বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস, এপার বাংলায়ও তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচিতি। ছবির শুটিংয়ের কাজে অনবরত ঢাকা-কলকাতা যাতায়াত করতেই থাকেন তিনি। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু গোল বাঁধল অভিনেতার নির্বাচনী প্রচারে অংশ হওয়া নিয়ে। কাঁটাতারের ভেদাভেদ মুছে দর্শকদের মন জয় করা অভিনেতাই এবার বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের উৎসবে 'প্রচার করে' রীতিমতো বিপাকে। এতটাই, যে তাঁর ভিসা বাতিল করে দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
পত্রপাঠ বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছেন অভিনেতা। সে না হয় হল, কিন্তু এখানে ছবির কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে 'দত্তা' ছবির শুটিং করতেই শেষবার কলকাতায় এসেছিলেন ফেরদৌস। বোলপুরে ছবির ২০ শতাংশ শুটিং হয়েও গিয়েছে। এখনও পুরো ইনডোর শুটিং বাকি। এমতাবস্থায় রায়গঞ্জে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগরওয়ালের হয়ে প্রচারে গিয়েই গন্ডগোল বাঁধালেন তিনি।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের হয়ে প্রচারের অভিযোগ: বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌসের ভিসা বাতিল
এদিন ছবির পরিচালক নির্মল চক্রবর্তী বলেন, "আমার ছবির প্রায় ৮০ শতাংশ ইনডোরের কাজ বাকি। জুনে আবার শুটিং শুরু করার প্ল্যান আছে। আশা করছি ততদিনে সবটা মিটে যাবে। প্রায় ২০ বছর ধরে ফেরদৌস কলকাতায় আসছে, কাজ করছে। একটা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছে, তার জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেছে। মনে হচ্ছে ঠিক হয়ে যাবে।"
বাংলাদেশ পৌঁছে লিখিতভাবে নিজের বিবৃতি দিয়েছেন ফেরদৌস। একাংশে তিনি লিখেছেন, "ভারতে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের এই নির্বাচন পূর্বের মতো সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছে। এই সময়ে আমি ভারতে অবস্থান করছিলাম। সকলের মতো আমারও আগ্রহের জায়গায় ছিল এই নির্বাচন। ফলে ভাবাবাগে তাড়িত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের একটি নির্বাচনী প্রচারণায় আমি আমার সহকর্মীদের সাথে অংশগ্রহণ করি। এটা পূর্বপরিকল্পনার কোন অংশ ছিল না। শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে আমি অংশগ্রহণ করেছি। কারো প্রতি বিশেষ আনুগত্য প্রদর্শন বা কোন বিশেষ দলের প্রচারণার লক্ষ্যে নয়, আবার কারো প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করাও আমার উদ্দেশ্য নয়।"
আরও পড়ুন: ৪০ বছর পর ফের ‘দত্তা’, সুচিত্রার জায়গায় এবার ঋতুপর্ণা
ফেরদৌস আরও লিখেছেন, "আমি আগেও বলেছি, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা অগাধ। সেই ভালোবাসা আমাকে আবেগ তাড়িত করেছে। আমি বুঝতে পেরেছি, আবেগের বশবর্তী হয়ে সহকর্মীদের সাথে এই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করাটা আমার ভুল ছিল। যেটা থেকে অনেক ভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং অনেকে ভুলভাবে নিয়েছেন। আমি স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক। একটি স্বধীন দেশের নাগরিক হিসাবে অন্য একটি দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ কোনভাবেই ঔচিত্য নয়। আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমা প্রর্থনা করছি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সকলে আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।"
প্রসঙ্গত, 'দত্তা' ছবিতে বিলাসবিহারীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন ফেরদৌস। ভারতে ঋতুপর্ণার সঙ্গেই প্রায় ১৫ টি ছবি করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এই অভিনেতা। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'ইয়েতি অভিযান'-এরও অংশ ছিলেন তিনি। আপাতত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁকে 'ব্ল্যাকলিস্ট' করেছে। সুতরাং, নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত 'দত্তা'-র ভবিষ্যত অনিশ্চিত বলেই মনে করছেন সিনে দুনিয়ার একাংশ।