বাংলা থিয়েটারের এই সময়ের তারকা অভিনেত্রী অঙ্কিতা মাঝি এলেন স্টার জলসা-র ধারাবাহিক দুর্গা দুর্গেশ্বরী-র খলনায়িকা উজ্জ্বয়িনী চরিত্রে। 'রাজা লিয়র', 'দেবী সর্পমস্তা' থেকে 'অদ্য শেষ রজনী'-- বাংলা থিয়েটারে বিগত ৯ বছরে একের পর এক সফল প্রযোজনায় তাঁর অভিনয় নতুন প্রজন্মের বহু দর্শককে নতুন করে থিয়েটারমুখী করে তুলেছে। বড়পর্দা ও ছোটপর্দাতে বেশ কিছু কাজও করেছেন ইতিমধ্যে। কিন্তু লার্জার দ্য়ান লাইফ খলনায়িকা উজ্জ্বয়িনীর চরিত্র দিয়ে টেলিভিশনে তাঁর এক নতুন যাত্রা শুরু হল। সেই প্রসঙ্গেই আলাপচারিতা জমে উঠল শ্যুটিংয়ের ফাঁকে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে।
এই যে উজ্জ্বয়িনীর এমন একটা সাজপোশাক, তার সঙ্গে জ্বালাময়ী সংলাপ-- এগুলো বলতে বলতে নিজের মধ্যে কিছু কি হয়?
যখন আমি কস্টিউমটা পরে আয়নার সামনে দাঁড়াই, তখনই মনে হয় চরিত্রটা পাল্টে গেল।
সেই ট্রানজিশনে কি অস্বস্তি হয়?
না একটা পাওয়ার কাজ করে যে আমি সাধারণ মানুষ নই। উজ্জ্বয়িনী চরিত্রটা তো খুব পাওয়ারফুল, সেই পাওয়ারটা কোথাও একটা ফিল করি।
আরও পড়ুন: ‘দিদার জন্যই আজ আমি এখানে’, সুপ্রিয়া দেবীকেই পুরস্কার উৎসর্গ শনের
তুমি কি টেলিভিশন দেখতে?
সাম্প্রতিক কালে একদমই নয়। সেই 'এক আকাশের নীচে', 'স্বাভিমান', ওগুলো দেখেছি। শনি-রবিবার করে একটা প্রেমের গল্পের সিরিজ হতো-- 'শুধু তোমারই জন্য'। তার পরে তো সময়ই আর হয়নি।
টেলিভিশন তো সম্পূর্ণ একটা অন্য মাধ্যম, তোমার কি একটু অসুবিধে হচ্ছে?
অসুবিধে ঠিক নয়। অভিনয়ের তো অনেক রকম ফর্ম হয়, যাত্রা, নাটক বা সিনেমা, প্রত্যেকটাই আলাদা ফর্ম। অভিনেতাদের আমার মনে হয় সবকিছুই এক্সপেরিয়েন্স করতে করতে যাওয়া উচিত। প্রত্যেকটা ফর্মই তোমাকে অভিনেতা হিসেবে অন্য কিছু একটা দেয়, আমি ভালো-খারাপের কথা বলছি না, নতুন একটা কিছু দেয়, সেটা খুব প্রয়োজনীয়।
মঞ্চের একটি চরিত্রের তুলনায় সিরিয়ালের চরিত্র অনেক বেশি একমাত্রিক, এমনটা মনে হচ্ছে কি কাজ করতে গিয়ে?
এখানে তো এমন নয় যে পুরো স্ক্রিপ্ট আমি পেয়ে গেছি। পুরোটা কী হতে চলেছে বা হবে সেটা চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক জানেন। থিয়েটারে তো দীর্ঘদিন ধরে রিহার্সাল করে করে একটা চরিত্রকে বসানো হয়। আর এখানে ঘটনাগুলো পাল্টাতে পাল্টাতে যায়। চরিত্রের মূল ভাবনাটা আমি জানি কিন্তু এর পরে কোন পরিস্থিতিতে সে কী করবে সেটা কিন্তু জানা থাকে না। তাই অনেক সময় মনে হয়, চারদিন আগে যেটা করেছিলাম, সেটা আর একটু অন্য রকম করলে হয়তো আর একটু ভালো থাকে না। কিন্তু তখন আর অপশন থাকে না যে পরের শো-তে করে দেব।
সেজন্য একটু কঠিন?
হ্যাঁ একটু অন্য রকম। এটা অনেকটাই বেশি ডিরেক্টরস মিডিয়া। কারণ তিনি পুরোটা দেখতে পাচ্ছেন, আমি শুধু আমার চরিত্রটা দেখতে পাচ্ছি। আমি একটা বেস ধরে রাখছি। কিন্তু প্রতিদিনই একটা নতুন চ্যালেঞ্জ, আজকে একটা নতুন কিছু হবে। তার জন্য আমরাও এক্সাইটেড থাকি যে অভিনয়ে নতুন কী এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। এই মাধ্যমটা অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত।
আরও পড়ুন: ‘সেরা জুটি’ শ্যামা-নিখিল তৈরি হল কীভাবে, রইল নেপথ্যকাহিনি
মিনার্ভা রেপার্টরি-র রাজা লিয়র অথবা দেবী সর্পমস্তা-র আগে তোমার অভিনেত্রী হয়ে ওঠার গল্পটা একটু বলো।
বাবা তো গণনাট্য সঙ্ঘ করতেন। বাবাকে দেখতে দেখতেই মঞ্চের প্রতি আগ্রহটা তৈরি হয়। কিন্তু প্রথমে আমি একদমই সিরিয়াসলি নিইনি বিষয়টা। বাবা তো উপার্জন করতেন না থিয়েটার করে। তিনি চাকরি করতেন, তার পাশাপাশি ছিল থিয়েটার। উচ্চমাধ্যমিকের পরে বাবা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। মা-ও একটা ফর্ম এনেছিল আশুতোষ কলেজের ইংলিশ অনার্সের। কিন্তু আমার জোড়াসাঁকো-তে গিয়ে খুব ভালো লেগেছিল। সবাই নিজের মতো নাচছে, গাইছে, কেউ নিজের মনে সংলাপ বলছে। কোনও সুস্থ লোক বাইরে থেকে গেলে বলবে এরা কি পাগল? আমার ওই ব্যাপারটাই ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। ওভাবেই শুরু, তার পরে তো ইউনিভার্সিটি সিনিয়রদের সঙ্গে কাজ করা। আমি অদ্রিজা দাশগুপ্তের সঙ্গে থিয়েটার করতাম। তার পরে ওখান থেকে ২০০৯ সালে কানহাইয়ালালজি এলেন মণিপুর থেকে, একটা ৬ মাসের ওয়ার্কশপ করতে। সেখান থেকে রেপার্টরি চালু হল। তার পরে তো অভিনয় চলছে।
এখন তো নিশ্চয়ই আর থিয়েটারটা করতে পারবে না, মঞ্চকে মিস করছ?
না না একেবারেই তা নয়। এই তো 'অদ্য শেষ রজনী'-র শো হয়ে গেল। আমি কথা বলে নিয়েছি এই ব্যাপারে। হয়তো নতুন কোনও প্রোডাকশন করতে পারব না। কিন্তু পুরনো নাটকের শো থাকলে, সেগুলো করব। যদি দেখি রাত্তিরে সময় আছে, তাহলে রাতেও থিয়েটার করতেও পারি। এখান থেকে সাড়ে নটায় প্যাক আপ হওয়ার পরে রাত্তিরে গিয়ে... আসলে থিয়েটারটা না একটা অন্য ব্যাপার।