Bengali Television: স্টার জলসা-র 'কপালকুণ্ডলা' ধারাবাহিক দিয়ে আবারও টেলিভিশন প্রযোজনায় ফিরলেন রাজ চক্রবর্তী। তাঁর সংস্থা অতীতে বেশ কিছু জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিক প্রযোজনা করেছে। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে সানন্দা টিভি-র সীমিত এপিসোডের থ্রিলার 'প্রলয় আসছে', তেমনই রয়েছে জি বাংলা-র রোম্যান্টিক সোশাল ড্রামা, 'রাগে অনুরাগে'। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় তিনি বাংলা টেলিভিশনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, কখনও পরিচালক হিসেবে আবার কখনও প্রযোজক হিসেবে। বাংলা টেলিভিশন নিয়ে তাঁর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল বিবিধ প্রসঙ্গ--
বিভিন্ন বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের কর্ণধারেরা একাধিকবার বলেছেন যে বাংলায় টেলিভিশনের বাজার এখনও সম্পৃক্ত নয়, এই বাজার আরও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ ভারতে টেলিভিশন মাধ্যমের মার্কেট পেনিট্রেশন বাংলার চেয়ে অনেক বেশি। আপনারও কি সেটা মনে হয়?
অবশ্যই মনে হয় কিন্তু আমাদের মার্কেট আর সাউথের মার্কেট অনেকটাই আলাদা। আমাদের এখানে সাহিত্যধর্মী কিছু করলে মানুষ অনেক বেশি অ্যাপ্রিশিয়েট করে। আমার মনে হয় যে সাউথে একটাই কালচার হয় আর আমাদের এখানে কালচারের অনেক বিভাজন রয়েছে। একটু গ্রামের দিকে চলে যাবেন, তার একটা কালচার, মফসসলের একটা আলাদা কালচার, শহরে আলাদা... মানুষের পছন্দের তারতম্য থাকে। সিনেমার ক্ষেত্রে আমরা সেটা বুঝেছি, তাই সেভাবে ছবি বানাই। কিন্তু টেলিভিশন মানে সবাইকে রিচ করতে হবে। তাই আমাদের জন্য কঠিন কাজ। তাই আমরা চেষ্টা করি এমন একটা কনটেন্ট বেছে নিতে যা সবার ভালো লাগে। যেমন আজকে 'কপালকুণ্ডলা' করছি... গল্পটা এত সিনেম্যাটিক, এত ড্রামাটিক। আমার মনে হয় এটা সব ধরনের মানুষের পছন্দ হবে। এই মার্কেটটা ধরার জন্য এমন একটা বিষয় ভাবতে হবে যে বিষয়টা সবাই পছন্দ করবে। আর বেঙ্গল মার্কেট সবথেকে বড়...
আরও পড়ুন: ‘কপালকুণ্ডলা’-র নবকুমার, শৌনকের সম্পর্কে ৫টি তথ্য
এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের যা ট্রেন্ড সেটা কি ঠিকঠাক মনে হয় আপনার?
হ্যাঁ অবশ্যই ঠিকঠাক। চ্যানেলগুলো ওভাবেই এক্সপ্লোর করছে। নিজেদের রিসার্চ থেকে ওরা প্ল্যান করে সবটা করছে। আমার মনে হয় যেহেতু মার্কেটটা বড়, আর সেখানে দাঁড়িয়ে যে ধরনের কনটেন্ট বানানো দরকার, অডিয়েন্সকে আরও বেশি এনগেজ করার জন্য, সেই ধরনের কনটেন্ট কিন্তু হচ্ছে। 'কপালকুণ্ডলা' করার পিছনে এটা একটা কারণ। আর চ্যানেল কিন্তু অনেক এক্সপেরিমেন্ট করছে। এরা যেমন ডেইলি সোপ করছে আবার পাশাপাশি এপিসোডিকও হচ্ছে। স্টার-এর শো ছিল 'গানের ওপারে', খুবই আরবান একটা সিরিয়াল। তখন হয়তো টিআরপি ছিল না কিন্তু ওই সিরিয়ালটা এখনও বেঁচে আছে। এখানে প্রত্যেকটা বাড়িতে একজন বা দুজন টেলিভিশনের উপর নির্ভরশীল। চ্যানেলগুলো চেষ্টা করছে যাতে সবার ভালো লাগবে, এমন কিছু নিয়ে আসতে।
বাংলা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-র চেয়ে অনেকটাই বড়, যদি বিনিয়োগ ও রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট বিচার করা যায়-- আপনি কি এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত?
নিশ্চয়ই। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড়। এখন বাংলা টেলিভিশনে যে ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে, তার থেকে বাংলা সিনেমায় ইনভেস্টমেন্ট কম।
আর পারিশ্রমিক যদি বিচার করা যায়?
