মঙ্গলবার ১২ মে একদিকে যখন আংশিকভাবে কাজ শুরু করার অনুমতি এল বাংলা বিনোদন জগতে, তখনই আবার অন্যদিকে একটি দুঃসংবাদ নিয়ে দিনভর চর্চা চলল টেলিপাড়ায়। এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও, টেলিপাড়ার একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, লকডাউন-পরবর্তী আর্থিক ক্ষতির জেরে, পুরোপুরি বন্ধ হতে চলেছে চারটি ধারাবাহিক। শুধু তাই নয়, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে কমতে পারে টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন-বাবদ আয়, যার প্রভাব এসে পড়বে প্রযোজক থেকে স্টুডিও মালিক, সবার উপরেই।
১৮ মার্চ যখন প্রথম শুটিং বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখনও গোটা টেলিজগত আশায় ছিল যে বিষয়টা কয়েক দিনের। কিন্তু যত সময় এগিয়েছে, ততই সংকট বেড়েছে, লকডাউনের মেয়াদও বেড়েছে। প্রায় এক মাস ধরেই শিল্পী-টেকনিসিয়ানরা নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সিনেমা-সিরিয়ালের এডিটিং-ডাবিংয়ের কাজ শুরুর অনুমতি বাংলায়
টেলিপাড়ার একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, সেই আশঙ্কাগুলির অনেক কিছুই সত্যি হতে চলেছে। একটি বিনোদন চ্যানেলের চারটি চলতি ধারাবাহিক আর সম্প্রচার হবে না, এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে চ্যানেলের পক্ষ থেকে। ১২ মে সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিকগুলির প্রযোজকদের বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবেও তা জানানো হবে, এমনটাই শোনা গিয়েছে।
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে যে বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বিনোদন জগৎ তা অনেক দিন আগে থেকেই আলোচিত। কিন্তু ঠিক কতটা বড় আকারে বিপদ আসতে চলেছে তা পুরোটাও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব ছিল না মার্চ মাসের শেষে অথবা এপ্রিলের গোড়ায়। বর্তমানে প্রত্যেকটি বাংলা বিনোদন চ্যানেলের বিজ্ঞাপন-জনিত আয় কমে গিয়েছে। আগামী কয়েক মাস পরিস্থিতি এমনই থাকার সম্ভাবনা। তাই সব চ্যানেলের পক্ষ থেকেই চলতি ধারাবাহিকের বাজেট কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লকডাউনে হটস্পট বসিরহাটে শুটিং! বিক্ষোভের মুখে কলাকুশলীরা
কিন্তু চ্যানেল যদি প্রযোজনার বাজেট কমিয়ে দেয়, তবে প্রযোজকরা বড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। স্টুডিওর ভাড়া, শিল্পী-কলাকুশলীদের পারিশ্রমিক ইত্যাদি যদি একই থাকে অথচ চ্যানেল ধারাবাহিকের বাজেট কমিয়ে দেওয়া হয় তবে প্রযোজকদের লোকসান দিনে দিনে বাড়বে। সেই কারণেই কিছু ধারাবাহিক বন্ধ হতে পারে, এমন আলাপ-আলোচনা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল টেলিপাড়ার অন্দরে। এরই মধ্যে একটি বিশেষ চ্যানেল তাদের চলতি চারটি ধারাবাহিক পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল।
এই সিদ্ধান্তের কথা টেলিজগতে ছড়িয়ে পড়তেই টেলিপাড়ার অন্দরে আশঙ্কার ছায়া আর একটু বাড়ল। বাকি চ্যানেলগুলিও তাদের চলতি ধারাবাহিকগুলির বাজেট কমানো নিয়ে প্রযোজকদের সঙ্গে আলোচনা করছে বলেই জানা গিয়েছে। যদি কম বাজেটে চলতি ধারাবাহিকগুলি চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তবে দুটি বিষয় জরুরি। প্রথমত, শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের পারিশ্রমিক কমাতে হবে, ফ্লোরের ভাড়া, সাপ্লায়ারদের ভাড়া, সবটাই কমাতে হবে, তবেই প্রযোজকরা পরিবর্তিত বাজেটে শুটিং করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, সংক্রমণ এড়াতে প্পুরোপুরি নতুন ফরম্যাটে শুটিং করার কথা ভাবতে হবে প্রযোজকদের। একটি সিনে খুব বেশি সংখ্যক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের রাখা যাবে না, ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রাখা যাবে না, এমনভাবেই চিত্রনাট্য লিখতে হবে।
আরও প়ডুন লকডাউনে হটস্পট বসিরহাটে শুটিং! বিক্ষোভের মুখে কলাকুশলীরা
প্রযোজকদের সংগঠনের চেয়ারপার্সন শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে বলেন, ''যদি রেভিনিউয়ের কারণেই চ্যানেল বাজেট কমায়, তাহলে টেলিজগতের পুরো ইকোসিস্টেম জুড়েই সেই কস্ট কমাতে হবে, চাপটা ভাগ করে নিতে হবে।'' অর্থাৎ প্রযোজনার প্রত্যএক ডিপার্টমেন্টকেই কস্ট কমাতে হবে। আর যদি তেমনটা না ঘটে, তবে আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়ে শুটিং চালিয়ে যেতে উৎসাহী হবেন না প্রযোজকরা এবং আরও বেশ কিছু চলতি ধারাবাহিক বন্ধ হবে। যে প্রজেক্টগুলি পাইপলাইনে ছিল, সেগুলিও সমস্যায় পড়বে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন