Bengali Television, Rani Rashmoni, Ditipriya Roy: টেলিপাড়ায় কানাঘুষো শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চ-এপ্রিল মাস থেকেই। ওই বছর ২৭ জুলাই থেকে জি বাংলা-তে সম্প্রচার শুরু হয় 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি' ধারাবাহিকের। প্রায় দু'বছরের যাত্রা সম্পূর্ণ করল এই ধারাবাহিক। সম্প্রতি সম্প্রচার হয়েছে ধারাবাহিকের ৭০০ তম এপিসোড। বাংলা টেলিভিশনে নতুন মাইলস্টোন তৈরি করে দিয়েছিল এই ধারাবাহিক। ইদানীং টিআরপি-র দৌড়ে সামান্য পিছিয়ে পড়লেও এই ধারাবাহিক কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বাংলা টেলিভিশনের সবচেয়ে সফল ধারাবাহিকগুলির একটি।
৭০০ এপিসোড পূর্তিতে একবার ফিরে দেখা যাক সেই ৪টি কারণ, যা 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি'-কে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্য়ের শিখরে--
দিতিপ্রিয়া এবং দিতিপ্রিয়া
নতুন করে এই কথা বলাই বাহুল্য। কারণ দর্শক থেকে চ্য়ানেল কর্তৃপক্ষ, ধারাবাহিকের কলাকুশলী থেকে টেলিভিশন ট্রেড অ্য়ানালিস্ট সবাই জানেন, এই ধারাবাহিকের সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ রাসমণির ভূমিকায় দিতিপ্রিয়া রায়। প্রাথমিকভাবে কথা ছিল রানির ছোটবেলার অভিনয়টি করবেন দিতিপ্রিয়া ও বড়বেলার চরিত্রে দেখা যাবে অন্য় অভিনেত্রীকে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তাও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিতিপ্রিয়াকেই ওই চরিত্রে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নির্মাতারা। এমনটা আশঙ্কা ছিল তাঁদের যে দিতিপ্রিয়ার পরিবর্তে অন্য় কোনও অভিনেত্রীকে ওই চরিত্রে দর্শক মেনে নাও নিতে পারেন। সেই সময় টিআরপি তালিকার শীর্ষে রয়েছে 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি'। তাই আর কোনও ঝুঁকি না নিয়ে দিতিপ্রিয়ার উপরেই চরিত্রটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়ে। এর আগে বাংলা টেলিপর্দায় আর কোনও নাবালিকা অভিনেত্রীকে তিরিশ বছরের মায়ের চরিত্রে এত সফলভাবে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। রানির চরিত্রে দিতিপ্রিয়া রায় নিঃসন্দেহে একটি ফেনোমেনন।
আরও পড়ুন: রোবট-জীবনসঙ্গী হলে ঠিক কেমন হয়? জানালেন পর্দার রোবট-নায়িকা তৃণা
গবেষণা ও চিত্রনাট্য
অতুলনীয় গবেষণা এবং অত্যন্ত ভাল মানের চিত্রনাট্যই সাফল্য়ের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি'-কে। শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের গবেষণা-কাহিনি সৃজন ও শাশ্বতী ঘোষের চিত্রনাট্য এই ধারাবাহিকের মেরুদণ্ড। দু’দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিত্রনাট্যকার শাশ্বতী ঘোষ। ‘বেহুলা’, ‘এক নম্বর মেসবাড়ি’, ‘এসো মা লক্ষ্মী’, ‘মা দুর্গা’, ‘বধূ কোন আলো লাগল চোখে’ ইত্যাদি জনপ্রিয় ধারাবাহিক তাঁরই লেখা। আবার বাংলা টেলিভিশনের গবেষণাসমৃদ্ধ ধারাবাহিক মানেই নির্মাতারা শরণাপন্ন হন শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। এঁদের যুগলবন্দিই রাসমণির সাফল্য়ের অন্য়তম কারণ।
শিল্প নির্দেশনা ও সাজসজ্জা
একটি পিরিয়ড ধারাবাহিকের শিল্প নির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি' ধারাবাহিকে, জানবাজারের রাজবাড়ির বিলাসবহুল অন্দর থেকে শুরু করে রাসমণির বাপের বাড়ির উঠোনকে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল পোশাক পরিকল্পনা। এই দু'টি বিষয় যত নান্দনিক হবে, ততই দর্শকের পক্ষে ধারাবাহিক দেখার অভিজ্ঞতাটি অত্য়ন্তু সুখের হবে। এই ধারাবাহিক টানা দুবছর ধরে দর্শক যে দেখছেন, তার অন্য়তম কারণ অবশ্য়ই ধারাবাহিকের সেট ডিজাইন ও পোশাক পরিকল্পনা। প্রথমটির দায়িত্বে জয় চন্দ্র চন্দ্র ও দ্বিতীয়টির দায়িত্বে সাবর্ণী দাস।
আরও পড়ুন: সেদিন ‘শ্রাবন্তীদি’র কাছে যেতে দেয়নি! ৮ বছর পরে ইচ্ছাপূরণ সায়কের
অভিনয়
বাংলা ধারাবাহিকের গুণমান নিয়ে দর্শকের অনেক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রথম থেকেই ব্যতিক্রম ছিল এই ধারাবাহিক। তেমনই ভাল ছিল এই ধারাবাহিকের কাস্টিং। যতটা ভাল দিতিপ্রিয়া, ততটাই ভাল ছিলেন গাজি আবদুন নুর, বাবু রাজচন্দ্র দাসের চরিত্রে। আর ঠিক ততটাই ভাল মথুরের ভূমিকায় গৌরব চট্টোপাধ্য়ায়, জামাইয়ের ভূমিকায় চন্দ্রনীভ মুখোপাধ্য়ায় এবং রাসমণির তিন মেয়ের ভূমিকায় ঐন্দ্রিলা সাহা, সম্পূর্ণা মণ্ডল ও দিয়া চক্রবর্তী। সম্প্রতি জগদম্বার চরিত্রে মুখ বদলে গিয়েছে অবশ্য়। দিতিপ্রিয়ার অভিনয় যদি দাঁড়িপাল্লার একদিকে থেকে থাকে, তবে অন্য়দিক রয়েছে বাকি চরিত্রগুলির সম্মিলিত অবদান। তবেই একটি সফল ও সুন্দর ধারাবাহিক পেয়েছেন দর্শক।