১৯২৩ সালে উত্তরপ্রদেশের এক ছোট শহরে জন্ম এই অভিনেত্রীর। তাঁর নাম উমা দেবী খাত্রি। শৈশবেই হারিয়েছিলেন বাবা-মাকে। জমি নিয়ে বিরোধের কারণে তাদের খুন করা হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর বড় ভাইকেও হত্যা করা হয়। সেই সময় থেকেই উমার জীবনের একমাত্র আশ্রয় ছিল গান।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি পাড়ি দেন মুম্বাই। চলচ্চিত্রে সুযোগ পাওয়ার আশায় সংগীত পরিচালক নওশাদের দরজায় কড়া নাড়েন। কথায় কথায় হুমকি দেন, তাঁর কণ্ঠে গান না শুনলে আরব সাগরে ঝাঁপ দেবেন! শেষমেশ নওশাদ তার গান শোনেন, এবং পরবর্তীতে গান গাওয়ার সুযোগ দেন। কিন্তু ভাগ্য আবার তাকে আঘাত করে। এক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করায় গানের ক্যারিয়ার হঠাৎই থেমে যায়। তখনই নওশাদের পরামর্শে অভিনয়ে আসেন তিনি। দিলীপ কুমারই তাকে নাম দেন টুন টুন- যেটি ছিল তার শরীরী গঠনের সঙ্গে মিলিত। এই নামেই তিনি হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে একজন জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেত্রী হিসেবে জায়গা করে নেন।
অভিনয় জীবনে হাসির দৃশ্য আর ভারিক্কি দেহ- যেন আইকনিক হয়ে ওঠে। তিনি দর্শকদের মন জয় করলেও ব্যক্তিজীবনে ছিল একরাশ অভাব। অবহেলার ইতিহাস শুনলে মন খারাপ হবে। শিশির কৃষ্ণ শর্মাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টুন টুন বলেন, "আমি শুধু গান গাইতে চেয়েছিলাম… পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম।" পরবর্তী জীবনে তিনি বলেছিলেন, "আমার ওজনই আমার ট্রাম্প কার্ড, আমি নিজেকে নিয়ে খুশি। তবে তা মানে এই নয় যে আমাকে খুশি রাখার দায় শিল্প জগত নিয়েছিল।"
শেষের দিকটা ছিল অনেক বেশি কষ্টের। সাক্ষাৎকারে পরিচালক শশী রঞ্জন বলেন, "টুন টুন একটি চালাঘরে বাস করতেন, খাবার বা ওষুধ কেনার সামর্থ্য ছিল না। হাঁটতেও পারতেন না। তবুও তার মুখে ছিল হাসি।
একবার সাক্ষাৎকারের শেষে অনুরোধ করলে তিনি-- “আফসানা লিখ রাহি হুন” গানটি গেয়ে শোনান। গলা কেঁপে উঠেছিল, কিন্তু তার রসবোধ অটুট ছিল। ২০০৩ সালে, ৮০ বছর বয়সে, এই অসাধারণ কৌতুকাভিনেত্রী পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তিনি হয়তো হারিয়ে গিয়েছেন সময়ের স্রোতে, কিন্তু তাঁর হাসি, যন্ত্রণার আড়ালে লুকিয়ে থাকা যে যন্ত্রণা, তা চিরকাল অমলিন।