Daminee Benny Basu: একটা প্রজন্ম, একটা গোটা প্রজন্ম সাক্ষী থাকল রাতারাতি কিভাবে বেকারত্ব ঘিরে ধরে। যে মানুষটি প্রতিদিন রেজিস্টার নিয়ে ক্লাস রোল কল করতে যেতেন, ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিতেন, সেই মানুষটাই হঠাৎ করে জানতে পারলেন, সুপ্রিম রায়ের জেরে তাঁর চাকরি নেই। চাকরি গেল ২৬ হাজারের। এরপর থেকেই সারা রাজ্য এবং দেশ জুড়ে আলোচনা।
শিক্ষার মত বিষয়, যা যেকোনও দেশের মেরুদন্ড, ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঠিক ভুল, ন্যায়-অন্যায় শেখানোর এক দারুণ মাধ্যম, সেই শিক্ষা নিয়েই এহেন ছেলেখেলা। তারকাদের অনেকেই এই ঘটনায় মুখ খুলেছিলেন। গতকাল অভিনেত্রী দামিনী বেনি বসু নিজের সমাজ মাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেই ছোট্ট একটি মন্তব্য করেন। বহুদিন আগে নাট্য নির্মাতা এবং অভিনেতা ব্রাত্য বসু এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে যারা রাজনৈতিক দলের মিছিলে হেঁটেছেন, সমর্থন জানিয়েছেন, তাঁদের চাকরি দেব না তো কাকে দেব? সেই ভিডিও প্রসঙ্গেই বেণী লিখেছিলেন, "আমাদের সম্মানীয় সিনিয়র থিয়েটার এবং পড়াশোনা দাদা, আমার আর কিছু বলার নেই।"
তাঁর এই মন্তব্য দেখেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় তাঁর সঙ্গে। অভিনেত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, শিক্ষার সঙ্গে যারা জড়িয়ে আছেন, তাঁদের তরফে এহেন মন্তব্য কি আঘাত হানে? এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন..."সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পশ্চিমবঙ্গে ২৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল ( SSC Recruitment Verdict ) শুধুমাত্র একটি দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়াকেই প্রকট করেনি, বরং নৈতিক শাসনেরও সম্পূর্ণ পতন। তবুও, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ( Bratya Basu ) - নাট্যকার, একজন জনপ্রতিনিধি - দলীয় অনুগামীদের নিয়োগের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন এবং কুণ্ঠাহীনভাবে বলেছেন, যে যাঁরা শাসকদলকে সমর্থন করেন তাঁরা চাকরির দাবি রাখেন! এটি শাসন নয়। এটি নীতির আড়ালের স্বজনপোষণ। একজন ব্যক্তি যিনি রাজনৈতিক নাটক লেখার জন্য পরিচিত, তিনি এখন কত সহজে সরকার পরিচালিত ট্র্যাজেডি মঞ্চস্থ করেন তা অত্যন্ত মর্মান্তিক।"
আরও পড়ুন - Swastika Mukherjee: বাবার নখের যোগ্য নই, যাত্রা করে ওঁর সম্মান ডোবাতে পারব না: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান যা অবস্থা, সেই প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য? উত্তরে তিনি বলেন, "আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি তা কোনও দুর্ঘটনা নয়, বরং উপরতলার দায়মুক্তি, কিছুই ঘটেনি বলে দায় এড়ানো এবং নৈতিক অবক্ষয়ের একটি নমুনা। জনশিক্ষায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালে মন্ত্রীর কনভয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের জীবন বিপন্ন করার ঘটনা পর্যন্ত, একটি বার্তা স্পষ্ট: আনুগত্য যোগ্যতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ভিন্নমত অপ্রয়োজনীয় এবং জনগণের প্রতি সামান্য দায়িত্বটুকুও লোপ পেয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি আইনি সংকট নয়, এটি একটি আমলাতান্ত্রিক বিপর্যয় যার গভীর মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক পরিণতি রয়েছে! হাজার হাজার বেকার শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা এখন হতাশা এবং বিশ্বাসঘাতকতার মুখোমুখি, একটি গণ মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের দোরগোড়ায় যা ক্লাসরুম এবং আগামী প্রজন্ম জুড়ে প্রতিধ্বনিত হবে। শিক্ষার পবিত্রতা, জনকল্যান ব্যবস্থার বৈধতা এবং যাঁরা তাতে আমরা এখনও বিশ্বাস করে আছি, তাঁদের সকলের মানসিক সুস্থতা সংকটের মধ্যে। আমরা নৈতিক, স্বচ্ছ এবং ন্যায়বিচারের শাসনের দাবি করি - পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যতের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার আগে।"
প্রশ্ন উঠেছে অনেক। এই রাজ্যে যোগ্য এবং অযোগ্যের ফারাক করা যাচ্ছে না কেন সেই নিয়েও সাধারণ মানুষ থেকে তারকা সমাজ নানা প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ যে ক্রমাগত অন্ধকারে, সেও দিনের পর দিন বেশ স্বচ্ছ হয়ে উঠছে।