Swastika Mukherjee: বাবার নখের যোগ্য নই, যাত্রা করে ওঁর সম্মান ডোবাতে পারব না: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

Swastika Mukherjee on Jatrapala: মুখ খুললেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তাঁর বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায় যাত্রায় অভিনয় করতেন। বাবার কারণেই দেখেছেন অভিনয়ের এই ফর্মে কতটা কষ্ট এবং দৃঢ় পরিশ্রম লাগে। তিনি সমাজ মাধ্যমে এই নিয়ে এক বড় পোস্ট শেয়ার করেছেন।

Swastika Mukherjee on Jatrapala: মুখ খুললেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তাঁর বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায় যাত্রায় অভিনয় করতেন। বাবার কারণেই দেখেছেন অভিনয়ের এই ফর্মে কতটা কষ্ট এবং দৃঢ় পরিশ্রম লাগে। তিনি সমাজ মাধ্যমে এই নিয়ে এক বড় পোস্ট শেয়ার করেছেন।

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
আপডেট করা হয়েছে
New Update
Swastika Mukherjee on Jatrapala shared some stories from her childhood and her father's legacy

বাবার অভিনয় নিয়ে কী বলছেন স্বস্তিকা? Photograph: (ফেসবুক )

Swastika Mukherjee on Tollywood Controversy: শেষ কিছুদিনে যাত্রাপালা এবং সেই মঞ্চে অভিনয় নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। বাঙালির মুখে 'যাত্রা করো না তো..' এই শব্দটা মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। সাধারণত তারা এই কান্ড করেন, যখন তাঁরা অতিরিক্ত কিছু বোঝাতে চান। আর অন্যদিকে, অতিরঞ্জিত কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রেও তাঁরা এই শব্দ ব্যবহার করেন। কিন্তু, আদৌ যাত্রা পালা কতটা কঠিন, কিংবা খারাপ কিছু বোঝাতে যে এই শব্দটা ব্যবহার করতে নেই, এমন কিছুই জানিয়েছেন বহু তারকা। আসলে, এই বিতর্ক শুরু হয়, যখন পরমা বন্দোপাধ্যায় মিমির ডাইনি সিরিজকে যাত্রাপালা বলে উল্লেখ করেন।

Advertisment

তারপর থেকে নানা আলোচনা হয়েছে। কাকলি চৌধুরী থেকে রাহুল বন্দোপাধ্যায় অনেকেই এর প্রতিবাদে আওয়াজ তুলেছিলেন। যাত্রা যে নেহাতই সহজ না, সেকথাই জানিয়েছিলেন তাঁরা। প্রতিদিন এত মানুষের সামনে গ্রাম বাংলার বুকে টানা ঘণ্টার পর ঘন্টা অভিনয় করা নেহাতই সহজ ঘটনা না। আর এবার এই নিয়েই মুখ খুললেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তাঁর বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায় যাত্রায় অভিনয় করতেন। বাবার কারণেই দেখেছেন অভিনয়ের এই ফর্মে কতটা কষ্ট এবং দৃঢ় পরিশ্রম লাগে। তিনি সমাজ মাধ্যমে এই নিয়ে এক বড় পোস্ট শেয়ার করেছেন।

স্বস্তিকা লিখছেন, "আমার বাবা শ্রী সন্তু মুখোপাধ্যায় ২০ বছর বা তারও বেশি বছর ধরে যাত্রা করেছেন। প্রথম যাত্রাপালার নাম ছিল রাজভিখারী। আমি সম্ভবত তখন ক্লাস ১ এ পড়ি। মহাজাতি সদন-এ প্রথম শো দেখতে গেছিলাম। পোস্টারটাও এখনো মনে আছে। বাবার এক মুখ দাড়ি। দেখে খুব কেঁদে ছিলাম। ওই বয়সে নিজের বাবা স্টেজে উঠে অন্য কেউ হয়ে গেছে সেই বোধটা থাকে না। যা দেখছি সেটাই জলজ্যান্ত সত‍্যি। তারপর থেকে এটাই রীতি হয়ে গেল। প্রথম শো দেখতে বাড়ির সবাই যেতাম। তার আগে ৪-৫ মাস ধরে বাড়িতে দক্ষযজ্ঞ চলত। স্ক্রিপ্ট লেখা থেকে, কাস্টিং, মিউজিক সবকিছু নিয়ে বাবা ইনভেস্টেড থাকত। মাকে দেখেছি সব মহিলা চরিত্রের জন্য জামাকাপড় কিনতে যেতে। রিহার্সালে সবার জন‍্য রান্না করে নিয়ে যেতে, যেভাবে সাহায‍্য করা যায় করতে। বাবাকে কোনোদিনই দেখিনি ষ্টারসুলভ আচরণ করে শুধু নিজেরটুকু নিয়ে মেতে থাকতে। কাজটা ওঁর , শোটা ওঁর, পুরোটাই ওঁর - তাই তার সব দায়ভার ওঁর, ভালোটাও, খারাপটাও। তাই বোধহয় আমার মধ্যেও সেটাই সেডিমেন্ট হয়ে জেঁকে বসেছে। আর্টিস্ট হওয়াটাই আসল কথা, স্টার নয়।"

আরও পড়ুন  -  Diljit Doshanjh: তৃপ্তির হাসি হাসছেন দিলজিৎ, হলিউড লিজেন্ডকে নিজের ই…