একটা প্রজেক্ট ধরে যদি দেখি তবে টেলিভিশনে একজন যে পারিশ্রমিক পায়, সিনেমায় কিন্তু তা পায় না। টেলিভিশনে যারা কাজ করে তাদের পারিশ্রমিক অনেকটাই বেশি। আমার মনে হয় একজন ফিল্মের ডিরেক্টর সারা বছরে যে টাকা রোজগার করে, তার থেকে একজন টেলিভিশনের ডিরেক্টর অনেক বেশি রোজগার করে। আর্টিস্টদের কথাও যদি ধরি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাই।
তাহলে স্টারডমের প্রসঙ্গ যখন ওঠে, তখন সব সময়েই মানুষ সিনেমার কথা কেন বলেন?
স্টারডম ছিল কিন্তু এখন আর নেই, এখন 'কনটেন্টডম' হয়ে গিয়েছে। এখন স্টার হয়ে গিয়েছে টেলিভিশনের লোকজন। 'কপালকুণ্ডলা' এই ২ ডিসেম্বর লঞ্চ হবে। দেখবে, পরের মাসের ২ তারিখের মধ্যে সৌমি সবচেয়ে বড় স্টার হয়ে গিয়েছে। ওর ডিমান্ড সবচেয়ে বেশি হবে। ওর শো সবচেয়ে বেশি থাকবে। ওকে দেখার জন্য প্রতিদিন একই সময়ে সবাই অপেক্ষা করে থাকবে। ফিল্মের তো স্টার আছে অবশ্যই কিন্তু এই সময় দাঁড়িয়ে, ২০১৯ সালে, কনটেন্ট হল সবচেয়ে বড় স্টার। আর আমার মনে হয় টেলিভিশনে স্টার হওয়াটা ফিল্মের তুলনায় অনেক সহজ।
সহজ??
যদি একটা ভালো শো আসে আর সেই শো-টা যদি ওয়ার্ক করে যায় তবে নায়ক-নায়িকারা একমাসের মধ্যে স্টার হয়ে যায়। সিনেমার ক্ষেত্রে অনেক অনেক সময় দিতে হয় স্টার হয়ে ওঠার জন্য।
আরও পড়ুন: একটু বড় হয়ে গিয়েছি, ম্যাচিওরড হয়ে গিয়েছি: রাজ
হিন্দি টেলিভিশন দর্শকের মধ্যে যতটা প্রভাব ফেলে, আপনার কি মনে হয়, বাংলা টেলিভিশনও তেমন প্রভাব ফেলে এখানকার দর্শকের মধ্যে?
প্রচণ্ড ইমপ্যাক্ট ফেলে, আমার বাড়িতেই ফেলে। আমার বাড়িতে আমার মা টেলিভিশনেরই কথা বলে সারাদিন ধরে। টেলিভিশনে যা যা দেখে, সেইভাবেই জাজ করে আমাদের। আমরা যখন গ্রামের দিকে শুট করতে যাই, এমন প্রচুর মানুষের সঙ্গে আলাপ হয় যারা টেলিভিশনের মতো করেই তাদের জীবনটা দেখে। আমার মা মাঝেমধ্যে নেগেটিভ কথা বলে, পজিটিভ কথা বলে। আমি বলি, কোথা থেকে শিখেছো। বলে, না আমি জানি। তার পরে দেখলাম ওই কথাটা কোনও একটা সিরিয়াল থেকে পেয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষরা তো খুবই টেলিভিশনমুখী। তারা খুবই অ্যাডপ্ট করে। আর ওরা খুব সহজে টেলিভিশনে যা দেখানো হয় সেটা বিশ্বাসও করে।
টেলিভিশনে আপনার কোনও ড্রিম প্রজেক্ট রয়েছে যেটা এখনও হয়নি?
আমার ড্রিম প্রজেক্ট ছিল 'কপালকুণ্ডলা'। আমার ইচ্ছে ছিল যে আমি নিজে শুট করব। আমি যেমন প্রলয় আসছে বানিয়েছিলাম সানন্দা-তে, তেমনই লিমিটেড এপিসোডের একটা প্রজেক্ট করার ইচ্ছে ছিল এই উপন্যাসটা নিয়ে, সেটা আমার একটা স্বপ্ন ছিল। এই উপন্যাসটা এত ভালো, কিন্তু হল না।
কিন্তু 'কপালকুণ্ডলা' তো হচ্ছে, আপনি অন্য ভূমিকায় এলেন...
হ্যাঁ অন্য ভূমিকায় এলাম কিন্তু আমি নিজে ডিরেক্ট করতে চেয়েছিলাম, সেখানে আমি নিজে ক্রিয়েট করতাম, সেটা আর হল না।