/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/24/sameer-anjan-2025-08-24-12-11-33.jpg)
যা হয়েছিল এই সুরকারের...
একই পরিবারের বহু প্রজন্মের পক্ষে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো সচরাচর দেখা যায় না, তবে চলচ্চিত্র জগতে এমন উদাহরণ প্রচুর। গীতিকার অঞ্জনের জীবনও ছিল সংগ্রাম ও সাফল্যের মিশেল। ব্লকবাস্টার গান ‘খাইকে পান বেনারসওয়ালা’ লেখার সময় তিনি প্রায় ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছেন। কিন্তু সেই গানই রাতারাতি তাঁর ভাগ্য ঘুরিয়ে দেয়। এই সাফল্যের আগে অঞ্জনকে লড়াই করতে হয়েছে প্রায় দুই দশক। তাই তিনি চাননি তাঁর ছেলে সমীর একই পথের কষ্ট ভোগ করুক। ছেলেকে সতর্কও করেছিলেন, "আমার মতো কবি হলে চলবে না, চলচ্চিত্রের জগতে পা রেখ না।" অথচ বাবা-ছেলের মধ্যে এতটাই দূরত্ব ছিল যে বিশ বছরের বেশি সময়ে খুব কমই কথা হতো তাঁদের।
সমীর ছিলেন একরোখা। বাবার কথার উল্টো পথই বেছে নেন তিনি। ২৩ বছর বয়সে একা মুম্বাই চলে আসেন স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। কয়েক মাস ধরে দারিদ্র্য আর হতাশার সঙ্গে লড়াই করেন। একই শহরে ছিলেন বড়লোক বাবা। তাও তাঁর কাছে সাহায্য চাইবার সাহসও পাননি।
Entertainment Death News: শুটিং ফ্লোরে মর্মান্তিক মৃত্যু, কোনওভাবেই বাঁচানো গেল না পরিচালককে..
‘জিন্দেগি উইথ রিচা’ ইউটিউব চ্যানেলের এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন বাবার জুহুর বাংলোতে না থেকে চাউলে থেকেছেন? সমীর বলেন, “আমার বাবা প্রায় ২০ বছর ধরে লড়াই করেছেন। কোনও বাবা চান না তাঁর সন্তানও একই যন্ত্রণার শিকার হোক। আমি বড় হওয়ার পথে তাঁকে হাতে গোনা তিনবার দেখেছি। তিনি আমার কাছে প্রায় অপরিচিত। আমার মনে আছে, একবার আমাকে তিনি কোলে তুলেছিলেন। খুব অদ্ভুত লাগছিল, কিন্তু ভালও লেগেছিল। তিনি শুধু একটাই পরামর্শ দিয়েছিলেন- আমার মতো কবি হোয়ো না, সিনেমার জগতে এসো না।”
সমীর আরও জানান, “এই ইন্ডাস্ট্রিতে গীতিকার হিসেবে টিকে থাকা কঠিন। আমি পড়াশোনায় ভালো ছিলাম, একসময় ব্যাংকেও চাকরি করেছি। কিন্তু মুম্বাই আসার স্বপ্ন আমাকে ডাকছিল। যখন পরিবারের কাছে সিদ্ধান্ত জানালাম, সবাই কেঁদে ফেলেছিল। তাঁদের মনে হয়েছিল, এক ছেলেকে হারিয়েছে, এবার অন্যজনও হারাবে। কিন্তু আমি থামিনি। ভাগ্য আমায় মুম্বাইয়ে এনেছিল, তবে বাবাকে জানাতে পারিনি, তাঁর সঙ্গে দেখা করার সাহসও পাইনি।”
Mostafa Sarwar Farooki: বুকে-পেটে তীব্র ব্যথা, শেষে অস্ত্রোপচার, এখন কী অবস্থা পরিচালকের?
মুম্বাইয়ের কঠিন দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে সমীর জানান, “ছেঁড়া শার্ট পরে বারাণসীতে ফিরেছিলাম, মা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ১০ টাকা দিয়ে শার্ট কিনেছি। ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতাম, নিজেকে প্রশ্ন করতাম কেন করছি এটা। প্রতিদিন সকালেই নতুন করে শুরু করতাম। কখনও কোনো ম্যাগাজিনের জন্য আর্টিকেল লিখে ৫০০ টাকা পেতাম, তখন মনে হতো রাজা হয়ে গেছি। মা যখন জানতে পারলেন আমি কীভাবে বেঁচে আছি, তিনি বাবাকে চিঠি লিখে তিরস্কার করলেন। বললেন, ছেলেকে উপেক্ষা করো না, সে গোপনে মুম্বাইয়ে থাকে।’ আমার আত্মীয়দের কাছ থেকে বাবা জানতে পারেন আমি কোথায় থাকি। ২৩ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে সেটাই ছিল আমার প্রথম সত্যিকারের সাক্ষাৎ।”
তিনি যোগ করেন, “আমার ক্ষোভ তখনও ছিল। বাবার দেওয়া কোনো সাহায্য নেব না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। জীবনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজের পথ নিজেই তৈরি করতে চেয়েছিলাম।”
ডিডি উর্দুর সঙ্গে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে সমীর আরও বলেন, “আমি মুম্বাইয়ের সবচেয়ে কঠিন সময় দেখেছি। বেনারসে আমি ছিলাম সেই ছেলে, যাকে এক গ্লাস জলও নিজে নিতে হতো না। রান্না করতে জানতাম না, শুধু চা বানাতে পারতাম। বিস্কুট ছিল সকালের নাস্তা। দুপুরে খার স্টেশনের এক দক্ষিণ ভারতীয় রেস্তোরাঁয় উত্তরপ্রদেশের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তিনি আমার জন্য পুরি চুরি করে আনতেন। ১০ টাকায় খেতাম দুপুরের খাবার। রাতে কেউ আমন্ত্রণ জানালে ভালো, না হলে কলা খেয়ে ঘুমাতাম।”