১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর বসেছিল প্রথম বিশ্ব টেলিভিশন ফোরাম। জনজীবনে টেলিভিশন মাধ্যম কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এই মাধ্যমের গুরুত্ব কতখানি-- এই সব বিষয়ে আলোকপাতের উদ্দেশ্যেই বসেছিল সেই ফোরাম। এই ফোরামের তাৎপর্যের কথা মাথায় রেখেই রাষ্ট্রসঙ্ঘ এই দিনটিকে বিশ্ব টেলিভিশন দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
সাম্প্রতিক সময়ের মোবাইল রেভলিউশন এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দাপটও কিন্তু টেলিভিশন মাধ্যমের জনপ্রিয়তায় তেমন কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। টেলিভিশন প্রথম থেকেই ছিল সর্বপ্রধান মাস মিডিয়া। বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে যেখানে মোবাইল ব্যবহারকারীদের ৫০ শতাংশেরও বেশি ফিচার ফোন ব্যবহার করেন, স্মার্টফোন নয়, সেখানে টেলিভিশনই বিনোদনের মূল মাধ্যম।
আরও পড়ুন: কেবিসি ১১: ‘ঐশ্বর্য’-র প্রশ্নে হাতছাড়া হল ৬ লক্ষ ৪০ হাজার
বিশ্ব টেলিভিশন দিবস উপলক্ষে এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক এদেশের টেলিভিশনের ইতিহাসের কিছু মাইলস্টোন--
১. এদেশের টেলিভিশন মাধ্যমের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। ১৯৫০ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় একটি খবর যেখানে বলা হয়েছিল যে চেন্নাইয়ের (তখন মাদ্রাজ) এক ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র তৈরি করেন এদেশের প্রথম টেলিভিশন সেট যা বানানো হয়েছিল একটি প্রদর্শনীর জন্য।
২. ১৯৫৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, দিল্লিতে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের একটি পরীক্ষামূলক সম্প্রচার হয়।
৩. ১৯৬৫ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিও-র একটি অংশ হিসেবে দিল্লিতে শুরু হয় দৈনন্দিন সম্প্রচার।
৪. ১৯৭২ সালে এই পরিষেবাটি মুম্বই ও অমৃতসরেও শুরু করা হয়। ওই সময় দিনে দুবার দুটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার হতো-- একটি সকালে ও একটি বিকেলে।
৫. ১৯৮২ সালে সারা দেশ জুড়ে শুরু হয় জাতীয় টেলিভিশনের সম্প্রচার। ওই বছরই প্রথম ভারতের বাজারে আসে রঙিন টেলিভিশন সেট। ওই সময় একটিই মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল-- কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ দূরদর্শন।
৬. আশির দশক থেকেই টেলি-ধারাবাহিকের সূচনা হয়। রামায়ণ, মহাভারত, হমলোগ, বুনিয়াদ ইত্যাদি ছিল ওই সময়ে ছোটপর্দার একমাত্র বিনোদন।
আরও পড়ুন: সেরা আবার ‘ত্রিনয়নী’, সেরা দশে জায়গা পাকা করছে ‘সাঁঝের বাতি’
৭. টেলিভিশনের সম্প্রচারের সময় ও অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাই আশির দশকের শেষে লঞ্চ করা হয় ডিডি টু যার পরবর্তীকালে নামকরণ হয় ডিডি মেট্রো।
৮. ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রসার ভারতী এবং দূরদর্শন ও অল ইন্ডিয়া রেডিওকে এই গভর্নমেন্ট বডি-র অন্তর্গত করা হয়।
৯. এদেশে টেলিভিশন মাধ্যমের বিস্তারের দ্বিতীয় পর্যায়টি শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের নতুন নীতির হাত ধরে এদেশে ব্যবসা করার অনুমতি পায় বেসরকারী চ্যানেলগুলি।
১০. নব্বইয়ের দশক থেকেই যাত্রা শুরু হয় সিএনএন ও স্টারটিভি-র মতো বিদেশি পুঁজির চ্যানেল। পাশাপাশি গড়ে ওঠে জিটিভি, ইটিভি, সান টিভি ও এশিয়ানেট-সহ দেশীয় পুঁজির লগ্নিকৃত চ্যানেল নেটওয়ার্ক। আর মিলেনিয়াম পরবর্তী সময়কে বলা যায় এদেশে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বর্ধিষ্ণু পর্যায় যা এখনও বহমান।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে, টেলিভিশন রয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যা ২০১৭ সালে ছিল ১.৬৩ মিলিয়ন যা বেড়ে দাঁড়াবে ১.৭৪ বিলিয়ন ২০২৩ সাল নাগাদ। এদেশে এই মুহূর্তে প্রায় ২৯৮ মিলিয়ন পরিবার টেলিভিশন মাধ্যমের দর্শক। তার মধ্যে ১৯৭ মিলিয়ন পরিবারের নিজস্ব টিভি সেট রয়েছে। এই সংখ্যা আগামী কয়েক বছরে প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।