অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে সব চরিত্রই প্রিয় বা বলা ভালো সব কাজই তাঁদের কাছে বিশেষ। তার মধ্যেও কিছু কিছু কাজ নিজগুণেই আরও বেশি করে বিশেষ হয়ে ওঠে। কলকাতার অভিনেত্রী সোহিনী বসু-র কাছে নেটফ্লিক্স ছবি 'বুলবুল'-এ কাজ করার সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাটাই অত্যন্ত দামি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে সোহিনী জানালেন 'বুলবুল'-এর অডিশন থেকে শুটিং সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার কথা।
অনুষ্কা শর্মা প্রযোজক হিসেবে ওয়েব মাধ্যমে এসেই ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন। অনুষ্কা প্রযোজিত 'পাতাল লোক'-কে এযাবৎ দেশের শ্রেষ্ঠ ওয়েব সিরিজ বলেছেন অনুরাগ কাশ্যপও। প্রায় পিঠোপিঠি সময়েই নেটফ্লিক্স-এ আসছে অনুষ্কা শর্মা প্রযোজিত ছবি 'বুলবুল'। এই ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহিনী বসু।
আরও পড়ুন: ভুতুড়ে গল্প বলবে অনুষ্কার ‘বুলবুল’
নাম সোহিনী হলেও টেলিজগতে মূলত মিশর নামেই পরিচিত। ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’, 'ইরাবতীর চুপকথা' ইত্যাদি ধারাবাহিকে টেলিদর্শক তাঁকে দেখেছেন। লকডাউনের শুরু থেকেই পুনে-তে রয়েছেন অভিনেত্রী। এখনও কলকাতায় ফিরতে পারেননি। তাই সম্প্রতি 'ইরাবতীর চুপকথা'-র শুটিং শুরু হলেও তিনি কাজে যোগ দিতে পারেননি। কীভাবে বুলবুল-এর জন্য নির্বাচিত হলেন তিনি, সেই অভিজ্ঞতা বিশদে জানালেন সোহিনী--
''আমাদের কলকাতার একটা কাস্টিং হাউস, টলিউড ইন্ডাস্ট্রি, ওরা আমাকে জানায় যে মুম্বইতে একটা নেটফ্লিক্স ফিল্ম হবে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে বাঙালি কাস্টিং দরকার। প্রথমে যেতে পারিনি অন্য একটা শুটে ব্যস্ত ছিলাম। দ্বিতীয়বার ডাকার পরে আমি যাই। ওখানেই অনুষ্কা শর্মা প্রোডাকশন্সের ডিরেক্টোরিয়াল টিম এসে অডিশন নেয়। অডিশনের অভিজ্ঞতাটা আমার একদম আলাদা লেগেছিল। সাধারণত এখানে কোনও অডিশনে গেলে মিনিমাম মেকআপ নিয়ে যেতে হয়। আমি সেভাবেই যাই। আমাকে বলা হয়েছিল শাড়ি পরে আসতে। আমি একটা ক্যাজুয়াল শাড়ি পরে, লিপস্টিক-কাজল-টিপ পরে গিয়েছিলাম। ওদের ওখানে মেকআপের টিম ছিল। পুরো মেকআপটা তুলে ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে দিল। বলল নাউ ইউ আর রেডি ফর অডিশন অ্যান্ড ভিডিও ক্লিপস।
আমাকে তার পর স্ক্রিপ্ট দেওয়া হল। সেটা পড়ে তৈরি হওয়ার জন্য সময় দিল। যে সিচুয়েশনটা অডিশনে আমাকে দেওয়া হয়েছিল, সেটাই নেটফ্লিক্স-এ সিন গেছে। খুব ইমোশনাল ও শক্ত একটা সিন ছিল। প্রায় আধঘণ্টা-৪৫ মিনিট আমার সময় লেগেছিল অডিশনে। ওই চরিত্রটার জন্য প্রচুর মেয়ে গিয়েছিল। থ্যাঙ্কস টু গড, ওইদিন অডিশনের ফার্স্ট রাউন্ডে আমি শর্টলিস্টেড হই এবং প্রচুর প্রশংসাও পাই। টিম থেকে বলে ওদের ভাল লেগেছে। এটা এবার পাঠানো হবে সিনিয়রদের কাছে। তার পরে ওরা জানাবে। আমি প্রথমদিনই ওদের টিমওয়র্ক ও প্রফেশনালিজম দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আবার আমাকে ডাকা হয় ৭-১০ দিন পরে। দ্বিতীয়দিনে আর একটা ভিডিও ক্লিপে অডিশন দিতে হয়। প্রায় একমাস পরে একদম প্রপার ড্রেস পরিয়ে লুকসেট করা হয়। লুকসেটে টিমের সিনিয়ররাও এসেছিলেন, আমাকে বলেছিলেন যদি তুমি এই রাউন্ডে সিলেক্টেড হও, তাহলে তোমাকে শুট ডেট জানিয়ে দেব।''
