/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/18/cats-2025-09-18-18-48-56.jpg)
খোলামেলা আড্ডায় সৌরভ
ন'বছর বছর পর সিরিয়ালে কামব্যাক, নেপথ্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা?
এটা তো উপেক্ষা করার কোনও জায়গাই নেই। আর্থিক নিরাপত্তার জন্য সিরিয়াল সত্যিই ভরসাযোগ্য জায়গা। আরও একটি বিশেষত্ব, টেলিভিশন পরিচিতি তৈরি করতে বিরাট ভূমিকা পালন করে। জনসাধারণের কাছে পৌঁছনোর অন্যতম মাধ্যম টেলিভিশন। আমি কিন্তু, কোনওদিন বলিনি যে মেগায় কামব্যাক করব না। টেলিভিশন থেকেই আমার অভিনয়ের যাত্রা শুরু, তাই এই মাধ্যমকে আমি অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি। প্রতিদিন অভিনয়ের যে চর্চা সেটা একমাত্র টেলিভিশনেই সম্ভব এবং দর্শকের মনে একটা দীর্ঘমেয়াদী ছাপ ফেলা যায়। সিরিয়ালে প্রতিদিন নেট প্র্যাকটিসের সুবিধা রয়েছে। যেখানে রোজ প্র্যাকটিসের সুযোগ থাকে সেখানে তো পারফেকশন আসবেই। অনেকদিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল। 'লক্ষ্মী ঝাঁপি'-র গল্পটাও আমার ভাল লাগে। তাই রাজি হয়ে গেলাম।
টিআরপি-এর দিক থেকে বিচার করলে 'লক্ষ্মী ঝাঁপি'-তে কাজ করে সন্তুষ্ট?
সন্তুষ্ট বা 'স্যাটিসফায়েড' ভীষণ ভারি এবং কঠিন শব্দ। কোনও একটা কাজে সম্পূর্ণ 'স্যাটিসফায়েড' এটা বলা আমার পক্ষে কখনই খুব সহজ নয়। তবে এতগুলো বছর পর নিজের সেই চেনা গ্রাউন্ডে ফিরেছি। পরিচালকের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। কলেজে থিয়েটার করার সময় থেকে পরস্পরকে চিনতাম। এতদিনে পেশাগতভাবে একসঙ্গে কাজ করছি। শৌভিককেও আমি চিনি আর এই চ্যানেলের দিদিরা তো একটা সময় আমার গোঁফ গজাতে দেখেছে (ফোনের ওপারে হাসি)। তাই এটা আমার কাছে হোম কামিংয়ের মতো।
আজকের দিনে অনেক সিরিয়ালই অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মেগায় ফেরার সময় এটা নিয়ে মনে কোনও সংশয়?
বিনোদন জগৎ-এর ক্ষেত্রে 'সিকিওর' শব্দটাই তো ধীরে ধীরে 'ইনসিকিওর' হয়ে যাচ্ছে। আজকাল একাধিক মাধ্যমে মানুষের কাছে অনায়াসে বিনোদন পৌঁছে যাচ্ছে। মানুষ আজকাল রিলে মজে রয়েছে। অল্প সময়ে বিনোদনের রসদ পেয়ে ধৈর্যশক্তিও কমে যাচ্ছে। এইরকম পরিস্থিতিতে তো বিনোদন জগৎটাই একটা অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে অতিক্রান্ত হচ্ছে।
অভিনেতা হিসেবে কাজ করার সময় লেখক সত্ত্বা কখনও জেগে ওঠে? পরিচালককে কোনও গাইডলাইন দেওয়ার ইচ্ছে হয়?
অভিনয়ের সময় আমি শুধু সেটা করতেই পছন্দ করি। কারণ আমি প্রিন্সিপলে বিশ্বাসী। ক্যামেরার সামনে নিজের চরিত্রটাকে নিঁখুতভাবে ফুটিয়ে তোলাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আমি মনে করি যিনি গল্প লিখছেন, যিনি নির্দেশনার কাজ করছেন তাঁদের উপর ২০০ শতাংশ বিশ্বাস রাখতে হবে। বিশ্বাস যদি না রাখতে পারি তাহলে কাজটা আমি ঠিকমতো করতে পারব না। তাঁদের দেখানো চশমায় আমি গল্পটা দেখার চেষ্টা করি।
সিরিয়ালে কাজের মাঝে যদি সিনেমা-সিরিজের প্রস্তাব চলে আসে...
