Shahrbanoo Sadat: "প্রাণে বেঁচে থাকলে তালিবানি হানা নিয়ে একটা সিনেমা বানাব। গোটা বিশ্বকে জানাব, আফগানিস্তানের সঙ্গে কী ঘটছে", মন্তব্য আফগান সিনেজগতের খ্যাতনামা মহিলা পরিচালক সায়রাবানু সাদাতের। তালিবানদের নারকীয় রাজত্বে দক্ষিণ এশিয়ার সে দেশে বেঁচে থাকা এখন দায়। বারুদ, গোলাগুলি, বোমাবাজিতে প্রতিটাক্ষণে মৃত্যু যেন কড়া নাড়ছে। আফগানিস্তানের (Afghanistan) মহিলাদের সঙ্গে যে নৃশংস আচরণ করা হচ্ছে, তা শব্দে বর্ণনা করা দায়! ওদেশের শিল্পীদের প্রাণের আশঙ্কার কথা শোনা গিয়েছে বলিউড পরিচালক কবীর খানের মুখেও। এবার কান চলচ্চিত্রে প্রশংসা কুড়নো মহিলা পরিচালক সায়রাবানু খানিক থিতু হয়ে নিজের দেশ সম্পর্কে মুখ খুললেন।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গোটা বিশ্বের বিনোদুনিয়ার কাছে কাতর আর্জি রেখেছিলেন পরিচালক সাহারা করিমি। যার ডাকে সাড়া দিয়েছেন বলিউডের অনুরাগ কাশ্যপ, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরি থেকে টলিউড তারকারাও। এবার আরও এক আফগানি মহিলা সিনে পরিচালক তাঁর প্রাণের আশঙ্কায় রয়েছেন। তিনি সায়রাবানু সাদাত। যিনি কিনা আফগান সিনেজগতে বেজায় খ্যাতনামা। আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রেক্ষাপট অবলম্বনে সায়রাবানু পরিচালিত ছবি 'উলফ অ্যান্ড শিপ' কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মঞ্চেও দেদার প্রশংসিত হয়েছে। আর সেই মহিলা ফিল্ম ডিরেক্টর-ই এবার প্রাণে বাঁচতে কাবুল থেকে পালানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
আফগানিস্তানের লক্ষ লক্ষ মানুষের মতো তালিবান (Taliban) হানায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন সায়রাবানুও। তাই যেভাবেই হোক না কেন, গোটা পরিবার নিয়ে কাবুল থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন তিনি এখন। "যদি প্রাণে বেঁচে যাই, তাহলে আরও সিনেমা বানানোর সুযোগ পাব। হয়তো আমার ছবিতে গল্প বলার ধরন সারা জীবনের মতো পাল্টে যাবে। আমি চোখের সামনে দেখছি কতটা ভয়ঙ্কর অন্যায়-অবিচার হচ্ছে। অনুভব করতে পারছি। এগুলো মনে রাখব। আর ভবিষ্যতে নিজের সিনেমায় এই গল্পগুলো বলব", মন্তব্য পরিচালকের।
<আরও পড়ুন: ‘ঘোর কলিযুগে বাস করছি’, অশান্ত আফগানিস্তান দেখে ‘গীতা’ স্মরণে রিয়া চক্রবর্তী!>
সায়রাবানু জানিয়েছেন, "এ যেন এক দুঃস্বপ্ন! কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের দৃশ্য দেখার পর থেকেই ভাবছি, কীভাবে এয়ারপোর্ট অবধি পৌঁছব? আর কীভাবেই বা গোটা পরিবার নিয়ে প্ল্যানে উঠব? উগ্রপন্থীরা আফগানিস্তানের সর্বত্র কবজা করে নিয়েছে। এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে খান কয়েক চেকপোস্ট পড়ে। তার মধ্যে পয়লা চেকপোস্ট-ই তো তালিবানদের দখলে এখন। এখান থেকে বেরতে হলে সব উড়ানের খবর প্রয়োজন। সিট আছে কিনা? ক'টা প্ল্যান যাচ্ছে? এই পরিস্থিতিতে সেসব তথ্য পাওয়া মুশকিল। তাই অপেক্ষা করা ছাড়া আমরা নিরুপায়।"
সায়রাবানু সাদাত আরও যোগ করলেন, "বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুরা সাহায্যের চেষ্টা করছে, কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হচ্ছে না। তালিবানরা আমাদের রাজধানী কাবুলে ঢোকার আগের দিনই আমার কাছে এখান থেকে পালানোর একটা প্রস্তাব এসেছিল। বিমানে করে শহর ছাড়ার সেই প্রস্তাব আমি প্রত্যাখ্যান করে দিই, আসলে ওই যাত্রীতালিকায় আমার পরিবারের কারও নামোল্লেখ ছিল না। তাই পরিবার ছাড়া কাবুল ছাড়তে রাজি হইনি। কিন্তু এভাবে অকস্মাৎ একদিনের মাথায় ওরা আক্রমণ করবে, স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন