বিনোদন জগতে সারা বছর সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততা থাকে টেলি-তারকাদের। যাঁরা যাত্রাশিল্পী, তাঁদেরও প্রায় ৬ মাস বিভিন্ন জায়গায় যাত্রা করতে হয় ঠিকই, কিন্তু ধারাবাহিকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাজ চলে বছরভর। যদি মুখ্য চরিত্র হয়, তবে ছুটি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় হাতে গোনা। সাম্প্রতিক করোনাভাইস শাটডাউনে শুটিং বন্ধ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। যদিও একটি এমার্জেন্সি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সময়, তবুও এর মধ্যেও কিঞ্চিৎ খুশির আবহ টেলি-তারকাদের পরিবারে। কারণ তাঁরা খুব কম সময় থাকতে পারেন বাড়িতে।
রিজওয়ান রব্বানি শেখ, ঊষসী রায়, তিয়াসা রায়, গৌরব রায়চৌধুরী ও জিতু কমল জানালেন তাঁরা পুরোপুরি পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাচ্ছেন। এই গৃহবন্দী দশায় তাই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন অভিভাবকেরা, বিশেষ করে মায়েরা।
আরও পড়ুন: ‘ঘরবন্দি’! কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন নুসরত জাহান?
''আমরা তো এত বেশি ছুটি পাই না। আর যদিও বা ছুটি পাই, কোনও না কোনও বন্ধুদের সঙ্গে প্ল্যান করে বাইরে বেরিয়ে যাই। এখন তো কোথাও বেরোতে পারছি না, মা যে কী খুশি হয়েছে কী বলব'', বলেন ঊষসী, ''সব সময় আমাকে চোখে চোখে রাখতে পারছে। জি বাংলা-র আসন্ন ধারাবাহিক, ডক্টর কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের বায়োপিকে নামভূমিকায় অভিনয় করছেন ঊষসী। এই মাস থেকেই শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল ধারাবাহিকের যা পিছিয়ে গিয়েছে। তাই এই হঠাৎ পাওয়া ছুটিতে বাড়িতে বসে প্রচুর সিনেমা ও সিরিজ দেখছেন অভিনেত্রী।
আর প্রচুর রান্নাবান্না নিয়ে মেতে রয়েছেন 'কৃষ্ণকলি'-নায়িকা তিয়াসা রায়। তাঁর স্বামী সুবান রায়ও অভিনেতা। দুজনেই মহাব্যস্ত। শুটিং সামলে তাই ভালমন্দ রেঁধে খাওয়ানোর সুযোগ পান না খুব একটা তিয়াসা। কিন্তু হঠাৎ গৃহবন্দি দশায় এখন নানা পদের আবদার সামলাচ্ছেন অভিনেত্রী। ''আমি খুব রান্না করতে ভালবাসি, এখন রোজই কিছু না কিছু স্পেশাল রান্না হচ্ছে। একটা লম্বা লিস্ট হয়ে গেছে বাড়ির সকলের। যার যেটা খেতে ভাল লাগে, সেই সব কবে কোনটা রান্না হবে একটা শিডিউল করে ফেলেছি'', হাসতে হাসতে জানান তিয়াসা, ''আর সুবান তো আমাকে এখনও ছোট বাচ্চার মতো দেখে। আমি ঠিক মতো হাত ধুচ্ছি কি না, সেই নিয়ে ওর টেনশন থাকত। এখন সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে পারছে। তাই সে খুব নিশ্চিন্ত।''
আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে সৃজিত-প্রসেনজিৎ
গৌরব রায়চৌধুরী সদ্য প্রকাশ্যে এনেছেন শ্রীমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি। এই গৃহবন্দি দশার মধ্যেও তিনিও বেশ চোখে চোখেই রাখছেন প্রেমিকাকে। শুটিং বন্ধ ও করোনা শাটডাউনের মধ্যে কেমন চলছে প্রেম? ''দুজনে মাস্ক পরেই দেখাসাক্ষাৎ সারছি। মাস্ক পরে তাকে নিয়ে আসছি বাড়িতে। মা, আমি আর সে, তিনজনে খানিকটা গল্প করছি। আবার মাস্ক পরেই তাকে রেখে আসছি তার বাড়িতে। মায়ের সঙ্গে আর তার সঙ্গেই সময় কাটাচ্ছি। এই আর কী'', বলেন গৌরব।
আর এক বিবাহিত দম্পতি জিতু কমল ও নবনীতা দাস কলকাতা থেকে সদ্য গিয়েছেন সোদপুর। কয়েকটা দিন বাবা-মায়ের কাছে থাকবেন জিতু। 'মহাপীঠ তারাপীঠ'-এর 'তারা মা' চরিত্রের অভিনেত্রী নবনীতা শুটিংয়ের চাপে খুব কমই এসে থাকতে পারেন আসল শ্বশুরবাড়িতে। দক্ষিণ কলকাতায় দম্পতির ফ্ল্যাটেই থাকতে হয় কাজের সুবিধার্থে। তবে এই পরিস্থিতিতে বাবা-মায়ের কাছে থাকতে পারছেন বলেই যে খুব খুশি জিতু, তা একেবারেই নয়। ''সব ঠিক আছে কিন্তু বিষয়টা খুবই আশঙ্কার। এমন নয় যে খুব এনজয় করছি। আমরা তো প্রথম থেকেই মাস্ক-স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি কিন্তু সবাই কি তা করছেন। সবাইকে খুব সতর্ক থাকতে হবে, রোগ প্রতিরোধ করার জন্য যা যা করতে বলা হচ্ছে, সেগুলো সব মেনে চলতে হবে। আগামী সপ্তাহে বিপদ বাড়তে পারে। এটা ঠিক যে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা হয় না, এখন থাকতে পারছি কিন্তু সব মিলিয়ে খুব আনন্দের সময় তো এটা নয়'', বলেন জিতু।
আরও পড়ুন: নতুন বাংলা বছরে আসছে ‘তানসেনের তানপুরা’
ওদিকে রিজওয়ান রব্বানি শেখ সিনেমা দেখা, বই পড়ার পাশাপাশি ছবিও আঁকছেন। বাড়ির সব সদস্যরা ঠিকমতো স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন কি না, সেদিকে নজর রাখছেন। এমনিতে সারা বছর নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে চলেন রিজওয়ান। কিন্তু এখন টানা ১৪ দিনের বিরতিতে সেই ডায়েট মুলতুবি রয়েছে। ''মা এখন খুব আনন্দ করে বিরিয়ানি-পোলাও রান্না করছে। আমি তো বাড়িতে থাকি না, খুব একটা খাইও না এই খাবারগুলো। মা তাই বেশ খুশি'', বলেন রিজওয়ান, ''আমি পুরোপুরি নিজেকে কোয়ারান্টাইনড রাখছি। বন্ধুবান্ধবরা অনেকে আসতে চাইছে বা বাইরে দেখা করতে বলছে। আমি মাস্ক পরেও বাইরে দেখা করতে চাইছি না। যা গল্প করার, সব ভিডিও চ্যাটে অথবা এমনি ফোনে। বাবা যদিও বেরিয়েছে লাস্ট কয়েকদিন, বারণ করেছি, শোনেনি। বাবা আজ বাড়ি ফিরলেই বাবাকে আমি কোয়ারান্টাইন করে দেব।''
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন