ব্যক্তিগত সংকট মোকাবিলা করা কঠিন, বিশেষত যখন সেই কষ্টের কেন্দ্রে থাকে নিজের সন্তান। ভারতীয় বিনোদন জগতের অন্যতম জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা জনি লিভার। যিনি নিজের রসবোধ আর অভিনয়শৈলী দিয়ে বহু বছর ধরে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছেন, তিনিও এক সময় এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। সম্প্রতি প্রাক্তন অভিনেত্রী কুনিকা সদানন্দের একটি পডকাস্টে তিনি নিজের ছেলের জীবনের ভয়ংকর এক অধ্যায়ের কথা শেয়ার করেন।
জনি জানান, তার ছেলে জেসির মাত্র ১০ বছর বয়সে ঘাড়ে একটি টিউমার ধরা পড়ে। একাধিক চিকিৎসার পরও ভারতীয় চিকিৎসকেরা জানান, টিউমারটি স্নায়ুর সঙ্গে জড়িত হওয়ায় অপারেশন করা সম্ভব নয়। তাঁরা সতর্ক করে দেন, অপারেশনের চেষ্টা করলে জেসির দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে কিংবা সে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। জনি বলেন, “আমি আমার ছেলেকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখতাম, কাঁটা জায়গাগুলো তখনও খোলা থাকত। ডাক্তাররা প্রতিদিন তাকে ৪০-৫০টি ওষুধ দিতেন, কিন্তু টিউমার কমার বদলে ক্রমশ বাড়তে থাকে।”
এই সময় জনি নিজেকে সম্পূর্ণ অসহায় মনে করতেন। একদিন তিনি ছেলেকে বলেন, “আমি একজন বাবা হিসেবে তোমার জন্য সব কিছু করব, কিন্তু আমি তো ঈশ্বর নই,আমি এই টিউমার সারাতে পারব না।” জেসি তখনও শিশু, মাত্র ১২ বছর বয়স। স্কুলে তাকে নিয়ে সহপাঠীরা ঠাট্টা করত। এই কঠিন সময়ে জনি ছেলের জন্য সব কিছু করতেন। যা চাইত সে, তাই কিনে দিতেন, যেখানেই যেতে চাইত, সেখানে নিয়ে যেতেন।
Atheist Krishna: প্রয়াত তরুণ ট্যালেন্ট, প্রশংসায় ভরিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খোদ..
একবার পরিবারের সবাই মিলে আমেরিকার জার্সি শহরে বেড়াতে যান। সেখানেই এক গির্জায় গিয়ে তাদের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। গির্জার এক যাজক হঠাৎ জেসিকে দেখে টিউমার নিয়ে জানতে চান। পরিস্থিতি জেনে তিনি পরামর্শ দেন নিউইয়র্কের স্লোয়ান কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারে যাওয়ার, যেটি বিখ্যাত অভিনেত্রী নার্গিস দত্তের চিকিৎসার স্থান হিসেবেও পরিচিত।
যদিও ভারতের চিকিৎসকরা অপারেশন করতে মানা করেছিলেন, তবুও জনি সাহস করে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করেন। প্রথমে তার স্ত্রী দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজি হন। স্থানীয় এক চিকিৎসক বন্ধুর মাধ্যমে তাঁরা পৌঁছন ডাক্তার যতীন শাহের কাছে। জনি বলেন, “আমি খুব ধার্মিক মানুষ নই, কিন্তু তখন আমি প্রতিদিন প্রার্থনা করতাম। অপারেশনের সময় আমি এতটাই প্রার্থনায় ডুবে ছিলাম, যেন আমি নিজেই অপারেশন থিয়েটারে আছি। আমার স্ত্রী ভাবতে শুরু করেছিল আমি পাগল হয়ে গেছি।”
Bollywood Actor: বাবার অসহনীয় অত্যাচার! 'ও মেরে ফেলবে তোকে', সন্তানকে বাঁচাতে যা করলেন জনপ্রিয় অভিনেতার মা
অবশেষে অপারেশন সফল হয়। ডাক্তাররা পুরো টিউমারটি অপসারণ করতে সক্ষম হন। জেসি তখন নিজের বাম হাত তুলে ইশারা করে জানান যে সে ভালো আছে। অপারেশনের পর শুধু তার ঘাড়ে ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ ছিল- সবকিছু যেন এক অলৌকিক পুনর্জন্মের মতো।
পরে জনি লিভার বলেন, ছেলের এই সুস্থতার পর তিনি নিজের সব খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করেন এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান এই দ্বিতীয় সুযোগের জন্য। আজ জেসি পুরোপুরি ক্যান্সারমুক্ত এবং তিনি একজন অভিনেতা হিসেবে কাজ করছেন। সমাজ মাধ্যমে তিনি ড্রাম বাজানো ও গান গাওয়ার ভিডিও শেয়ার করেন। অন্যদিকে, জনির মেয়ে জেমিও বাবার পথ অনুসরণ করে কমেডির জগতে পা রেখেছেন এবং বিশ্বজুড়ে পারফর্ম করছেন।