন্দ্র-চর্চা, আবার এই গান সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অন্তরায় ছিল এই ভাবনা যে রবি ঠাকুরের গান গাওয়া খুবই কঠিন। কিশোরকুমারের কণ্ঠে 'চারুলতা'-র এই গানটি এক ধরনের মাইন্ডসেটকে ভাঙে কারণ সেই সময়ে তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে ঈশ্বরের মতো। বই পড়া, সিনেমা দেখার সঙ্গে যাঁদের কোনও যোগাযোগ ছিল না, তাঁদেরও মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে গানটি। তাই শুধুমাত্র সত্যজিতের ছবির জন্য নয়, রবি ঠাকুরের গানকে খুব সহজ করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যেও অসীম অবদান রয়েছে কিশোরকুমারের।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

satyajit ray sandip roy
Advertisment