অপরাজিতা আঢ্য
আমি তো এখন পুরুলিয়াতে শ্যুটিংয়ে রয়েছি। এবারে তো পৌষ সংক্রান্তি ১৫ তারিখ। আর আমি বাড়ি ফিরব ২০ তারিখ। তাই আমার তো ওই দিন বাড়িতে থেকে কিছু বানানো হবে না। আমাদের বাড়িতে মা লক্ষ্মী আছেন। তাই আঁসকে পিঠে দিয়ে প্রথমদিন পুজো হয়। যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানেই আমাদের বাড়িতে পুলি পিঠে হয়। আর এবার পৌষ পার্বণে আমি বাড়িতে নেই বলে শাশুড়িই কম-সম করে কিছু বানাবেন। আমি থাকলে তো ডালের পিঠে, কড়াইশুটির পিঠে, সরু চাকলি, দুধ পুলি, চুসি পিঠে, সেদ্ধ পিঠে আরও কত কিছু হয়। তবে আমার বাপের বাড়িতে শুধু দুধ পুলি আর সিদ্ধ পিঠেই হত।
পৌষ পার্বণের একটা মজার ঘটনা আমার আজও খুব মনে পড়ে। একবার বাড়িতে মা ছিলেন না। কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলেন। আমি আর বাবা দুজনে মিলে পিঠে বানিয়েছিলাম। আমি তখন অনেকটাই ছোট। আমরা হাঁড়ির মুখে নতুন গামছা বেঁধে পিঠে বানিয়েছিলাম। গামছার রং উঠে পিঠেগুলো সব লাল হয়ে গিয়েছিল। তবে খেতে কিন্তু বেশ ভাল হয়েছিল। সেই সময় চাল বাড়িতে বাটা হয়নি। মদন কাকুর দোকান থেকে ভাঙিয়ে এনেছিল। গম ভাঙার দোকান ছিল। ওই দিনগুলোর কথা আজও বড্ড মনে পড়ে।
পৌষ পার্বণের আগে আমার বউদি বাড়িতে এসেছিল। আমি তো ছিলাম না। বউদি বাড়ি এসে শীতের ফল, সবজি, গাজরের হালুয়া, গুড়, পিঠে সহ শীতের যাবতীয় যা তত্ত্ব হয় সব দিয়ে গিয়েছে। বিয়ের পাঁচ বছর পর্যন্ত সাধারণত মেয়ের মা শ্বশুরবাড়িতে পাঠায়। কিন্তু, আমার মা যতদিন সুস্থ ছিলেন ততদিন পাঠিয়েছেন। আর এখন তো মায়ের সেই জায়গাটা নিয়েছে আমার বউদি। আমার মা-ও হয়তো এতটা করতে পারতেন না, বউদি যা করে। এত নিয়মনিষ্ঠা করে পালন করেন। এক পা-ও নড়ে না।
আমি না অবাক হয়ে যাই। আমার মা তো দু'বছর অসুস্থ ছিলেন। তখম মায়ের সেবা করেছে। সেই সময় যখনই বাড়ি যেতাম মা যা যা করতেন সেগুলো বউদি করত। ওঁর মানসিকতাটা খুব ভাল। ১৯৯৬-তে যখন আমার বিয়ে হয়ে যায় তখন ওই বাড়ির সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। মা যেভাবে সংসার সামলাতেন বউদিও ঠিক সেভাবেই করে। ঘরের কাজের সঙ্গে বাইরে দৌঁড়েও কাজ করতে পারে। আমার বর ফোন করে বলল যে রানী দি বাড়ি এসে সব দিয়ে গিয়েছে। আমি পুরুলিয়ায় একজন কে বলেছি পিঠে আনতে। বাড়ির সবার জন্য নিয়ে যাব।