Bhaswar Chatterjee: বাংলা বিনোদন জগতে দু'দশক কেটে গিয়েছে অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের। আজকের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতাকেও একটা সময় নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে সময় দিতে হয়েছে। অভিনয় জীবনের সেই প্রথম দিকে, যখন তাঁর নামটা পরিচিত ছিল না টলি ও টেলিপাড়ায়, তখন খুবই সমস্যায় পড়তে হতো তাঁকে। বিরক্ত হয়ে তাই একবার নিজের নাম বদলে একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়।
''কেউ সঠিকভাবে ভাস্বর বলতে পারতেন না, সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাস্কর হয়ে যেত, ভীষণ বিরক্ত লাগত। তাই অনেক ভেবে, একজনের সাজেশন নিয়ে একটা সিরিয়াল করেছিলাম অন্য নামে-- দেবাদিত্য'', পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন অভিনেতা, ''সেই সিরিয়ালটা ছিল সিটিভিএন চ্যানেলের। নাম ছিল বেঁচে ওঠা। কিন্তু বেশিদিন চলেনি, বন্ধ হয়ে গেল সিরিয়ালটা তাই আবার ভাস্বরে ফিরে এলাম। আজ ভাবলে বেশ মজা লাগে।''
আরও পড়ুন: টেলিভিশন একমাত্র মাধ্যম যা সবার জন্য খোলা: বিশ্বজিৎ
কিন্তু হঠাৎ দেবাদিত্য কেন, এই নামটি কেউ রেখেছিলেন কি? প্রশ্ন ছিল অভিনেতার কাছে। ''আমি নিজেই ঠিক করেছিলাম'', বলেন ভাস্বর, ''আসলে ভাস্বর মানে সূর্যের আলো। আর দেবাদিত্য হলো সূর্য। তাই সূর্যের সঙ্গে রিলেটেড কোনও নাম রাখতে চেয়েছিলাম। আর এমন একটা নাম দরকার ছিল যেটা মানুষ ঠিকঠাক উচ্চারণ করতে পারবে।''
অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম সিরিয়াল বিষ্ণু পালচৌধুরীর 'কনকাঞ্জলি'। ১৯৯৮ সালে ওই ধারাবাহিকটি দিয়েই পর্দার অভিনয়ে পা রাখেন তিনি। আর নাম বদলানোর ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০০ সালে। 'কনকাঞ্জলি' অত্যন্ত জনপ্রিয় সিরিয়াল ছিল সেই সময়ে। কিন্তু ওই ধারাবাহিক দিয়ে অভিনয় শুরু করলেও তাঁর জনপ্রিয়তাকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল 'জন্মভূমি'। ইন্দর সেন পরিচালিত ওই ধারাবাহিকে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় ও জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তিন ভাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। বড়ভাই ভাস্বর, মেজভাই সুমন ও ছোটভায়ের চরিত্রে জয়জিৎ।
কিছুদিন আগে সেই ধারাবাহিকের একটি পুরনো ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে অভিনেতা লিখেছিলেন যে আজও তিন অভিনেতা পরস্পরকে বড়, মেজ ও ছোট বলেই সম্বোধন করেন। তবে জন্মভূমি-র পাশাপাশি আরও একটি কাজ তাঁকে বাংলার দর্শকের কাছে অত্যন্ত আদরণীয় করে তুলেছিল-- অজয় দেবগণের 'দ্য লেজেন্ড অফ ভগৎ সিং' ছবিতে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের ভূমিকায় তাঁর অপূর্ব অভিনয়।
প্রথমত সেই সময়ে বাংলা থেকে হাতে গোনা দুএকজন বলিউডে ছবি করতেন। তাই তরুণ অভিনেতাকে বলিউডের সেই সময়ের একটি মেগা-বাজেট ছবিতে দেখতে পাওয়া বাংলার দর্শকের কাছে খুবই আনন্দের বিষয় ছিল। দ্বিতীয়ত, চরিত্রটি ছিল বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের, যিনি কিংবদন্তি হয়ে রয়েছেন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের পার্লামেন্টে বোমা বিস্ফোরণের জন্য। ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তের সেই নির্ভীক পদক্ষেপ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের যাত্রাপথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ছিল। ইতিহাস বলে, ওইদিনই প্রথমবার প্রকাশ্যে 'ইনক্লাব জিন্দাবাদ' স্লোগান দিয়েছিলেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত।
আরও পড়ুন: এক বছরে ১১ বার হায়দরাবাদ যেতে হয়েছিল ভাস্বরকে
এমন একটি ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আনন্দের একজন অভিনেতার কাছে। কিন্তু ওই ছবির পরে বলিউডে নয়, বাংলাতেই কাজ করতে চেয়েছেন তিনি। আর ছোটপর্দা ও বড়পর্দায় তাঁর সাফল্য যত বেড়েছে, ততই টেলি ও টলিপাড়ায় তাঁর নামের উচ্চারণটি সঠিক হয়েছে। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমেই ভাস্বর হয়ে উঠেছেন বাংলা বিনোদন জগতে।