এর পরে অভিনেত্রী তাঁর কলকাতার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আবার। 'বুলবুল'-এর জন্য তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, সেই খবরটি দেয় ওই কাস্টিং এজেন্সিই। এই প্রথম বলিউডের কোনও প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ, তাও আবার প্রথম সারির একটি সংস্থা, যার কর্ণধার অনুষ্কা শর্মা। সোহিনীর কেরিয়ারের একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলা যায়। 'বুলবুল'-এর লিড কাস্টিংয়ের রয়েছেন রাহুল বোস, পাওলি দাম, তৃপ্তি দ্রিমি ও অবিনাশ তিওয়ারি। এই সুপারন্যাচারাল থ্রিলারের ট্রেলারটি সম্প্রতি এসেছে নেটফ্লিক্সে। দেখে নিতে পারেন নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে--
এই সিরিজের একটা বড় অংশের শুটিং হয়েছে কলকাতার কাছে বাওয়ালি রাজবাড়িতে। প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগে মেকআপে, জানালেন সোহিনী, ''বুলবুল'-এর এই গোটা কাজটায় মেকআপ এক্সপেরিয়েন্সের কথা আলাদা করে বলতেই হবে-- এটা আউট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। সকাল ৬টা থেকে দুপুর বারোটা অবধি সময় লেগেছিল। এত নিখুঁতভাবে মেকআপটা হয়েছে। আমার লুকে কিছু ক্ষত থাকার কথা ছিল। সেই ক্ষতের মেকআপের সময়, কোনটা পুরনো ক্ষত, কোনটা নতুন ক্ষত, এই প্রত্যেকটার বিশ্লেষণ, ধৈর্য আর পারফেকশন নিয়ে সেগুলো তৈরি করা... আমার মেকআপ করেছিল সোমা গোস্বামী। ও এখন মুম্বইতেই কাজ করছে। প্রস্থেটিক মেকআপে শি ইজ ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ইন বলিউড। 'ছপক'-এ দীপিকা পাডুকোন-এর মেকআপটা সোমার করা। আমি অনারড যে আমি ওর কাছে মেকআপ করতে পেরেছি।''
'বুলবুল'-এর পরিচালক অন্বিতা দত্তের স্টোরিটেলিংয়ের দক্ষতায় মুগ্ধ অনুষ্কা, ইতিমধ্যেই সেকথা জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। সোহিনী জানালেন শুটিংয়ে পরিচালক ও তাঁর টিম অভিনেত্রীকে প্রভূত সাহায্য করেছেন। ''ওদের ইউনিটের কাছে আমি একেবারেই নতুন। কিন্তু ওরা খুব প্রফেশনাল, আর্টিস্টের যোগ্য সম্মান দেয়'', বলেন সোহিনী, ''আমার দুদিন শুটিং ছিল বাওয়ালি রাজবাড়িতে। খুব চটপট শট নেয় কিন্তু খুব পারফেকশনিস্টও। প্রত্যেকটা শট বোঝানো, সেটাকে ইলাবোরেট করা... এমনকী আইবল কীভাবে শিফট হবে, কোন লোকেশনে ফিক্সড হবে, সে সব পুঙ্খানুপুঙ্খ বুঝিয়েছে। সেভাবে বিচার করেই শটগুলো নেওয়া হয়েছিল। আমি খুব এক্সাইটেড সিনগুলো দেখার জন্য। অনেক ধন্যবাদ অনুষ্কা শর্মার প্রযোজনা সংস্থাকে এই সুযোগটা দেওয়ার জন্য।''
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন