'ভবিষ্যতের ভূত' নিয়ে বিতর্কের সমাধান সূত্র এখনও অধরা। প্রতিবাদ, জমায়েত আগেও হয়েছে, কিন্তু জট কাটেনি এখনও। এবার তারই প্রতিবাদে রাস্তায় মিছিল করলেন বিশিষ্ট জনেরা। মধুসূদন মঞ্চ থেকে তালতলা মাঠ পর্যন্ত পদযাত্রা করলেন অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণ রায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়রা। অনীক দত্তর পরিচালিত 'ভবিষ্যেতর ভূত' ছবিটি একটি রাজনৈতিক স্যাটায়ার, যেখানে 'নিকৃষ্ট মানের' ভূতেদের একটি দল এক উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয়। ১৬ ফেব্রুয়ারী ছবিটি মুক্তি পাওয়ার একদিনের মধ্যেই সমস্ত সিনেমা হল থেকে তুলে নেওয়া হয়।
রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক আবহাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করার মাসুল দিতে হয়েছে কি অনীক দত্তকে? প্রাথমিকভাবে 'ভবিষ্যতের ভূত' সমস্ত সিনেমা হল থেকে তুলে নেওয়ার পর এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে। অগ্রিম টিকিট কেটে রাখা দর্শক ছবি দেখতে এলে বলা হয়, ছবিটা চলছে না। এমনকী তাঁদের টাকা ফেরৎ নিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
আচমকা কেন বন্ধ হলো ছবির স্ক্রিনিং? সে বিষয়ে অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি সিনেমা হল মালিকদের কাছ থেকে। এদিকে ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিল্পীদের একাংশ। এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে ওঠে টলিপাড়া। পরে জানা যায়, ছবিটি মুক্তি পাওয়ার চারদিন আগে, অর্থাৎ ১১ ফেব্রুয়ারি, রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছিলেন, "ছবিটির বিষয়বস্তু জনসাধারণের ভাবাবেগকে আঘাত করতে পারে, যাতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। সে কারণেই মুক্তির আগে ছবিটি উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা দেখতে চান।" প্রযোজক তার উত্তরে লেখেন, "যেহেতু সেন্সর বোর্ড ছবিটিকে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে, আর আলাদা করে স্ত্রিনিং করা সম্ভব নয়।"
রবিবার মিছিলের পুরোভাগে দেবজ্যোতি মিশ্র গান গেয়ে প্রতিবাদে সামিল ছিলেন। দেখা মিলল বাদশা মৈত্রেরও। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বললেন, "পথে নামার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পুরো শিল্পীমহল উপস্থিত হন নি দেখে আশাহত হয়েছি। তাঁরা হয়তো কোনও কারণে ভয় পাচ্ছেন।" অপর্ণা সেনের কথায়, "নিজেদের স্বার্থেই এখানে আসা প্রয়োজন। একজনের সঙ্গে যা হয়েছে সেটা আমাদের সঙ্গেও হতে পারে। একটা ছবি যখন সেন্সরের ছাড়পত্র পেয়ে গেছে, সেই ছবি আটকানোর অধিকার কারও নেই। এটা বাকস্বাধীনতার উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। যাঁরা এটা করছেন তাঁদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।"
আরও পড়ুন, ‘বারণ’ সত্ত্বেও রণজয়ের গানের প্রেমে পড়েছেন সকলে
তবে সিনেমা জগতের যাঁরা এদিনও নীরব ছিলেন, তাঁরা কেন মুখ খুলছেন না, সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রচারে শঙ্খ ঘোষের হাজির থাকার কথা বারবার বলা হলেও এদিন যেকোনও কারণেই হোক দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু এদিনের মিছিলে বাম রাজনীতির সমর্থকদের দেখা গিয়েছে। ফলে গোটা বিষয়টিতে রাজনৈতিক রঙ লেগে যাওয়ার আশঙ্কা কখনওই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, বরং প্রকট হচ্ছে।