Actor Joyjit Banerjee Puja memories: মিলেনিয়ামের দুদশক পেরিয়ে যাওয়া পুজো আর আশি-নব্বইয়ের পুজোর মধ্যে অনেকটা পার্থক্য। তখন মানুষের হাতে ব্যয় করার মতো অর্থ ছিল কম। বাবামায়েদের শাসনও ছিল অনেক কড়া। আর পুজোর সময় ছাড়া বাঙালির কেনাকাটার চলও কম ছিল। পুরনো সেই পুজোর কথাই উঠে এল জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পুজো নিয়ে আড্ডায়। প্রথম পাওয়া দামি জুতো থেকে বান্ধবীকে কোলে নিয়ে হাঁটা, অভিনেতার অনেক স্মৃতিই এল ঝাঁপির বাইরে।
''আমাদের ছোটবেলায় এত এত গাড়িঘোড়া থাকত না রাস্তায়। জিনিসপত্রের এত দামও ছিল না। পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরলে বাবা ৫০ টাকা দিত। সেটাই ছিল আমাদের কাছে অনেক'', বলেন জয়জিৎ, ''তখন মহালয়াতে পুজোর ওপেনিং হতো না। আমরা ওয়েট করে থাকতাম। পঞ্চমীর দিন পর্যন্ত নিয়ম করে পড়তে বসতে হতো। পুজোটা শুরু হতো মোটামুটি ষষ্ঠীর সন্ধেবেলা থেকে।''
আরও পড়ুন: পুজোয় হোমওয়ার্ক পেলেন ‘রানু পেল লটারি’-নায়ক
নব্বইয়ে যাঁরা বড় হয়েছেন, তাঁদের সিংহভাগেরই স্কুলজীবনে প্রেম করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। জয়জিতের মতে, ওগুলোকে ঠিক প্রেম বলা যায় না। কারণ প্রেম কী, তার গভীরতা কতটা সে সব তো তখন বোঝার মতো বয়স হয়নি। তাই ডেটিং বলা যেতে পারে যা বেশিরভাগই ছিল পুজোকেন্দ্রিক-- হাত ধরে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা, সামান্য স্ট্রিট ফুড খাওয়া-- ওইটুকুই। তেমন স্মৃতি ঝুরি ঝুরি রয়েছে অভিনেতার।
''পুজোয় প্রথম প্রেম করা শুরু মোটামুটি ক্লাস এইটে। কিন্তু সেগুলো একটাও সিরিয়াস প্রেম ছিল না। এরকম হয়েছে সকালে একজনের সঙ্গে বেরিয়েছি, আবার বিকেলে একজনের সঙ্গে। ঘুরে-টুরে একজনকে বাসে তুলে দিয়েছি, তার পর কাছাকাছিই আর একজনের সঙ্গে মিট করেছি। হয়তো ষষ্ঠীতে কারও সঙ্গে আলাপ হয়েছে, দশমীতে ঠাকুর বিসর্জন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকেও বিসর্জন দিয়েছি'', হাসতে হাসতে বলেন অভিনেতা, ''কিন্তু দায়িত্বও নিয়েছি। তখন আমি ক্লাস নাইন-টেনে পড়ি। ঘুরতে বেরিয়ে বান্ধবীর জুতো ছিঁড়ে গিয়েছে, পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। তখন তাকে কোলে করে অনেকটা রাস্তা হেঁটে গিয়েছি ভরা সন্ধ্যায়। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে কিন্তু তার পায়ে লাগছে সেটাই বড় কথা। সে তো আগে বন্ধু, তার পরে তো না হয় অ্যাফেয়ার! কিন্তু আমার ছেলের এখনও গার্লফ্রেন্ড জোটেনি। বয়েজ স্কুলে পড়়ে তো। বেশ টেনশনেই আছি।''
আরও পড়ুন: শোভাবাজার রাজবাড়ির জামাই পদ্মনাভ, শোনালেন ও বাড়ির পুজোর গল্প
আশি-নব্বই দশকে যাঁরা বড় হয়েছেন, তাঁদের কাছে শপিং অ্যাপ ছিল না, এখনকার মতো বিশাল বড় বড় শপিং মলও ছিল না। কেনাকাটার দোকানপাতি ছিল নির্দিষ্ট। শুধু নতুন জামা নয়, নতুন জুতো কেনারও সময় ছিল বছরে একবার, পুজোর সময়। তখন মানুষের জীবনযাপনের ধরন যেমন ছিল, সেখানে কেনাকাটা হতো অনেকটাই প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে। তাই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে স্কুল-পড়ুয়াদের জন্য স্কুলের জুতো ছাড়া শৌখিন জুতো বরাদ্দ হতো বছরে একটি, বড়জোর দুটি। বছরভর পরার পরে সেই জুতো নষ্ট হলে বা পরের বছরে পায়ের মাপ বড় হয়ে গেলে তবেই নতুন জুতো কেনা। জামাকাপড় তা-ও হয়তো জন্মদিন বা পয়লা বৈশাখে এক-আধটা হতো, কিন্তু নতুন জুতো মূলত কেনা হতো পুজোর সময়েই।
আরও পড়ুন, মুম্বইয়ে অভিজিত ভট্টাচার্যের দুর্গোৎসব জমজমাট
''আমার বাবা খুব বড়লোক ছিলেন না। কিন্তু তার পরেও আমাকে পুজোর সময় সেরা জিনিসটা কিনে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। নব্বইয়ের গোড়ায় আমি অ্য়াডিডাসের জুতো পরেছিলাম প্রথম। বাবা কিনে দিয়েছিল পুজোতে। এত আনন্দ হয়েছিল যে জুতোটা সঙ্গে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম আমার মনে পড়ে'', স্মৃতিমেদুর হন জয়জিৎ, ''তখন ৬০০-৭০০ টাকা দামের জুতো মানে আমাদের কাছে বিরাট আনন্দের। তখন ৭০০-৭৫০ টাকার জিন্সও কিনে দিয়েছে বাবা। আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগে ওগুলোই ছিল অত্যন্ত দামি। তাই এখন যখন আমি বাবা-মায়ের জন্য ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করতে পারি, তাদের পছন্দের জিনিসগুলো এনে দিতে পারি, ভালো লাগে।''