/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/30/cats-2025-08-30-18-00-57.jpg)
ছবিটা নিজের জন্য বানিয়েছি, আমি নিজেই নিজের প্রতিযোগী: রূপসা গুহ
Rupsha Guha Interview:
অভিনয়ের সুযোগ কম বলেই পরিচালনায় হাতেখড়ির সিদ্ধান্ত? আজকাল অনেকেই অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনা-প্রযোজনা করছেন সেটা থেকে অনুপ্রাণিত?
না, কোনওটাই নয়। আমার আশেপাশে কে কী করছে সেটা নকল করতে চাইনি। ব্যক্তিগতভাবে আমার ছবি পরিচালনার প্রতি একটা অমোঘ আকর্ষণ ছিল। একটা সিনেমার মধ্যে আমি অভিনয়, সংলাপ, গল্প সব কিছু খুব খুঁটিয়ে দেখি। ওটা আমার একটা স্বপ্নের জগৎ। কবিতা, কথা, পারফরম্যান্স, ভিজ্যুয়াল ট্রিটমেন্ট, ক্যামেরা , লেন্সিং সব কিছু আমার বড্ড পছন্দের। অপেক্ষায় ছিলাম কবে আমার নিজের গল্প বলব। যখন অভিনয় করতাম তখনও আমার ছবি বানানোর প্রতি সাঙ্ঘাতিক একটা মোহ ছিল। অভিনয় তো আমার প্রথম পছন্দ। ভবিষ্যৎ-এ আরও অনেক অভিনয় করব বলেই আমি আশাবাদী। পাশাপাশি ছবি বোনার যে শখ সেটাও একইসঙ্গে চালিয়ে যেতে চাই।
নিজের জীবনের ঘটনার ছায়া এই গল্পে রয়েছে?
এখানে একজন মানুষ, একটা জায়গা, সময়ের কথা বলেছি। এটা পুরোপুরি আমার কাল্পনিক একটা চরিত্র। তবে কোথাও না কোথাও এই চরিত্র অর্থাৎ ফিরোজের সঙ্গে আমার অনেক মিল আছে। ফিরোজ আমি নই, কিন্তু, বেশ কিছু সাদৃশ্য আছে। আমার ছবির ফিরোজের শিল্পের প্রতি প্রচণ্ড মায়া-মোহ। ঠিক আমার জীবনেও যেমন গান বাজনা কবিতা গল্প ছাড়া আর কিছু নেই। এভাবেই বাস্তবের আমি আর সিনেমার ফিরোজ একাত্ম হয়ে গিয়েছে।
'হাউ আর ইউ ফিরোজ?'-এর টার্গেট অডিয়েন্স কারা?
আমার ছবির দর্শক বুদ্ধিদীপ্ত, আবেগপ্রবণ। আমার বিশ্বাস এই ছবিতে ফিরোজের মনে যে জটটা দেখানো হয়েছে সেটা অনায়াসেই দর্শক খুলতে পারছে। আমার ছবিতে যেহেতু কিশোর প্রেমের গল্প রয়েছে তাই ১৩ থেকে ৮৩ প্রতিটি দর্শকের ভাল লাগবে বলেই আশাবাদী। এই প্রেমটা খুব অদ্ভুত, যা আজ প্রায় বিলুপ্ত! সর্বোপরি আমার ছবির টার্গেট অডিয়েন্স কলকাতাবাসী। আমার ভাষা এখানকার। আমি বাঙালি তাই একজন বাঙালির চোখ দিয়েই চরিত্রটা এঁকেছি। কিন্তু, যেহেতু আমার ছবির মূল চরিত্রে একজন অবাঙালি, তাই তাঁকে দিয়ে সাবলীল বাংলা বলানো সম্ভব নয়। সেখানে হিন্দি, ইংরাজির মিশেল রয়েছে। আমার তো মনে হয় কলকাতাবাসী বাংলা, হিন্দি, ইংরাজি তিনটি ভাষাতেই সমান পারদর্শী।
টাকা সত্যিই জীবনের সর্বস্ব নয় বলে বাস্তব জীবনে আপনি মনে করেন?
এমন এক কলকাতায় বাস করছি যেখানে আমরা প্রত্যেকে টাকার পিছনে ছুটে চলেছি। টাকার ঊর্ধে কিছু নেই। এই টাকার জন্য কত সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে, হত্যালীলা ঘটছে। কিন্তু, আমার গল্পে দেখানো হয়েছে টাকা সর্বস্ব নয়। কয়েকটি স্তরে সেটি দেখানো হয়েছে। আর মানুষের জীবনের এই স্তর পরিবর্তনের গল্প আমার ভাল লাগে। এই পৃথিবীতে যখন টাকা উপার্জনের জন্য মানুষ দিশেহারা তখন আমার ছবির গল্প বলবে, মনুষ্যত্বও প্রয়োজন। টাকার বিনিময়ে সব কিছু বিকিয়ে দেওয়া যায় না এটা আমি সত্যিই বিশ্বাস করি। টাকা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে হান্ড্রেড পার্সেন্ট নয়। এই সমাজ- বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে মানুষের বেঁচে থাকাটাই যখন কঠিন তখন মনুষ্যত্ব বিশেষ ভূমিকা পালন করে সেটাই আমি উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। সেটাই আমার গল্পের সারমর্ম।
ডেবিউ পরিচালক হিসেবে প্রতিযোগী কে?
এই ছবিটা আমি নিজের জন্য বানিয়েছি। আমি নিজেই নিজের প্রতিযোগী। আগামী দিনে যাতে আরও ভাল ছবি উপহার দিতে পারি সেই শিক্ষাই এই ছবি থেকে নেব। শিল্পীসত্ত্বার কোনও তুলনা হয় না। প্রত্যেকে নিজের মতো সুন্দর। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের পর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর টনিক, আমি পেরেছি-ভবিষ্যৎ-এও পারব।
প্রথম ছবি তৈরির জার্নিটা মসৃণ ছিল?
একেবারে মসৃণ ছিল না। আমার বাজেটের সমস্যা ছিল। ওঁদেরকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ভাবিনি রাজি হয়ে যাবে। স্বল্প বাজেটে কাজ করছি জেনেও প্রত্যেকে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হয় অভিনেত্রী হিসেবে যতটা প্রাধান্য পাওয়ার কথা ছিল ততটা পেয়েছি। আর এই কথাটা কিন্তু, অনেকেই বলেন। দুর্গম পথটা ধীরে ধীরে সুগম হয়েছে। জমানো পুঁজি দিয়ে কাজটা করেছি।
অভিনয়ের সুযোগ পেলে আবার করবেন?
অভিনয় আমি করতে চাই। লোভনীয় চরিত্র পেলে নিজেকে আটকাতে পারব না। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, আমি যেন আরও অনেক বেশি অবিনয় করতে পারি আর গল্প বলতে পারি। আর রাস্তাটা যেন একটু সহজ হয়। আমি আশার আলো দেখতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আরও ভাল গল্প বলতে পারব। সকলের ভালবাসা, বিশ্বাসটুকুই কাম্য।
ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে উত্তেজিত না চিন্তিত?
খুব এক্সাইটেড। এই ছবি তৈরির জার্নিটা প্রসব যন্ত্রণার মতো। একদিনের কষ্টের ফল এবার মুক্তি পেল। আর আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম। যে শহরে বড় হয়েছি তাকে কুর্নিশ জানানো আমার কর্তব্য। জাতি-ধর্ম, ভাষা সবকিছুর ঊর্ধে আমার ছবি 'হাউ আর ইউ ফিরোজ?'