আশুতোষ গোয়ারিকরের সৃজনশীল ছাড়পত্র রয়েছে। তিনি এমন ভাবেই উপস্থাপনা করলেন যা পুরোপুরি সত্যও নয় আবার মনের মাধুরী মেশানো কল্পকাহিনিও নয় কিন্তু তা বলে এতক্ষণ?
আশুতোষ গোয়ারিকরের সৃজনশীল ছাড়পত্র রয়েছে। তিনি এমন ভাবেই উপস্থাপনা করলেন যা পুরোপুরি সত্যও নয় আবার মনের মাধুরী মেশানো কল্পকাহিনিও নয় কিন্তু তা বলে এতক্ষণ?
প্রত্যেক স্কুল পড়ুয়া, যার কিঞ্চিৎ দখল আছে ইতিহাসে, পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধের নাড়িনক্ষত্র জানে। ১৭৬১ সালে এই যুদ্ধ হয়েছিল মারাঠা ও আফগানদের মধ্যে এবং সেখানে দুপক্ষেরই হাজার হাজার সৈন্যের মৃত্যু হয়। এই যুদ্ধের ফলাফল-- মারাঠা সাম্রাজ্য বিস্তারের সমাপ্তি এবং এদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশ গড়ে ওঠার পথ প্রশস্ত হওয়া।
Advertisment
গোয়ারিকর-এর এই ছবির একটা স্পষ্ট বক্তব্য আছে-- 'হিন্দুস্থান'-কে রক্ষা করতে, আফগান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মারাঠাদের বীরত্ব ও রণকৌশলের জয়গান। অষ্টদশ শতকের ওই সময় যে 'হিন্দুস্থান একটি রাষ্ট্র' এই জাতীয় কোনও ভাবনাই ছিল না জনমানসে, সেই নিয়ে এই ছবির কোনও মাথাব্যথা নেই। এই ছবি চায় যে আমরা 'হর হর মহাদেব' ধ্বনি তোলা শোভাযাত্রার পিছন পিছন হেঁটে যাই জাতীয়তাবাদী আবেগে গদগদ হয়ে।
একজন ফিল্মমেকারের সৃজনশীল ছাড়পত্র । আশুতোষ গোয়ারিকর সেই ছাড়পত্র নিয়ে এমন ভাবেই উপস্থাপনা করলেন যা পুরোপুরি সত্যও নয় আবার মনের মাধুরী মেশানো কল্পকাহিনিও নয় কিন্তু তা বলে তিন ঘণ্টা দীর্ঘ একটা ছবি? এতক্ষণ কি সত্যিই দরকার ছিল? পিরিয়ড ছবিতে গোয়ারিকর ভালোই হাত মকসো করেছেন অতীতে। 'লাগান' ৪ ঘণ্টার ছবি ছিল কিন্তু ওই সেখানে সময়টা এত মসৃণভাবে বয়ে যায় কারণ ছবির নির্মাণ দৃশ্যনন্দন। 'যোধা আকবর'-এর মতোই পাণিপথ একটি কস্টিউম ড্রামা এবং দেখতে দেখতে মনে হবে যে 'মহেঞ্জো দারো'-র পরে পরিচালক নিজেকে আবার সামলে নিয়েছেন। কিন্তু সেই স্ফুলিঙ্গটা কোথায়?
ছবি দেখতে বসে বুঝবেন যে অনেক গবেষণা করা হয়েছে-- আওয়াধ ও দোয়াব অঞ্চলের প্রতিনিধি বা রোহিলারা, তাদের অন্তর্ঘাত, দিল্লির সিংহাসনের উপর তাদের খল ও শ্য়েনদৃষ্টি যেন মারাঠাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়েও বেশি ঝামেলার! পর্দা জুড়ে নানা রংয়ের ও ঢংয়ের কস্টিউম প্যারেড চলে-- মারাঠী বীর সদাশিব রাও ভাউ, আফগান যোদ্ধা আহমদ শাহ আবদালি, সদাশিবের প্রেয়সী পার্বতী বাইয়ের চরিত্রে কৃতি শ্যানন, পেশোয়ার চরিত্রে মণীশ বেহল এবং আরও কতশত।
কিন্তু অভিনয় হোক বা ছড়ানো-ছিটোনো টেনে লম্বা করা প্লট-- কোনওটাই খুব একটা জমল না। যুদ্ধের দৃশ্য অথবা যুদ্ধ-ছাড়া দৃশ্য, কোনওটাতেই অর্জুন কাপুর ঠিক পর্দার চলাফেরাটা ছাপিয়ে অতিরিক্ত কিছু হতে পারলেন না (যদিও অনেক পরিশ্রম করেছেন)। ওদিকে কালো পোশাক পরে, আহমদ শাহ আবদালি-রূপী সঞ্জয় দত্ত বার বার 'পদ্মাবত'-এর রণবীর সিংয়ের কথা মনে করিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি কখনোই খলনায়ক হিসেবে তেমন তাক লাগাতে পারলেন না। কৃতি শ্যানন মিষ্টি মিষ্টি হাসলেন সারা ছবি জুড়ে কিন্তু তাঁকে দেখে একবারও মনে হল না যে তিনি ওই সময়ের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী কোনও নারী। আর পদ্মিনী কোলাপুরী ঠিকমতো ব্যবহৃতই হলেন না। পেশোয়ার ঈর্ষাপরায়ণ স্ত্রী হিসেবে কিছু মুখভঙ্গি ছাড়া ওঁকে নিয়ে আরও একটু ভাবতে পারতেন পরিচালক। তবে কড়কড়ে গলার সুজা-উদ-দৌল্লার ভূমিকায় কুণাল কাপুর একটা বিস্ময়।
পর্দায় ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ ঘটলে তা যদি দর্শককে সহজে গলাধঃকরণ করতে হয়, তবে ছবিতে অত্যন্ত মনোরম দৃশ্যপট প্রয়োজন হয়, বিষাদগ্রস্থ গ্রাফিক্স নয়! দরকারের সময় সঞ্জয় লীলা বনশালী থাকেনটা কোথায় বলুন তো?