ছবি বানানোটা তাঁর প্যাশন, এখনও পেশা নয়। কিন্তু কখনও পেশা হয়ে উঠবে, এমন আশা রাখেন দিগন্ত দে। এই বছর বুসান আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসবের অন্তর্গত 'প্ল্যাটফর্ম বুসান'-এ ডাক পেয়েছেন দিগন্ত যেখানে প্রদর্শিত হবে সম্পূর্ণ মোবাইল ক্যামেরায় তোলা তাঁর এক্সপেরিমেন্টাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি, 'মনসুন ক্লিপস'।
''প্রথমে কোনও পরিকল্পনা ছিল না সেভাবে। আমি লাস্ট এক-দুবছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় কিছু ফুটেজ শুট করছিলাম। তার পরে মনে হল একটা গল্প লেখা যেতে পারে'', বলেন দিগন্ত, ''দিল্লি, হায়দরাবাদ, কলকাতা ও তাজপুরেই মূলত মোবাইলে শুট করেছি। ছবিটা মোটামুটি হয়ে তৈরি হয়েছে যখন, তখন বুসান স্কলারশিপের জন্য আমি আবেদন করি। আমি আগে কী কী কাজ করেছি তার একটা ডিটেলস চেয়েছিল। আমার আগের চারটি কাজও বিদেশে বেশ কিছু জায়গায় দেখানো হয়েছে। আমি সব পুরনো কাজ আইএমডিবি লিঙ্ক-সহ ওদের পাঠাই। আর নতুন কাজের পরিকল্পনাটা পাঠাতে হয়। তার উপর ভিত্তি করেই ওরা চূড়ান্ত নির্বাচনটা করে থাকে।''
আরও পড়ুন: শুধু ওয়েবক্যামে শুটিং! সৌমন বসু নিয়ে আসছেন অভিনব ওয়েব সিরিজ
দিগন্ত এর আগে আরও চারটি ছবি তৈরি করেছেন যেগুলি বিদেশের বিভিন্ন উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। ২১তম ও ২৩তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর ছবি। এছাড়াও দিগন্তর একটি ছবি, 'খেলনা বাটি' নির্বাচিত হয় ইউনাইটেড নেশনস পিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এ। এই ছবিটি ভারতের প্রথম ইন্ডিপেন্ডেন্ট চাকিম্যাশন ছবি। নীচে দেখে নিতে পারেন ছবিটি এক ঝলকে--
এবছর বুসান চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ৩ থেকে ১২ অক্টোবর। ওই উৎসবেরই অংশ হিসেবে 'প্ল্যাটফর্ম বুসান' বসবে ৫ থেকে ৮ অক্টোবর। এই প্ল্যাটফর্মটি একেবারেই সেই সব স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালকদের জন্য, যাঁরা চলচ্চিত্র মাধ্যমে সম্ভাবনাময়। ওই প্ল্যাটফর্মে আমন্ত্রিত স্বাধীন পরিচালকেরা নানা ধরনের ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও মেন্টরশিপ সেশনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। পাশাপাশি তাঁদের ছবি মূল উৎসবের অন্তর্গত 'এশিয়ান ফিল্ম মার্কেট'-এর বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর ও প্রযোজকদের নজরে আসে। এছাড়া যে সব পরিচালক কখনও 'প্ল্যাটফর্ম বুসান'-এ ডাক পেয়েছেন, বুসান আন্তর্জাতিক উৎসবের ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাঁদের ছবিগুলিকে বিশেষ বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘ভুল ভুলাইয়া টু’-র ফার্স্টলুক শেয়ার করলেন কার্তিক আরিয়ন
'প্ল্যাটফর্ম বুসান'-এ আমন্ত্রিত হওয়ার অর্থ উৎসব কমিটিই বহন করবে বুসানে থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ, শুধু ভারত থেকে বুসানে যাতায়াতের খরচটা নিজের। সেই কারণেই এটি বুসান স্কলারশিপ নামেও অভিহিত হয়। শুধুমাত্র স্বাধীন পরিচালক নয়, বুসান স্কলারশিপের জন্য বেছে নেওয়া হয় স্বাধীন প্রযোজক, সিনেম্যাটোগ্রাফার এবং এডিটরদেরও। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর মোট ২০ জন সম্ভাবনাময় মেকার অথবা টেকনিশিয়ানদের নির্বাচন করা হয়।
কোচবিহারে বড় হয়েছেন দিগন্ত, উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় আসেন। কলেজে পড়ার সময় থেকেই চলচ্চিত্র মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। দেখে নিতে পারেন তাঁর আরও একটি ছবি নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে--
সত্যজিৎ রায়ের ছবি তাঁর প্রিয় বরাবরই। পাশাপাশি জাফর পানাহি ও আব্বাস কায়রোস্তামির ছবির ভক্ত তরুণ এই পরিচালক। শুধুমাত্র ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিচার ছবি নয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডকুমেন্টারি ছবিতেও হাত পাকিয়েছেন। তাঁর তোলা তথ্যচিত্র 'দ্য রোডসাইড সায়েন্টিস্ট' উত্তরবঙ্গের এক ছোট শহরের এক প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে যিনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে সম্মানিত হন। দিগন্ত বর্তমানে কর্মরত হায়দরাবাদের একটি ডিজিটাল অ্যাপ কোম্পানিতে। অদূর ভবিষ্যতে, চলচ্চিত্র মাধ্যমে পুরোপুরি মনোনিবেশ করাই তাঁর ইচ্ছা।