Tahsan Khan Second marriage - Taslima Nasrin: বিয়ে করছেন তাহসান খান। ২০১৭ সালে তিনি এবং তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী মিথিলা বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন। তারপর, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনেত্রী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু, তাহসান প্রায় অনেক দিন পর, নিজের জীবনে আবারও ভাল থাকার সুযোগ পেয়েছেন। রোজা আহমেদকে বিয়ে করছেন তিনি। কিন্তু সমাজ মাধ্যম জুড়ে একটাই কথা...
তাহসান খানের ( Tahsan Khan ) স্ত্রীকে দেখে বেশিরভাগ এমন বলছেন তিনি জিতেছেন। তিনি নাকি জীবনের আলাদাই সুখ পেতে চলেছেন। এমন সুন্দরী, অল্প বয়সী বউ পেয়ে অভিনেতা নাকি আনন্দে আত্মহারা। আর এই সুন্দরী রমণীকে দেখে বেশিরভাগের মন্তব্য, তাহসান নাকি জিতে গিয়েছেন। মিথিলার থেকে নাকি অনেক সুন্দর জীবন সঙ্গী পেতে চলেছেন তিনি। আর সেই সব ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে এবার মুখ খুলেছেন, তসলিমা নাসরিন। কে জিতলেন, কে হারলেন, যেন মাথামুন্ডু খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
যেদিন এই খবর রটে এবং ছবি ভাইরাল হয়,সেদিন সন্ধ্যেয় অভিনেতা তাহসান নিজের সমাজ মাধ্যমে তাঁর নতুন বউকে নিয়ে একটি ছবি আপলোড করেন। তাতে অনেকেই ভালবাসা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছায় ভেসেছেন বাংলাদেশের তারকা। অনেকে এমনও জানিয়েছেন, অভিনেতা নাকি এতদিনে জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু জিতে গিয়েছেন কিনা সেই প্রসঙ্গে তসলিমা ( Taslima Nasrin ) লিখছেন..
আরও পড়ুন - Khadaan Box Office Collection: ১৫ দিনে বাংলা ছবির ভাগ্য পাল্টে দিলেন দেব, বক্স অফিসে রেকর্ড ব্রেক 'খাদানে'র!
"ফেসবুক ছেয়ে গেছে 'তাহসান জিতেছে তাহসান জিতেছে' রবে। কেন তাহসান জিতেছে, বুঝে পেলাম না। সে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে বা করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে জেতাজেতির কী হলো! হেটারোসেক্সুয়ালদের বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ থাকে, তারা জীবনের কোনও এক সময় পছন্দসই কাউকে পেলে তার সঙ্গে প্রেম করে, লিভ ইন করে বা তাকে বিয়ে করে। এ তো স্বাভাবিক। জিতলো কেন তাহলে তাহসান? আসলে যারা জিতেছে জিতেছে বলে চেঁচাচ্ছে, তারা চেঁচাচ্ছে কারণ তারা মনে করেছে তাহসান এক বাচ্চার বাবা হয়েও, ডিভোর্সী হয়েও একটা 'কচি সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে' পেয়েছে। মর্ত্যে বসে যত খুশি এবং যেভাবে খুশি নারী ভোগ করার পর স্বর্গে গিয়ে সঙ্গমের জন্য ভার্জিন হুর পেয়ে যাওয়াকে মুসলমানরা ''জিতে যাওয়া''ই মনে করে। কিন্তু রোজা আহমেদ রক্ত মাংসের মানুষ, হুর নয়, খুব সম্ভবত ভার্জিনও নয়। রাজকন্যার জীবন তার ছিল না, খুব স্ট্রাগল করেছে জীবনে। দারিদ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দীর্ঘ দিন সংগ্রাম করে একটি মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। কঠিন সংগ্রামের দিনগুলোয় নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল বলে, নিজের স্বপ্ন যে করেই হোক পূরণ করতে চেয়েছিল বলে নারীবিদ্বেষী সমাজ রোজাকে কম নিন্দে করেনি, কম অপমান করেনি, কম অপদস্থ করেনি। মিথিলার বিরুদ্ধেও কম কুৎসা রটায়নি এই সমাজ।"
তাহসান, বিয়ে করেছেন এ নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা তাঁর কাছে। এই সমাজ পুরুষদের। তাঁরা সবসময় জেতে। মেয়েদের হারতে হয়। অন্তত তসলিমা তাঁর বক্তব্যে এমনটাই লিখেছেন। সমাজে, নারী আজও কোণঠাসা। এমনিও ইসলামে একের বেশি বিয়ের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেখানে ডিভোর্সের পর বিয়ে, নিতান্তই সাধারণ বিষয়। তসলিমা আরও লিখলেন...
"তাহসান জিতেছে, এই নিয়ে সবাই উল্লাস করছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে সব পুরুষই জেতে। সর্বক্ষণ জেতে। তাদের হার নেই। হারতে হয় শুধু নারীকেই। কিন্তু আমি কি মনে করি মিথিলা ( Rafiath Rashid Mithila ) বা রোজা হেরেছে? না। তারা একটুও হারেনি। তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙ্গে নিজের যোগ্যতায় স্বর্নিভরতা এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে নারীর জিতে যাওয়ার প্রথম শর্তই এটি। তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না লোকের কুৎসা বা নিন্দেয়, এ জিতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। ভাল না লাগলে তারা তাদের সঙ্গীকে, সে প্রেমিক হোক বা স্বামী হোক, ত্যাগ করতে পারছে, তারা বাধ্য নয় তাদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় বাস করতে, জিতে যাওয়ার এটি তৃতীয় শর্ত। স্বামীর আচার ব্যবহার যদি পছন্দ না হয় রোজার, তার স্বনির্ভরতাই তাকে সাহস জোগাবে স্বামীকে ত্যাগ করার, মাথা উঁচু করে বাঁচার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের জেতা কোনও চ্যালেঞ্জ নয়। নারীর জন্যই এ চ্যালেঞ্জ। দুই নারীই তিন শর্তের চ্যালেঞ্জে জিতেছে। চ্যালেঞ্জহীন জয়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জপূর্ণ জয় ঢের বেশি গৌরবময়। জয়তু নারী।"