ইওরোপের দেশগুলিতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে ব্রিটেন এবং লন্ডন এই মুহূর্তে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে কারণ কলকাতায় যে তিনজন আক্রান্তের কথা জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২ জন লন্ডন থেকে এবং একজন স্কটল্যান্ড থেকে সংক্রমণ নিয়ে কলকাতায় এসেছেন। বর্তমানে লন্ডনের বাসিন্দা টেলি-অভিনেত্রী পিয়ালী মুখোপাধ্যায়। হোম কোয়ারান্টাইনের সপ্তম দিনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন, ঠিক কী অবস্থায় রয়েছেন ওই শহরের বাসিন্দারা এবং তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই বা কেমন।
'বাক্সবদল' ও 'ভজগোবিন্দ' ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় টেলি-দর্শকের স্মৃতিতে এখনও তাজা। ২০১৮ সালের শেষদিকে বিয়ে করেন পিয়ালী। তার কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতা ছাড়েন। প্রথমে স্বামীর সঙ্গে বেঙ্গালুরু, সেখান থেকে লন্ডন। বিগত বেশ কয়েক মাস যাবৎ লন্ডনেই রয়েছেন পিয়ালী। কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে সুপারমার্কেটে খাবারের ফাঁকা তাক অথবা চালের রেশনিং দেখতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রাক্তন টেলি-অভিনেত্রী এখন সরকারি নার্স! করোনা-সতর্কতায় বিশেষ বার্তা দিলেন
''আমরা তো এই সাতদিন হল হোম কোয়ারান্টাইনড। স্কুল-কলেজ তো বন্ধই, করপোরেট সেক্টরের ৮০ শতাংশ জায়গায় ওয়ার্ক ফ্রম হোম। আমার হাজব্যান্ডও ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ি থেকেই কাজ করবে। আজ সকালের (২০ মার্চ) যা ডেটা, ব্রিটেনে ৩০০০ জন আক্রান্ত আর এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১৪৫ জন। এখানে ইতালি বা ফ্রান্সের মতো পুরো লকডাউন করেনি, আংশিক লকডাউন করেছে। সুপারমার্কেট এখনও খোলা কিন্তু তাকগুলো প্রায় সব ফাঁকা'', দূরভাষে জানান পিয়ালী, ''চাল-ডাল, ভারতীয় খাবার প্রায় কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। ডিমও পাওয়া যাচ্ছে না। কাল আমি আর আমার হাজব্যান্ড চার-পাচটা সুপারমার্কেট ঘুরে কয়েক কেজি চাল, ডাল আর দু-প্যাকেট মাখন কিনতে পেরেছি।''
দুদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে চালের রেশনিং। জনপিছু ২ কেজির বেশি চাল বিক্রি করছে না এক একটি সুপারমার্কেট, সরকারি নির্দেশে। শুধু তাই নয়, খুব বেশি লোকসমাগম এড়ানোর জন্য মার্কেটের ভিতরে দু-একজন করে ক্রেতাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। বাইরে তার জন্য দীর্ঘ সময় লাইন দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। এই সবকিছুর উপর রয়েছে লন্ডনের চিরাচরিত মেঘলা আবহাওয়া।
''এমনিতেই তো জানো, লন্ডনের ওয়েদার খুব ডিপ্রেসিং, তার উপর রাস্তাঘাট ফাঁকা। খুব কম গাড়ি চলছে। মেট্রো সার্ভিস যদিও খোলা আছে। তবে বাড়ির আশেপাশে পায়রা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। যদিও এটা একদিক থেকে ভাল। এখানকার লোকজন খুব ডিসিপ্লিনড। কোয়ারান্টাইনড থাকতে বলা হচ্ছে, সবাই কিন্তু তাই থাকছে। কলকাতায় তো দেখছি অনেকেই মানছে না, অনেকেই পার্টি করতে বেরিয়ে যাচ্ছে'', বলেন পিয়ালী।
আরও পড়ুন: করোনা সচেতনতায় ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ অভিনেতাদের বিশেষ ভিডিও
পিয়ালী ও তাঁর স্বামী, দুপক্ষের পরিবারই এখন কলকাতার পাশাপাশি ব্রিটেনের সংবাদে বেশি চোখ রাখছেন। স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা বিদেশে রয়েছেন এবং সেই সব দেশগুলিতে রয়েছেন যেখানে করোনার প্রকোপে অনেক মানুষ মারা গিয়েছেন, এদেশে তাঁদের পরিবারের অত্যন্ত উদ্বেগে দিন কাটছে। তবে এত কিছুর মধ্যেও একটা বিষয়ে খুবই খুশি পিয়ালী। সেদেশের সাধারণ মানুষ নাকি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন ভারত সরকারের।
''যে কথাটা বলতেই হবে, আমাদের কাছে মোমেন্ট অফ প্রাইড বলতে পারো, যখনই গ্রসারি শপে যাচ্ছি বা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলছি, সবাই বলছে ইন্ডিয়ানস হ্যাভ ডান ইনক্রেডিবলি ওয়েল ইন কনটেনিং করোনাভাইরাস। চিন হল ভারতের প্রাথমিক প্রতিবেশী, তার পরেও ভারতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ খুব ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। সবাই এখানে বলেছে ভারত যা করেছে তা অনেক প্রথম বিশ্বের দেশও করতে পারেনি। এইটা যখন শুনছি, তখন না আর এই সাতদিন ধরে ঘরবন্দি থাকার ডিপ্রেশন সব কেটে যাচ্ছে। তখন ইন্ডিয়ান হিসেবে খুব গর্ব হচ্ছে। আরও বেশি করে মিস করছি দেশকে'', পিয়ালী জানান।
ঘরে বসে আপাতত ইন্টারনেটই ভরসা পিয়ালী-সহ বেশিরভাগ লন্ডনবাসীর। কলকাতাতেও অনেকে গৃহবন্দি থাকছেন ঠিকই কিন্তু সেদেশে বিপদ আরও বেশি। পিয়ালী জানালেন মানুষ এতটাই আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন যে কেউ সামান্য কাশলেই সবাই ঘুরে তাকাচ্ছেন। এমনটা অভিনেত্রীর সঙ্গেও ঘটেছে। ''আজ সকালে আমি বাড়ির নীচতলায় গিয়েছিলাম একটু। গলায় কিছু একটা আটকে আছে মনে হল, সামান্য একটু কাশলাম। দু-একজন যারা ছিল, এমনভাবে তাকাল'', হাসতে হাসতে বলেন পিয়ালী, ''আমার হাজব্যান্ড বলল, আর দু-একবার কাশলে ল্যান্ডলেডি আমাদের তাড়িয়েও দিতে পারে।''