ছবি: ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি
পরিচালক: অরিত্র মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: ঋতাভরী চক্রবর্তী, সোহম মজুমদার, সোমা চক্রবর্তী, মানসী সিংহ, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এবং অম্বরীশ ভট্টাচার্য
রেটিং: ৩/৫
হটি বা হটু বিদ্যালঙ্কার বা রূপমঞ্জরি- সিনেমার শুরুতেই এই নাম চোখে পড়ে এবং ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হবে শবরীমালা, শপিং মলে ব্রেস্ট ফিডিং - এই সমস্ত বিষয়ে এখনও লড়াই করতে হচ্ছে মেয়েদের। তাহলে বিরুদ্ধ পক্ষ কারা? আপনি বলবেন, সমাজ! আর এই সমাজের হিতাহিত, ভাল-মন্দ পুরোটাই তো পুরুষের কুক্ষিগত তাই না। মেয়েরা সমান অধিকারের অসম যুদ্ধে উবের চালক, ট্রাক-বাস ড্রাইভার, ঢাকি কিংবা প্রতিমা শিল্পী হতে পারেন। কিন্তু সেই প্রতিমাকে পুজো করার ক্ষমতা কেন থাকবে মহিলাদের হাতে?
আরও পড়ুন, সাত দশকের নারীকেন্দ্রিক বাংলা ছবি: ফিরে দেখা
না হয় হলেন সে একজন সংস্কৃতের অধ্যাপিকা। কলেজে পড়ানো আর প্রত্যহ শাস্ত্রচর্চা কি এক হল? এখান থেকেই লড়াই শুরু অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের শবরীর। ঘরে-বাইরে নিত্যদিন মানুষের মধ্যে বাস করা অন্ধত্ব থেকে মেয়েদের মুক্ত করে আকাশে অবাধে উড়তে দেওয়ার মন্ত্র যার জানা। শাস্ত্র যেমন 'ছেলেখেলা' নয় ঠিক তেমন 'মেয়েখেলা'-ও নয়, বীর্যবান পুরুষ কিংবা রজস্বলা নারীর একচ্ছত্র আধিপত্যও নয়।
ছবিতে বাতাসীপুরের বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে বিয়ে হয় শবরীর। শাশুড়ি (তিনি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান) বাড়িতে ঢোকার মুখেই বলে, ''তোমার তো কন্যাদান হয়নি। আমার তোমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়াই উচিত নয়। কারণ বিবাহ সম্পন্নই হয়নি।'' শবরী তখন কিছু না বলতে পারলেও ছবি এগোতে থাকলে জানিয়ে দেয় কারণ। কেবলমাত্র গো এবং দুহিতা সম্প্রদানযোগ্য- এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই তো শবরীর সংলাপ 'আমি মানুষের সঙ্গে মানুষের বিয়ে দিই'।
আরও পড়ুন, কিছু অমানুষের জন্য রবীন্দ্রভারতীর বসন্ত উৎসব ঐতিহ্য হারাতে পারে না: নুর
পিরিয়ডের ওই কয়েকদিন ঠাকুরঘরে ঢোকা বারণ, পুজো করা তো বারণই, মন্দিরেও পা রাখা যাবে না, অথচ অম্বাবুচির সময় কী জাঁকজমকে মায়ের পুজো হয়। তাহলে! নারীদেহ কখনও শুচি নয়, তাই মেয়েরা পৌরহিত্য করতে পারবে না! মেয়েদের বেদচর্চা বারণ! আপনার মনেও প্রশ্ন উঠবে কেন? সত্য-অসত্যের উপরে গিয়ে উপলব্ধির পাঠ পড়িয়েছে শবরী, সঙ্গ দিয়েছে বিক্রমাদিত্য।
অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি। আর তাতেই পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছেন চিত্রনাট্য তাঁর কাছে কতটা জরুরি। যুক্তি ও সিনেমাটিক লির্বাটি দুইয়ের মিশ্রণে ভোগটা ভালই তৈরি করেছেন তিনি। সাদামাটা, নির্ঝঞ্ঝাট প্রায় মেদহীন গল্প। ঋতাভরী আরও একটু সাবলীল অভিনয় প্রত্যাশিত ছিল, মাঝে মধ্যে একটু আড়ষ্টই দেখাল আপনাকে। তবে টলিউড কিন্তু এক নতুন মুখ পেতে পারে, তা হল সোহম মজুমদার। ছবির গান সেভাবে ছাপ ফেলতে পারেনি। বেশ কিছু গলদ আর চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে ইচ্ছে করবে না কেবলমাত্র পরিচালকের নিষ্ঠার কারণে। যত্ন নিয়ে ছবিটা বানিয়েছে তিনি।
আরও পড়ুন, ”মেঘ কেটে ঝকঝকে রোদ”, বোম্বাগড়ের গান গাইলেন কবীর সুমন, দেব ও অনিকেত
নারীদিবসের আগে এই ছবি আলাদা করে কোনও দাগ কাটবে কি না জানা নেই। তবে সমাজের সাম্য-অসাম্য, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন, উচিত-অনুচিতের দাঁড়িপাল্লায় একবার মাপা হবে নিশ্চয়ই। শবরীমালা, নির্ভয়াদের- এই 'দেশে ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি' প্রতিটা শবরীর গল্প তো বটেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন