Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

'কে কে মেননের সঙ্গে সেই সন্ধেটা ভুলতে পারব না', গল্প বললেন 'প্যান্থার'-এর 'ডিভা'

Bengali actress Moumita Pandit: অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন মৌমিতা পণ্ডিত। 'প্যান্থার'-এর 'ডিভা' শোনালেন তাঁর গল্প এবং কে কে মেননের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Moumita Pandit shares her experience of working with K K Menon

ছবি সৌজন্য: মৌমিতা পণ্ডিত

Moumita Pandit worked with K K Menon: হইচই-এর ওয়েব সিরিজ 'ধানবাদ ব্লুজ'-এ চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্রে তাঁকে প্রথম দেখেছেন দর্শক। যদিও তার আগেই সম্পূর্ণ হয়েছিল 'ভবিষ্যতের ভূত' ও 'কণ্ঠ' ছবির শুটিং। ওই দুটি ছবিই মুক্তি পায় পরে। মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে মৌমিতা শোনালেন তাঁর অদম্য জেদ ও লড়াইয়ের গল্প। আর জানালেন ২০ তলার বারান্দায় এক সন্ধ্যায়, শুটিংয়ের ফাঁকে, বিখ্যাত বলিউড অভিনেতা কে কে মেননের সঙ্গে মন ছুঁয়ে যাওয়া আলাপচারিতার কথা।

Advertisment

Moumita Pandit Panther Diva shares working experience with K K Menon 'প্যান্থার' ছবির ডিভা লুক।

''আমার বড় হয়ে ওঠা আজিমগঞ্জে। আমার পরিবারের সবাই প্রায় সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ওটাই আমাদের পরিবারের ট্রাডিশন। দাদাঠাকুর অর্থাৎ শরৎ পণ্ডিত আমার প্রপিতামহ'', বলেন মৌমিতা, ''বাড়ির সবাই চেয়েছিল আমি স্কুলে বা কলেজে পড়াই। চার বার এসএসসি পরীক্ষায় বসেছি কিন্তু কিছু লিখিনি। ভয় ছিল যে পাশ করে গেলে সারা জীবনটা উত্তরবঙ্গেই আটকে থাকতে হবে। বাড়িতে যখন এই নিয়ে অশান্তি প্রবল হয়, আমি একা থাকতে শুরু করি। তখন আমার ২১ বছর বয়স। মুর্শিদাবাদের ব্যাঙ্কে চাকরি নিই আর টাকা জমাতে শুরু করি, কলকাতায় গিয়ে প্রথম ছমাস যাতে সারভাইভ করতে পারি। সেই টাকা জমাতে তিন বছর সময় লেগেছিল। তার পর একদিন মাঝরাতে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম, কলকাতা চলে এলাম, সেটা ২০১০ সাল।''

আরও পড়ুন: জিৎদার সঙ্গে ছবি আমার স্বপ্ন ছিল, অংশুমানদাকে ধন্যবাদ: নীল

মৌমিতা কলকাতায় এসেছিলেন প্রাথমিকভাবে ক্যামেরার পিছনের কাজ করতে। লেখালেখি করতে ভালবাসতেন। সেই সূত্রেই একটি যোগাযোগ হয়েছিল। বেশ খানিকটা সময় নিয়েছিলেন নিজেকে গ্রুম করতে। প্রাথমিকভাবে পরিবার তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও পরবর্তীকালে বাবা-মা ও ভাই তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন এবং সব সময় পাশে থেকেছেন। মৌমিতা বলেন, ওঁদের সাপোর্ট ছাড়া তিনি এতদূর আসতে পারতেন না। ২০১৪ সালে প্রথম ফোটোশুট। মৌমিতা বলেন তিনি 'লাক বাই চান্স' মডেল। প্রথম ফোটোশুটের পর থেকেই ফ্যাশন মডেলিংয়ে পরিচিতি বাড়ে, ভাল কাজও আসতে শুরু করে। কিন্তু মডেলিংয়ে তিনি নিজেকে আটকে রাখতে চাননি। অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে থিয়েটার করতে শুরু করেন। আর সেই সূত্রে যোগাযোগের মাধ্যমেই তাঁর প্রথম বড় কাজ, কে ডি সত্যম-এর 'বলিউড ডায়েরিজ'। রাইমা সেনের বোনের চরিত্রে অভিনয়, মৌমিতার প্রথম ক্যামিও।

Moumita Pandit Panther Diva shares working experience with K K Menon ছবি সৌজন্য: মৌমিতা

''আমার ছবির কাজগুলো এসেছে ভারি অদ্ভুতভাবে। গত বছর মার্চ মাসে মেসেঞ্জারে এসেছিল 'কণ্ঠ'-র অডিশনের খবর। অনেক পরে খেয়াল করেছিলাম। প্রায় দৌড়তে দৌড়তে গিয়ে অডিশন দেওয়া, কাজ ফাইনাল হওয়া। 'ধানবাদ ব্লুজ'-এর কাজটাও এসেছিল ফেসবুকের মাধ্যমে। আমার সঙ্গে তোলা কারও ছবি দেখে সৌরভদা ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করে। বলেছিল যে এই চরিত্রটা এখনও লিখে উঠতে পারিনি কারণ তেমন কোনও অভিনেত্রী পাইনি। তুমি যদি রাজি থাকো তবে লিখব। 'ধানবাদ ব্লুজ'-এর শুট চলতে চলতে লেখা হয়েছে, ইমপ্রোভাইজ করা হয়েছে। বলতে গেলে কলকাতায় প্রথম রিলিজ কাজ 'ধানবাদ ব্লুজ', বলেন মৌমিতা।

আরও পড়ুন: ‘বাংলা সিনেমা দেখা যায় না! বাংলা ওয়েব সিরিজ গারবেজ’

সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত 'প্যান্থার' মৌমিতার প্রথম পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবি। জিৎ অভিনীত এই অ্যাকশন ছবিতে 'র' এজেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মৌমিতা। ওই ছবিতে তাঁর ডিভা চরিত্রের লুক বাংলা ছবিতে নিঃসন্দেহে অভিনব। ''বর্ণপরিচয়-এর অ্যাসিস্টান্ট ডিরেক্টর শুচিস্মিতাদি আমাকে কাস্টিং করেছিলেন 'প্যান্থার'-এ। তার জন্য আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ ওঁর কাছে। খুব টেন্সড ছিলাম কারণ জিৎদা ও অপুদার সঙ্গেই বেশি সিন ছিল। জিৎদা টেকনিকালি খুব গাইড করেছেন আমাকে। খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন। শাশ্বতদাও তাই। ওঁরা এত সহজ করে দিয়েছিলেন বলেই কাজটা করতে পেরেছি। আর বিশ্বরূপ বিশ্বাস স্যার, যাঁর কাছে আমি ওয়ার্কশপ করি নিয়মিত তিনি এই ছবির মেন ভিলেন, ইয়াকুব হাবিবি। ওঁর কাছে, অংশুমানদার কাছে ও আমাদের পুরো ডিরেক্টোরিয়াল টি্মের কাছেই খুব কৃতজ্ঞ আমি। আর কৃতজ্ঞ কলকাতার কয়েকজন বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীর কাছে, যাঁরা এই এতগুলো বছর আমার পাশে থেকেছেন'', ডিভা জানালেন।

Actress Moumita Pandit চিত্রগ্রাহক স্মিতা দত্ত। ছবি সৌজন্য: মৌমিতা

আরও পড়ুন: ”ফ্লোরে প্রযোজক নয়, অভিনেতা জিতকে পাই”

আপাতত মৌমিতা অপেক্ষায় রয়েছেন সেই সিরিজের, যার একটি গল্পে অভিনয় করেছেন তিনি বিখ্যাত বলিউড অভিনেতা কে কে মেননের সঙ্গে। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত সেই গল্পের শুটিং হয়েছে কলকাতায় এবং কে কে মেননের সঙ্গে অভিনয় করতে হবে শোনামাত্র টেনশনে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ''যেদিন থেকে জানতে পেরেছি আমার জাস্ট ঘুম চলে গিয়েছে। যেদিন শুটিং, মেকআপ ভ্যানে বসে আছি আর ভাবছি, ওই ভ্যানেরই পাশের ডোরে রয়েছেন কে কে। ভ্যান থেকে নামতেই কে কে নিজেই এগিয়ে এসে একগাল হেঁসে আমাকে বললেন, হাই আই অ্যাম কে কে মেনন। আমার তখন উইক অন মাই নিজ অবস্থা'', একটু লজ্জা পেয়েই সেই শুটিংয়ের গল্প বলেন মৌমিতা।

Moumita Pandit Panther Diva shares working experience with K K Menon কে কে মেননের সঙ্গে অভিনেত্রী।

সেদিন কলকাতার একটি আকাশচুম্বী অ্যাপার্টমেন্টের ২০ তলায়, বিছানার দৃশ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল শুটিং। মৌমিতা জানালেন, তাঁকে কিছুই করতে হয়নি, কে কে তাঁকে দিয়ে ওই দৃশ্যটা প্রায় করিয়ে নিয়েছিলেন বলা যায়। আর তার পরে যা ঘটেছিল, সেটা শুধু অভিনেত্রী কেন, কে কে-র যে কোনও গুণমুগ্ধের কাছেই ঈর্ষণীয়। মৌমিতা শুটের সময় লম্বা চুলের উইগ পরেছিলেন। শুট শেষে উইগ খুলে একটা ফ্রক পরে দাঁড়িয়েছেন ২০ তলার বারান্দায়। কিছুক্ষণ পরে সেখানে আসেন কে কে। মৌমিতা কথা বলতে শুরু করলে, কে কে বলেন, ''ডু আই নো ইউ?''

''আমিই যে সেই যার সঙ্গে উনি একটু আগে শট দিয়ে এলেন, সেটা বুঝতেই পারেননি। তার পরে আমি বলতে খুব অবাক হলেন। আমার এই লুকটা উনি ভাবতেই পারেননি। সেই কথা বলা, গল্প করা শুরু। সময় যে কোথা দিয়ে চলে গেল। উনি আমার সব কথা শুনলেন। জিয়াগঞ্জের কথা, সেখান থেকে কলকাতায় আসা, স্ট্রাগল করা, সবকিছু। কোনও প্রয়োজন ছিল না কিন্তু শুনতে চাইলেন আমার কাছে সেটাই বড় কথা আর ওঁর মতো ভদ্রলোক আমি খুব কম দেখেছি। আমার বেয়ার ব্যাকের শট ছিল। কাট বলার পরে কস্টিউম এডি ছুটে আসার আগেই উনি আমার গায়ে তাড়াতাড়ি চাদরটা দিয়ে দিয়েছিলেন। ওরকম একজন তারকা সহ-অভিনেতা পাওয়া ভাগ্যের কথা। ভাগ্যিস একদিন রাতারাতি কলকাতা চলে এসেছিলাম। নাহলে তো আর কোনওদিন ২০ তলার বারান্দায়, কলকাতার সন্ধ্যা দেখতে দেখতে কে কে-র সঙ্গে ওই গল্পটা হতো না। আর এর জন্য আলাদা করে সৃজিতদাকে আরও একবার ধন্যবাদ দিতেই হয়'', বলেন মৌমিতা।

jeet web series Bengali Actress
Advertisment