Bengali Film, Bengali Actor: শেষ দু'বছর তিনি শুধু ফোন করে পরিচালককে জিজ্ঞাসা করতেন, ''কবে দেখতে পাব গো?'' আড়াই বছর অনেকটা সময়। ক্ষিতীশ সরকার ছিলেন সেই অসংখ্য মানুষের একজন যাঁরা চাকরি করেন, সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব নেন আর অবসরে কোনও একটা স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকেন। ক্ষিতীশ সরকারের স্বপ্ন ছিল একটা বাংলা ছবি, যার কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে, শেষ হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। কিন্তু আড়াই বছর পরেও ছবি মুক্তি পায়নি।
''থিয়েটার করতেন ক্ষিতীশদা, ফোরামের মেম্বারও ছিল। একবার ২ লক্ষ টাকা নিয়ে আমার কাছে এসে বলেন যে চলো একটা ছবি বানাই। যে গল্পটা নিয়ে এসেছিলেন সেটা তারু মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটি একাঙ্ক নাটক 'মানপত্র''', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন ছবির পরিচালক দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত, ''সেই গল্পের খোলনলচে বদলে আমি একটা চিত্রনাট্য লিখি। কিন্তু ২ লক্ষ টাকায় তো আর ছবি হয় না, জলছবি হয়। তার পরে অনেকে মিলে একটা বড় টিম তৈরি হল। বেশিরভাগই পারিশ্রমিক না নিয়ে বা অনেক কম পারিশ্রমিকে কাজ করেছিল। এক প্রযোজকও এগিয়ে এলেন। কিন্তু ছবিটা সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও মুক্তি পেল না।''
আরও পড়ুন: চশমা পরে ছিলাম না, জানতাম না সই করা মানে বিজেপির খাতায় নাম লেখানো: মাধবী
সরকারি কর্মচারী ছিলেন ক্ষিতীশ সরকার। বিগত প্রায় দু'বছর ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন, এমনটাই জানালেন প্রয়াত অভিনেতার ছেলে জয়ন্ত সরকার। জীবনের একমাত্র ছবি কবে মুক্তি পাবে, অসীম ধৈর্য ধরে সেই অপেক্ষাতেই কেটে গেল তাঁর সময়কালের শেষ দুটো বছর। ছবি মুক্তি পেল না এবং কবে মুক্তি পাবে তা এখনও কেউ জানেন না।
কিন্তু কেন? প্রযোজক অমিত গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান, ''যখন কাজ শুরু হয়, তখন আমি একেবারেই নতুন প্রযোজক, অনেকটা অনভিজ্ঞ। মোট ১৮ লক্ষ টাকায় ছবিটা তৈরি হয়। তার মধ্যে ১ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ক্ষিতীশবাবু নিজে। তখনও আমি রিলিজের ব্যাপারটা ভালমতো বুঝতাম না। সেটা বুঝে উঠতে না উঠতে আমাদের এতগুলো প্রজেক্ট শুরু হয়ে গেল... এই ছবির রিলিজের জন্য যা যা করার প্রয়োজন ছিল আমরা করে উঠতে পারিনি। ছবির এডিটর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ও আজ নেই। সে আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল। আমি চেষ্টা করছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছবিটা কীভাবে রিলিজ করা যায়।''
আরও পড়ুন: প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা স্বরূপ দত্ত
ছবি মুক্তির সঙ্গে অবশ্যই এই মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক নেই। শুধু আফশোষ রয়েছে-- প্রযোজকের, পরিচালকের এবং ছবির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের-- ক্ষিতীশ সরকার, যাঁর প্রাথমিক উদ্যোগেই শুরু হয় ছবির কাজ, নিজেকে বড়পর্দায় একবার দেখে যেতে পারলেন না।