Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

শুরু হল না শুটিং, শিল্পীদের বিমা নিয়ে কাটেনি জট

শোনা গিয়েছিল যে ১০ জুন থেকে শুরু হতে চলেছে ধারাবাহিকের শুটিং কিন্তু ৯ জুন বৈঠকের পরেও মিটল না শিল্পীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাজনিত বিমা সংক্রান্ত মতবিরোধ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

প্রতীকী ছবি।

১০ জুন থেকে টলি ও টেলিপাড়ায় শুটিং শুরু হল না। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা এসওপি, যেখানে চারটি পক্ষের সই করার কথা তা এখনও সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষরিত হয়নি! ওদিকে ৯ জুন সন্ধ্যায় ফোরাম, ফেডারেশন, চ্যানেল ও প্রযোজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ১০ জুন থেকে শুটিং শুরু হচ্ছে না। প্রযোজকদের সংগঠন ডব্লিউএটিপি-র সোশাল মিডিয়া পেজে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে আর্টিস্টস ফোরামের আপত্তির কারণেই শুটিং শুরু করা যাচ্ছে না।

Advertisment

শুটিং শুরু না হওয়ার প্রধান কারণ আর্টিস্টস ফোরাম তাদের সদস্যদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিমা নিয়ে যে প্রস্তাবগুলি রেখেছিল বাকি তিনটি পক্ষের কাছে, তার মধ্যে একটিতে সহমত হচ্ছেন না প্রযোজকরা এবং চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। সেই কারণেই শুটিং শুরু করার জন্য যে এসওপি বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওরস-এ চারটি পক্ষের সই প্রয়োজন, সেই এসওপি-তে সই করেননি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এবং প্রযোজকদের সংগঠনের পদাধিকারীরা। আপাতত যে এসওপি নিয়ে টানাপোড়েন চলছে তা শুধুমাত্র টেলিভিশনের জন্য প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন: ‘নিজ দায়িত্বে সিদ্ধান্ত নিন অথবা গাইডলাইনের অপেক্ষা করুন’, সন্ধ্যারাতে বার্তা ফোরামের

তাহলে কি শ্যুটিং শুরুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত? এই প্রসঙ্গে ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক সপ্তর্ষি রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "দেখুন, আর্টিস্টস্ ফোরাম কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে প্রযোজক ও চ্যানেলের অনেক দাবিই মেনে নিয়েছে, এমনকী শিল্পীদের জীবনবিমার ১০ শতাংশ প্রিমিয়াম দেবার দায়িত্বও স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছে৷ কেন? যাতে নির্বিঘ্নে শ্যুটিংটা শুরু হতে পারে৷ তিনমাস কর্মহীন থাকার পরে শিল্পী ও কলাকুশলীরা যাতে একটু টাকার মুখ দেখতে পারে! কিন্তু তার জন্য ফোরাম কখনোই শিল্পীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধির সাথে কোনওভাবে আপোশ করতে পারে না৷ তাই স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিল্পীদের শুটিংয়ে যাওয়ার পরামর্শ ফোরাম কীভাবে দেবে? আমরা শিল্পীদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি৷ তাই শিল্পীদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষার বিষয়ে আমরা উদাসীন থাকতে পারি না৷ শিল্পীদের যে ন্যূনতম স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার দাবি ফোরাম জানিয়েছিল তাকে অগ্রাহ্য করে আজ চ্যানেল ও প্রযোজকদের কাজ বন্ধ করার এই অমানবিক সিদ্ধান্তের জন্য সমস্ত শিল্পী ও কলাকুশলীদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয় পড়ল!! হয়ত এই আচরণ ওদের কাছে স্বাভাবিক! কারণ ওরা দেখছেন ব্যবসা, আর আমরা দেখছি জীবন!"

ওদিকে বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এসওপি সই না হওয়ার পরে প্রযোজকদের সংগঠনদের পক্ষ থেকে সোশাল মিডিয়ায় একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে ৯ জুন রাতে। সেখানে লেখা হয়-- ''চ্যানেল, ফেডারেশন ও প্রযোজকদের যৌথ উদ্যোগ ও সম্পূর্ণ সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আর্টিস্টস ফোরামের ইচ্ছাকৃত আপত্তি থাকার কারণে আমরা কাল থেকে শুট শুরু করতে পারছি না। এমতাবস্থায় আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে যতদিন দেশে করোনা পরিস্থিতি থাকবে, ততদিন আমরা শুট শুরু করব না।''

শিল্পীদের জীবনবিমা সংক্রান্ত বিষয়েই ফোরামের প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত হতে পারেননি প্রযোজকরা ও চ্যানেলের প্রতিনিধিরা। যে জীবনবিমার কথা এখানে বলা হচ্ছে তা শুধুমাত্র সেই শিল্পী ও কলাকুশলীরাই পাবেন যাঁরা টেলিভিশনের কোনও প্রযোজনায় কাজের জন্য ডাক পাবেন। সেই কাজটি যদি একদিনের জন্যেও হয়, তাহলেও তাঁরা এই বিমার আওতায় পড়বেন, এমনটাই রয়েছে ফোরামের প্রস্তাবনায়। বিমার প্রিমিয়ামের ৫০ শতাংশ বহন করবেন প্রযোজক, ৪০ শতাংশ চ্যানেল ও ১০ শতাংশ দেবে ফোরাম৷ ২৫ লক্ষ টাকার এই বিমা নিয়েও কোনও মতান্তর ছিল না চ্যানেল ও প্রযোজকদের মধ্যে।