এখনও পর্যন্ত এইরকম যে ক'টি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি হাউজ আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। আমার কোনও অসুবিধা হয়নি। দুদিক ব্যালেন্স রেখে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং কিন্তু, কঠিন বলে চেষ্টা করব না সেটা তো হয় না।
বর্তমানে সিরিয়ালে গল্প বলার ধরণ বদলেছে, নারী কেন্দ্রিক মেগা দর্শকমহলে বেশ জনপ্রিয়। অভিনয় জার্নির শুরু দিনগুলোর সঙ্গে ন'বছর পরের এই পরিবর্তনগুলো কেমন লাগছে?
এই পরিবর্তনের পাশাপাশি পরশুরামের মতো সিরিয়ালের জনপ্রিয়তাকেও দেখাতে পারি। পুরুষকেন্দ্রীক গল্পের রসদও কিন্তু, দর্শক চেটেপুটে উপভোগ করছে। নারীকেন্দ্রীক মেগা তৈরির মতো এই পরিবর্তনকেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এটা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, নারী-পুরুষভেদে টেলিভিশন প্রত্যেকের। আজকের দিনে ওটিটতে মেগা দেখার সুযোগ রয়েছে। কাজের ফাঁকেও পছন্দের সিরিয়াল দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। মেগার সাফল্যের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
টেলিভিশনে সৌরভ চক্রবর্তীর গ্র্যান্ড কামব্যাকের জন্যই লক্ষ্মী ঝাঁপি-র প্রতি বাংলা মেগার দর্শকের বিশেষ আকর্ষণ?
না না, একদমই নয়। আমি এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টাকে দেখতেই চাই না। বলা ভাল পছন্দ করি না। আমার মনে হয়, আমি বা অন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরা দাবার গুটির মতো। ঘোড়া আড়াই ঘর যেতে পারে কিন্তু, সেটা তো কাউকে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য লেখক, পরিচালকের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। টেলিভিশনের বিপুল সংখ্যক দর্শকের মন বুঝে গল্প বলা সেটার জন্য ওঁদের কৃতিত্ব অনেকটা।
অনেকেই মনে করেন সিরিয়ালে গল্পের গরু গাছে ওঠে। তাই অনেক বর্ষীয়ান-খ্যাতনামা শিল্পীরা আর মেগায় কাজ করতে চান না। এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত?
সিরিজে ভিন্নস্বাদের গল্প নিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ থাকে। কিন্তু, টেলিভশনের দর্শক সংখ্যা অগণিত। এর একটা বিশাল ব্যপ্তি রয়েছে। শুটিংয়ের আবার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও থাকে। রোজ শুটিং হচ্ছে, প্রতিদিন সেই গল্প টেলিকাস্ট হচ্ছে। অনেক সময় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গল্পকে সেইভাবে উপস্থাপন করার প্রয়োজন হয়। এখন তো সিরিজে কাজের অপশন তৈরি হয়েছে। আগে তো সেটা ছিল না। টেলিভিশন আর সিনেমার বাইরে তো অন্য কোনও মাধ্যমে কাজের সুযোগ ছিল না। সেই জন্যই আজকের দিনে এই কথাগুলো উঠে আসা প্রাসঙ্গিক।
সিনেমার পর সিরিয়ালের গল্প লেখার কোনও পরিকল্পনা আছে?
অবশ্যই ইচ্ছে আছে। সিরিয়াল এমন একটা মাধ্যম যেখানে প্রতিদিন দর্শকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। একটানা অনেকদিন দর্শককে সঙ্গে নিয়ে চলা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাঁরা প্রকৃত অর্থে ভাল-মন্দের বিচার করে। যদি কোনও মেগা ভাল লাগে সেটা নিয়ে চর্চা করে আর মনপসন্দ হয় না সেটা নিয়েও কথা বলে। এটার একটা আলাদাই তৃপ্তি আছে।