Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

'তিনবার বিয়ে তো কী!' সরব বাংলা বিনোদন জগৎ

Srabanti Chatterjee: শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে যখন ট্রল ও মিম ছেয়ে গিয়েছে নেটপাড়ায়। তখন আপত্তিজনক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের বিরোধিতায় মুখর হলেন ছোটপর্দা ও বড়পর্দার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bengali actors lash out on netizens for trolling Srabanti Chatterjee

ট্রোলের বিরুদ্ধে সরব হলেন প্রিয়ম চক্রবর্তী, জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও রূপা ভট্টাচার্য। ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে

Srabanti Chatterjee: বেশ কিছুদিন ধরেই অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের সম্ভাব্য তৃতীয় বিয়ে নিয়ে সরগরম নেটিপাড়া। শ্রাবন্তী ও তাঁর বিশেষ বন্ধু রোশন সিংয়ের একটি মালা পরা ছবি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় ১৯ এপ্রিল। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে শুরু করেন যে শ্রাবন্তী তৃতীয়বার বিয়ে করেছেন। পরে রোশন সিং তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে এসে লেখেন যে ওই ছবিটি তাঁদের বিয়ের ছবি নয়। তবে তাঁরা যে বিয়ে করছেন সেই খবরটি সঠিক বলেই জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু মিম ভাইরাল হতে শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়, যেগুলি অভিনেত্রী ও তাঁর পরিবারের পক্ষে অত্যন্ত অবমাননাকর ও কুরুচিপূর্ণ। এই ধরনের মিম ও ট্রোলের বিরুদ্ধে শুক্রবার থেকেই একটু একটু করে সরব হতে থাকেন বাংলা বিনোদন জগতের সদস্যরা।

Advertisment

ছোটপর্দা ও বড়পর্দার বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী তাঁদের সোশ্য়াল মিডিয়া প্রোফাইলে এসে পাবলিক পোস্ট করে নেটিজেনদের এই ধরনের আচরণের নিন্দা করেন। তাঁদের প্রায় সকলেরই একটিই মত, কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সমালোচনা করা এবং প্রকাশ্যে সেই নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করা কোনওভাবেই কাম্য় নয়। অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, "একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর অভিনয় নিয়ে মাথা ঘামান, সমালোচনা করুন, মেনে নেব। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া করার কোনও অধিকার আমাদের কারও নেই! সুস্থ থাকুন...।"

Actress Srabanti Chatterjee অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্য়ায়। ছবি: শ্রাবন্তীর ফেসবুক পেজ থেকে

একই বক্তব্য়ের প্রতিধ্বনি অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী ও কাঞ্চনা মৈত্রের সোশ্য়াল মিডিয়া পোস্টে। সুদীপ্তা চক্রবর্তী লিখেছেন, ''আমি কবার বিয়ে করব, সেটা আমার ব্যাপার আমার সিদ্ধান্ত। যতবার অসুখী হব, ততবার আবার সুখী হবার স্বপ্ন দেখব...পাকা সিদ্ধান্ত নেবার আগে বাবা-মার মতামত অবশ্যই নেবো। এখন অবশ্য শুধু মার। মেয়ে বড় হবার পর করলে মেয়ের মতামতও নেব। দিদির সঙ্গেও একবার আলোচনা করে নিতে পারি। আর হ্যাঁ, কঠিন সময়ে যে দু'একজন বন্ধুকে পাশে পাব, খুশির খবর আগে তাদেরই জানাব , খুশির সময়ে শুধু তাদেরই ডাকব। ব্যাস্, আর কারো মতামত নেবার প্রয়োজন নেই। জাস্ট নেই। কেউ আগ বাড়িয়ে মতামত দিতে এলে নেব না। শ্রাবন্তীরও নেবার কোন প্রয়োজন দেখি না।'' একই সঙ্গে শ্রাবন্তীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্রও তাঁর টাইমলাইনে লেখেন, ''খুব খুশি আমি শ্রাবন্তীর জন্য কারণ ও নিজের জীবনটা নিজের শর্তে বাঁচতে চাইছে। একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট মানুষ হিসেবে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে...।''

আরও পড়ুন: অলোক নাথ প্রসঙ্গে অজয় দেবগণের বিবৃতিতে কী উঠে এল?

তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনুরাগী, অনুগামী দর্শকের কৌতূহল থাকবে তা স্বাভাবিক। তিনি কতবার বিয়ে করলেন বা করেছেন, সেই নিয়েও আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তিনি 'কেন' একাধিকবার বিয়ে করলেন বা একাধিকবার সম্পর্কে জড়ালেন, এই প্রশ্ন তুলে তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল করা নিতান্তই অশোভন আচরণ। কারণ একাধিকবার বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ এদেশের আইনবিরুদ্ধ নয়। কোনও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নন, এমন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যদি তেমনই আর একজন প্রাপ্তবয়স্ককে সজ্ঞানে, সচেতনভাবে বিয়ে করতে চান, তবে সেই দুই ব্যক্তির পরিবারের বাইরে কারও এই নিয়ে আপত্তি তোলার অধিকারই নেই

এমনকী পরিবারের সদস্যদের আপত্তিও এক্ষেত্রে ধোপে টেকে না। কারণ দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক। যে কোনও পরিণতমনস্ক সমাজ এইটুকু ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সম্মান করতে সক্ষম। দুর্ভাগ্য়জনক ভাবে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর তৃতীয় বিয়ে নিয়ে যা যা ট্রোল ও মিম হয়েছে নেটপাড়ায়, তাতে এটাই প্রমাণিত হয় যে সাম্প্রতিক বঙ্গসমাজের একটি বড় অংশ এখনও দৃষ্টিভঙ্গিগত ভাবে একেবারেই প্রগতিশীল নয়। পাশাপাশি, সামাজিক আচরণবিধি সম্পর্কেও সচেতন নয়।

সোশ্যাল মিডিয়া একটি ভার্চুয়াল জগৎ হতে পারে, কিন্তু সেখানে যাঁরা বিচরণ করেন, তাঁরা কেউ কল্পিত নন। ভুয়ো প্রোফাইলও কোনও না কোনও রক্তমাংসের মানুষের দ্বারা পরিচালিত। তাই রাস্তাঘাটে-পাড়ায়-অফিস-কাছারিতে যে সামাজিক আচরণবিধি মেনে চলতে হয় সভ্য় মানুষকে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেই আচরণবিধি মেনে চলা উচিত। শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, তাঁর ছেলে ঝিনুক, তাঁর বন্ধু ও পরিবারের অন্য়ান্য় সদস্য়দের নিয়ে যে ট্রোল ও মিম হয়েছে, তা সামাজিক আচরণবিধি লঙ্ঘন তো করেছেই, উপরন্তু তা নিতান্তই অনধিকার চর্চা।

Srabanti and Roshan রোশন ও শ্রাবন্তী। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে

অভিনেত্রী প্রিয়ম চক্রবর্তী ও রূপা ভট্টাচার্য তাঁদের সোশ্য়াল মিডিয়া পোস্টগুলিতে সেই অনধিকার চর্চারই বিরোধিতা করেছেন। রূপা লিখেছেন, "একটি মেয়ে ভালবাসে, বিয়ে করে... আর প্রতিবার তার স্বপ্ন ভাঙে। কিন্তু সে আবারও স্বপ্ন দেখে, আবারও ঘর বাঁধে... আবারও বিশ্বাস করার সাহস রাখে। তার মনের জোর আর লড়াই করার সাহসকে সম্মান করতে না পারলে সেটা আমাদের মনের দৈন্য। শ্রাবন্তীর জন্য় রইল সমস্ত শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। একজন মানুষ তিন বার কেন, ৩০০ বার বিয়ে করতে পারে...।"

আরও পড়ুন: সম্পর্ক ভাঙল কি ভিকি কৌশলের, হারলিনের কবিতা নিয়ে জল্পনা

অভিনেত্রী প্রিয়ম চক্রবর্তীর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও ধরা পড়ল সংবেদনশীলতা। তিনি লিখেছেন, "জীবনে যতবারই ঝড় আসুক না কেন, বার বার মানুষের বাঁচতে চাওয়া উচিত। স্বপ্ন দেখা উচিত। নতুন করে শুরু করা উচিত। তা সেটা একবার হোক, দুবার হোক বা তিনবার... তাতে বাকিদের এত মাথাব্যথার কী আছে? যে নতুন করে বাঁচতে চাইছে, জীবন শুরু করতে চাইছে, তার জন্য সমস্ত শুভকামনা রইল।"

তবে শুধুমাত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই নন, নেটপাড়ায় এই জাতীয় ট্রোল ও মিমের বিরোধিতা করছেন বহু সাধারণ মানুষও। আর সেটাই আশাব্যঞ্জক।

Srabanti Chatterjee Bengali Cinema Bengali Actress Bengali Heroine
Advertisment