কিন্তু জট রয়েছে এই বিমা সংক্রান্ত একটি টেকনিকাল সমস্যা নিয়ে যা সবিস্তারে বললেন ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক সপ্তর্ষি রায়, ''শিল্পীর কাজে যোগ দেওয়ার প্রথমদিন থেকে বিমার চালু হওয়ার মধ্যের যে সময়কালটি সেটি কিন্তু বিমার আওতার বাইরে! মাথায় রাখতে হবে ফর্ম সই করার পরে টাকা জমা পড়া ও যাঁর বিমা করানো হবে তাঁর মেডিকাল চেক আপের জন্য বেশ খানিকটা সময় ব্যয় হয়। এই সময়টা ৫ দিনও হতে পারে আবার ১৫দিনও হতে পারে বা তারও বেশি! তার পরে গিয়ে পলিসিটা অ্যাক্টিভ হবে। আমাদের প্রস্তাব ছিল, এই সময়কালের মধ্যে, শুটিংয়ে এসে কোনও শিল্পী যদি কোভিড-১৯ সংক্রামিত হয়ে মারা যান, তবে তাঁর বিমারাশি তো আর বিমা কোম্পানি দেবে না। সেক্ষেত্রে সেই মৃত শিল্পীর পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য করার দায়িত্ব যৌথভাবে নিক চ্যানেল ও প্রযোজকরা৷ এই বিষয়েই ওঁরা একমত হচ্ছেন না। ওঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, এত কম সময়ের মধ্যে সংক্রামিত হয়ে কেউই মারা যাবেন না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে এই ক্লজটি নিয়ে তো আপত্তি থাকার কথাই নয়। আসলে ওনারা ওনাদের ব্যবসা ছাড়া কিছুই বোঝেন না! তবে আমরা এখনও আশাবাদী যে কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন চ্যানেল ও প্রযোজক নিশ্চয়ই শিল্পী ও কলাকুশলীদের ন্যূনতম স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার দাবি মেনেই শ্যুটিং শুরু করবেন৷ আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েই আছি!"

এই বিশেষ জটেই আটকে গিয়েছে শুটিং। ৯ জুন বিকেলে বেশ কিছু ধারাবাহিকের ইউনিটের সদস্যরা কল টাইম পেয়ে যান। 'ত্রিনয়নী', 'চুনি পান্না'-সহ আরও বেশ কিছু ধারাবাহিকের শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল ১০ জুন থেকে। সেই সব ইউনিটকেই পরে জানিয়ে দেওয়া হয় যে ১০ জুন থেকে শুটিং শুরু হচ্ছে না। অন্যান্য ধারাবাহিকের শুটিংও ১২ জুন থেকে শুরু হবে, এমনটাই জানা গিয়েছিল। কারণ স্টার জলসা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে যে ১৫ জুন থেকে দর্শক নতুন এপিসোড আবার নিয়মিত দেখতে পাবেন।

আরও পড়ুন: আড়ালেই রেখেছিলেন! তিন বছর আগেই বিয়ে করেছেন মোনালি

শুটিং বন্ধ হওয়ায় সোশাল মিডিয়ায় অত্যন্ত সরব হয়ে উঠেছেন শিল্পী, টেকনিসিয়ান এবং প্রযোজকরাও। ফোরামের সঙ্গে মতবিরোধ স্পষ্ট ধরা পড়ছে সোশাল মিডিয়া পোস্টে। পরিচালক ও প্রযোজক অর্ক গঙ্গোপাধ্যায় ১০ জুন ভোরে সোশাল মিডিয়াতে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে লেখেন--

এই প্রসঙ্গে শিল্পীরা অবশ্য দ্বিধাবিভক্ত। অনেকেই সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলে সরাসরি জানিয়েছেন শুটিং বন্ধ হওয়া নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা। আবার অনেকে এমনও লিখেছেন যে তাঁরা আশাবাদী, খুব তাড়াতাড়ি এই জট কেটে যাবে। এসভিএফ-এর চারটি ধারাবাহিকের শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল ১০ জুন থেকে। শুটিং আবার স্থগিত হওয়া নিয়ে সংস্থার কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ''আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই অবাক হয়েছি আর একই সঙ্গে বেশ চিন্তিতও বোধ করছি। সব ধরনের সুরক্ষাবিধির যে প্রোটোকলগুলি প্রস্তাবনাতে ছিল, আমরা প্রযোজকরা সে সব ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে, পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েই ছিলাম। সব পক্ষের সঙ্গে যৌথ মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্তগুলি হয়, সেখানে সম্মতও ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই আর্টিস্টস ফোরাম এমন কিছু দাবি পূরণ করতে বলছে, যেগুলি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমি আশা করব যে বিষয়টি বোধবুদ্ধি দিয়ে বিচার করা হবে এবং আমরা সর্বসম্মতিক্রমেই এই সমস্যার একটা সমাধান খুঁজে পাব।''

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tollywood Bengali Cinema Shooting Bengali Television Bengali Film
Advertisment