Advertisment

স্বামীকে কেন বিচিত্র নামে ডাকে সিরিয়ালের বউমা?

Bengali Television, Bengali Serial: বাংলা ধারাবাহিক দেখতে বসলে ভারি বিচিত্র কিছু সম্বোধন শোনা যায়। কিন্তু কেন এত বিচিত্র সম্বোধন না হলে কি মানুষের মন জয় করা যায় না?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bengali serial wives call husbands in funny nicknames

'কৃষ্ণকলি' ধারাবাহিকের একটি দৃশ্য়। ছবি: ফ্য়ানপেজ থেকে

Bengali Television, Bengali Serial: বাংলা ধারাবাহিকের মান নিয়ে নানা মুনির নানা মত। সে সব বাদ রেখে একটা ছোট্ট বিষয়ে নিয়ে আলোচনাই এই লেখার উদ্দেশ্য, তা হল ধারাবাহিকের সম্বোধন। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই বিচিত্র সম্বোধনগুলি কানে আসছে এবং কানে লাগছেও। সব দর্শকের কানে লাগছে কি না তা অবশ্য় জানি না। কিন্তু বছর কুড়ি বয়সের কোনও গৃহবধূ যদি স্বামীকে খুব সিরিয়াসলি 'গোমড়ামুখো' বলে সম্বোধন করে তবে সেটা বুকফাটা হাসি ছাড়া আর কী-ই বা দিতে পারে। এই ট্রেন্ড সমানে চলছে। সাম্প্রতিক হিট সম্বোধন হল 'ছোটকর্তা', যা 'কৃষ্ণকলি' ধারাবাহিকে শ্য়ামা বলে থাকে তার স্বামীকে। প্রশ্ন হল, কেন?

Advertisment

মেয়েদের নাকি স্বামীর নাম মুখে আনতে নেই। শুধু স্বামী নয়, শ্বশুর-ভাশুরের নামও মুখে আনতে নেই, অমন করলে তাঁদের নাকি আয়ুক্ষয় হয়। এটি একটি কুসংস্কার যা মিলেনিয়াম পেরিয়েও বাঙালি বা ভারতীয়দের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে একটা চালু জোক রয়েছে বাংলায়। এই নাম মুখে না আনার জন্য যে কী ফাঁপরে পড়তে হয়েছিল এক ধর্মপ্রাণ মহিলাকে, সেই নিয়েই গল্প!

বর্ষীয়ান কাকিমা-জেঠিমাদের সঙ্গে যাঁদের একটু বেশি গল্পগাছা করা অভ্যাস, তাঁরা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন। ভদ্রমহিলার স্বামীর নাম হরিধন ও ভাশুরের নাম কৃষ্ণপদ। স্বামীকে তো আপনি, আজ্ঞে, ভাববাচ্যে ডেকে চালিয়ে দেন তিনি আর ভাশুরকে বটঠাকুর (বড়ঠাকুর) বলে ডাকলেই চলে।

আরও পড়ুন: তিরিশ পেরোলেন সুবান, স্বামীকে সারপ্রাইজ ফিরিয়ে দিলেন তিয়াসা

কিন্তু সমস্য়া হয় ঠাকুর মানে ভগবানের নাম করতে বসে। জপমন্ত্র হল-- 'হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ, হরে হরে, হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে'। কী বিপদ, জপমন্ত্র জুড়ে যে শুধু তাঁর স্বামী ও ভাশুরের নাম। তাহলে জপ হবে কী করে? ওদিকে তিনি ধর্মপ্রাণ, জপ না করে তিনি জল খাবেন না। বাধ্য় হয়ে তাঁকে নতুন করে বাঁধতে হল জপমন্ত্র। ব্য়াপারটা দাঁড়াল এই-- 'উনি বটঠাকুর, উনি বটঠাকুর, বটঠাকুর বটঠাকুর, উনি উনি/ উনি রাম, উনি রাম, রাম রাম উনি উনি।''

Bengali serial wives call husbands in funny nicknames 'রাধা' ধারাবাহিকের জুটি এমিলা ও রবি। ছবি: ফ্য়ানপেজ থেকে

আজীবন এইভাবেই তিনি ঠাকুরের নাম জপ করে বাঙালি গেরস্থ বধূর স্বামীর নাম মুখে না আনার ট্য়াবুটি লালন করে গেলেন। বাংলা ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যকার-পরিচালক-প্রযোজক এবং চ্য়ানেল কর্তৃপক্ষ প্রকারান্তরে সেই কুসংস্কারকেই তোল্লাই দিয়ে চলেছেন। তাই 'গোমড়ামুখো', 'বাজে ডাক্তার', 'শহরের বাবু', 'ছোটকর্তা' এমন সম্বোধনের আবির্ভাব। 'কে আপন কে পর'-এর জবা বরং এই দিক থেকে এগিয়ে। সেই প্রথম দিকে ছোড়দাবাবু বলে ডাকা অভ্য়াস ছিল তার। কারণ আগে তো ছিল সে ওই বাড়ির কাজের মেয়ে। পরে কিন্তু সেই বদভ্যাস ত্যাগ করেছে।

আরও পড়ুন: ‘জয়ী’-কে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে আগামী মাসেই ‘সাঁঝের বাতি’

কিন্তু রাধা সেই যে মজা করে গোমড়ামুখো বলা শুরু করেছিল, শোকে-দুঃখে, ক্রাইসিসে, অত্য়ন্ত সিরিয়াস দৃশ্যগুলিতেও সে ওই নামেই ডেকেছে স্বামীকে। 'কৃষ্ণকলি'-র শ্য়ামা কোনও দিন ছোটকর্তা ডাকটা ত্য়াগ করবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না!

এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বাংলা ধারাবাহিকের এক সংলাপ-রচয়িতা জানালেন, ''বাংলা ধারাবাহিক বেশি দেখেন কিন্তু শহরের বাইরের মানুষ। আর সেখানে টিভি দেখা হয় সবাই মিলে, এমন নয় যে শহরের নিউক্লিয়ার ফ্য়ামিলির মতো, ফ্ল্যাটের বেডরুমের টিভিতে স্বামী-স্ত্রী দেখছেন। সেখানে একটা গোটা পরিবার, কখনও কখনও পাড়া-প্রতিবেশীরা একসঙ্গে টিভি দেখার চল। বাংলার একটু ভিতরের গ্রাম বা গঞ্জগুলোতে কিন্তু এখনও পরিবারের মধ্যে এই স্বামী বা ভাশুর-শ্বশুরের নাম মুখে না আনার ব্য়াপারটা রয়েছে। সেখানে যদি র্পদার নায়িকা বার বার ভাশুর বা স্বামীর নাম বলে, তবে পরিবারের বড়রা দুম করে টিভি বন্ধ করে বলতেই পারেন, সিরিয়ালে খারাপ জিনিস শেখানো হচ্ছে। আবার ঠিক সেই কারণেই দেখবেন গ্রামের মেয়ের শহরের বাড়িতে বিয়ে হয়েছে, এই জাতীয় গল্পগুলো দর্শক বেশি দেখতে পছন্দ করেন।''

অর্থাৎ মোদ্দা ব্য়াপারটা দাঁড়াল এই যে সিরিয়ালের স্বামীদের বিচিত্র নাম থাকবে, কারণ তা হল এক ধরনের কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি! অবশ্য় ব্যাপারটা বেশ আমোদ দেয়, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই নিয়মিত লাফটার ডোজ হিসেবেই এই ট্রেন্ডটি থাকুক না হয়। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পরে একটু তো বিনোদন প্রয়োজন!

Bengali Serial Bengali Television
Advertisment