Advertisment

একসময় সিনেমার থেকে বেশি যাত্রার কদর ছিল। কোনও উৎসব কিংবা পার্বণে গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে শুধু যাত্রাই হতো। এবং মানুষের ঢল নামত যাত্রা দেখতে। বলা উচিত যাত্রা শুনতে। অনেক দূরের যারা তাঁরা হয়তো দেখতে পারেন না। কিন্তু শুনতেন, উপভোগ করতেন । অভিনেত্রী আরও লিখছেন, "মা সঙ্গে যেত। আমি আর বোন কয়েকদিন পরে যেতাম, কাছাকাছি কোথাও শো হলে, আর অবশ‍্যই ফিরতি পথে শের-এ-পাঞ্জাব-এ খাওয়া হবে সেটা বাড়তি পাওনা। বাবার দৌলতে অনেক তাবড় তাবড় শিল্পীদের কাজ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে -জ্যোৎস্না দত্ত, বেলা সরকার, বীনা দাশগুপ্ত , রুমা দাশগুপ্ত, শিবদাস মুখার্জি , শেখর গাঙ্গুলি, সনাতন ঘোষ (বাবা আদর করে সোনাদা বলে ডাকত), শ্যামল চক্রবর্তী , ত্রিদিব ঘোষ, ছন্দা চ্যাটার্জি, জয়শ্রী মুখার্জি, অনাদি চক্রবর্তী, কাকলি চৌধুরি। ৩ ঘণ্টা ধরে মাঠে ঘাটে আদাড়ে বাদাড়ে বন জঙ্গলে স্টেজ খাড়া করে সামাজিক যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হত আর সে কী ভুবন ভোলানো অভিনয়! নিজের শরীরটাকে কীভাবে মনের ভাব ব‍্যক্ত করতে ব্যবহার করতে হয় সেটা বাবাকে দেখেই শেখা। বাবা মিউজিকেও বিশাল মন দিতেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত, অতুলপ্রসাদ সব গান গাইতেন। প্রশান্ত ভট্টাচার্য মিউজিক ডাইরেক্ট করতেন, বাবা বলতেন উনি লিজেন্ড, কোনোদিন সঠিক মূল্য পেলেন না। বলতেন অডিয়েন্স-এর চোখ, মন, মাথাকে তৈরি করতে হলে তাদেরকে সেরকম কাজ দেখাতে হবে। না দেখলে দেখার চোখটা তৈরি হবে কোথা থেকে ?"

এরপরই তিনি আসল কথা বললেন, যা এর আগে সকলেই বলে এসেছেন। অভিনয়, বিশেষ করে যাত্রা অভিনয় একদম সহজ না। আর এখন তিনি সেটাই বুঝতে পারেন। নিজে যখন অভিনয় করতে যান, তখনই ভাবেন, যাত্রা কতটা কঠিন। যাই হয়ে যাক না কেন, সময়ে পৌঁছে যাওয়া, পালার সময় ঠিক রাখা, এগুলো একজন অভিনেতাকে করতেই হয়। তিনি আরও লিখছেন, "নিজে অভিনয় করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বুঝি যে সমস্ত মিডিয়ামের মধ্যে যাত্রাটাই সবচেয়ে কঠিন। ঝড় জল যাই হোক না কেন সময়ে পৌঁছতেই হবে। সময়ে পালা শুরু করতে হবে। ৬০ হাজার লোক হলেও, পান্ডাল খুলে দিতে হলেও শেষ মানুষটাকেও কিন্তু সমস্ত কথা, সমস্ত শব্দ, গানের প্রত্যেকটা কলি পরিষ্কার করে শোনাতে হবে। পান্ডাল ফেল করা যাবে না, পৃথিবী উল্টে গেলেও যাবে না। যাত্রাপালা লোকে শুনতে যায়। সামনের সারি ছাড়া সবাই তো দেখতে পায় না।আমি আর বোন কনসার্ট বাদকদের পাশে বসতাম। আলো জ্বলার আগে গিয়ে বসে পড়তাম, আর আলো নিভলে অভিনেতাদের পেছন পেছন বেরিয়ে চলে আসতাম। নট‍্য কোম্পানি, ভারতী অপেরা আরও যারা আজও যাত্রা প্রডিউসার আছেন প্রত্যেক বছর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি কোনদিন হ্যাঁ করিনি, করবও না কারণ পারব না। আমি মাচা করেছি, গেয়ে নেচে মানুষকে এন্টারটেইন করে টাকা রোজগার করেছি। কিন্তু যাত্রা করতে গিয়ে বাবার নখের ছিঁটেফোটা অভিনয়টুকু করতেও পারব না। আর যাত্রাকে যে উচ্চমার্গে বাবা তার সহ শিল্পীদের, এবং বাকি সমস্ত ডিপার্টমেন্ট-এর মানুষদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন সেই কাজ করতে গিয়ে ডাহা ফেল করে আর সন্তু মুখোপাধ্যায়-এর নামটা ডোবাতেও পারব না।

মূলত, বাবার সঙ্গে যাত্রার যে যোগ, সেই নিয়েই তিনি লিখছেন। যেখানে, যাত্রা নিয়ে এত আলোচনা, সেখানে বাবার কাজ নিয়ে বলবেন না, এও আবার হয়। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে বাবার সহ অভিনেতাদের অভিনয় নিয়েও লিখছেন তিনি। অন্যদিকে, বাবার সময়ের বা ওনার সঙ্গে কাজ করেছেন এখানে কজন আছেন জানিনা। কাকলি চৌধুরী তুমি করেছ এবং আমি দেখেছি। তোমার অন্য যাত্রপালাও দেখেছি। মায়ের সঙ্গে মহাজাতি সদনে। তুমি অসাধারণ এবং প্রচন্ড হট। তোমার যা পারফরমেন্স আমি দেখেছি, কোনদিন পারব না গো করতে।"

Swastika Mukherjee tollywood Tollywood Actress tollywood news