হিসেবমতো ৬৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে কালজয়ী ছবি পথের পাঁচালী-র বয়স। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত সাদা-কালো ছবির প্রতিটি ফ্রেম আজও সিনেপ্রেমীদের মনে গেঁথে আছে। কিন্তু হঠাৎ করেই রঙের ছোঁয়া লাগল অপু-দুর্গার সেই সাদাকালো জীবনে। আর পথের পাঁচালী-র এই আড়াই মিনিটের রঙিন ক্লিপ নিয়েই দ্বিধাবিভক্ত নেটিজেনরা। সত্যজিৎপ্রেমীরা কেউ পক্ষে, আবার কারও কাছে এই রঙিন ক্লিপ হয়ে উঠেছে অসহনীয়। কিন্তু কী বলছেন ওয়াশিংটনের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অনিকেত বেরা, যিনি এই পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন? অনিকেত কিন্তু নিজেও সত্যজিৎ ভক্ত।
এদিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে একটি ক্লাসিক ছবিকে নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা একেবারেই পছন্দ করছেন না সন্দীপ রায়। সত্যজিৎ-পুত্রের সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ''উনি একটা ছোট অংশ নিয়ে কাজ করেছেন। তবে কোনও ক্লাসিক ছবিকে ট্যাম্পার করা উচিত নয়। সাদা-কালো কোনও ছবি, যা ক্লাসিক হিসাবে গণ্য, আমার মতে সেটাকে ছোঁয়ারই প্রয়োজন নেই।'' উল্লেখ্য, সিনেমাটোগ্রাফার সুব্রত মিত্রের এই কাজ নিয়ে নাড়াচাড়া করা ভালভাবে নেন নি অনেকেই।
আরও পড়ুন: জীবাণুমু্ক্ত করা হল ‘কপালকুণ্ডলা’ ধারাবাহিকের সেট! টেলিপাড়া সরগরম প্রস্তুতিতে
কিন্তু এত ছবি থাকতে পথের পাঁচালী-কেই কেন বাছলেন অনিকেত? মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, ''পথের পাঁচালী আমার সবসময়ের প্রিয় ছবি। সে কারণে এই ছবিটার কথাই প্রথম মাথায় এল। কেবল কালারাইজ়েশন নয়, ছবিটির ডিজিটাল আপগ্রেডেশন ও রেস্টোরেশনও করা হয়েছে। কিছু হলিউড ছবিতেও এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়েছে। আসলে, ভারতে এই টেকনোলজিটা আনতে চাইছিলাম আমার প্রিয় ছবির মাধ্যমে।''
কিন্তু পথের পাঁচালী নিয়ে কাটাছেঁড়া করলে সমালোচনা হবে এটা তো জানতেন? অনিকেতের বক্তব্য, ''আমার কোনও ধারনা ছিল না এটা বিতর্কের সৃষ্টি করবে। এআই ব্যবহার করে কেবলমাত্র অ্যাকাডেমিক পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম। ভারতে এরকম কোনও কাজ প্রথমবার হলো। ব্যক্তিগতভাবে ছবিটা সাদা-কালোয় দেখতেই পছন্দ করি। এআই কতদূর যেত পারে সেটা দেখতেই পরীক্ষামূলকভাবে কাজটা করেছি।"
অধ্যাপকের মতে, বহু মানুষ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কথা শুনেছেন, কিন্তু খুব কম মানুষের হাতে কলমে অভিজ্ঞতা আছে। তবে কেবলমাত্র অ্যাকাডেমিক পরীক্ষার জন্য দু'মিনিটের ক্লিপ ব্যবহার হওয়ায় কপিরাইট সমস্যা এক্ষেত্রে নেই।
আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনের কোনও মূল্য নেই? তারকাদের প্রশ্ন দেবের
অনিকেত জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি একবারে মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে। যে নিজেই ভেবে নেয় মৌলিক রঙ কেমন ছিল। সেই মতোই কাজ করে। এমনকী ভীষণ খারাপ কোয়ালিটির ভিডিওর মানও উন্নত করতে পারে, এবং এই সবটাই এআই করে অত্যন্ত কম সময়ে।
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া নেগেটিভ থেকে অপু, দুর্গা, সর্বজয়াদের ফিরে আসাটা যেমন চমক ছিল, তেমনই এই কালজয়ী ছবির রঙিন ভার্সন চমকে দিয়েছে নেটিজেনদের। বেশ কিছু মানুষের বিরাগভাজন হলেও রঙের ছোঁয়ায় কেমন দেখতে হতে পারে অপু-দুর্গার কাহিনী, তা অনিকেত বেরার রঙিন ক্লিপে অনেকটাই স্পষ্ট। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে এ যেন অন্যরকম পাওয়া।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন