ডিসিপি অলোক সান্যাল যখন সেটে থাকেন সকলে সমঝে চলে?
প্রথমদিকে সত্যিই সেটা হত। একটূ দূরত্ব বাজয় রাখত। তবে এখন আর হয় না। ওঁরা বুঝে গিয়েছে সেটে আলোক দা ওঁদের সহকর্মী। অনেকে স্যার সম্বোধন করেন, যাঁরা আমার সমবয়সী বা বন্ধুসম তাঁরা অলোক দা বলেই ডাকেন। আমি সেটে প্রত্যেকের সঙ্গে খুব ফ্রি-ভাবে মিশে যাই। প্রথম দেখাতে রাশভারি মনে হলেও এখন অভিনয় করতে করতে বুঝে গিয়েছে আমি ওঁদেরই একজন। একজন সিনিয়ারের যে সম্মানটুকু প্রাপ্য সেটা আমি পাই।
রিয়েল টু রিল, পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় কসরত করতে হয় না কিন্তু, একঘেয়েমি লাগে?
বাস্তবে যে কাজটা করি সেটাই যখন আবার পর্দাতেও করতে হয় তখন মনে হয়, একটু অন্য ধরনের চরিত্র হলে ভাল হয়। এখন অবশ্য ছকভাঙা অনেক চরিত্রেই কাজের সুযোগ পাচ্ছি। বাৎসরিকে চিকিৎসক, একেনবাবুতেও ডঃ ত্রিবেদী, বিবাহ অতঃপর সেখানেও অন্য চরিত্র, এছাড়াও বিচারক, প্রমোটারের চরিত্রেও কাজ করেছি। আগামীতে অনুপ দাসের 'রেখা'-তে কাউন্সিলর, টোটন অরিজিৎ চক্রবর্তীর আগামী ছবি 'তোমাকে বুঝি না প্রিয়'-তে মিনিস্টারের চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে। সবমিলিয়ে এখন আমি বহু সিনেমা-সিরিজে নানা চরিত্রে অভিনয় করছি। তবে আমার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা পুলিশের চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করে।
কখনও নেগেটিভ চরিত্রের প্রস্তাব পেলে করবেন নাকি বাস্তবে নিজের ইমেজের কথা ভেবে ভাল চরিত্র হলেও ছেড়ে দেবেন?
নেগেটিভ চরিত্রে আমি কখনও অভিনয় করব না। আমি তিন-চারটি প্রস্তাব ছেড়েও দিয়েছি। আমি যে পেশার সঙ্গে যুক্ত সেখানে সবসময় পজেটিভ ভাইবস থাকে। সেই জায়গাটা বজার রেখে আমাকে চরিত্র নির্বাচন করতে হয়। সন্তানে অভিনয়ের পরই আমাকে অনেকে বলেছে, চরিত্রটা একটু ধূসর।
সন্তানে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
সন্তানে আমার উল্টোদিকে মিঠুনদা, অনসূয়াদি, ঋত্বিক, শুভশ্রী সর্বোপরি রাজ চক্রবর্তীর মতো দারুণ পরিচালক। আমাকে চরিত্রটার জন্য পুরো গাইড করে দিয়েছিল। এই ছবিতে কাজ করে খুব অভিজ্ঞতা হয়েছে।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবি 'লহ গৌরাঙ্গের নাম রে'-তে রাজার বেশে নিজেকে কেমন লাগল?
সৃজিত স্যারের সঙ্গে আমি এর আগে 'কিলবিল সোসাইটি', 'দশম অবতার'-এ কাজ করেছি। এবার 'লহ গৌরাঙ্গের নাম রে'-তে অভিনয় করলাম। ছোট চরিত্র তবে গুরুত্বপূর্ণ। একদম অন্যরকম, সাজগোজ পুরো আলাদা। আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে... (ফোনের ওপারে দরাজ হাসি)।
পুলিশের চাকরির দায়িত্ব আর অভিনয় একসঙ্গে কী ভাবে সামলান?
আমি যে পদে রয়েছি সেখানে অনেক দায়িত্ব। আমার কাজটা আমাকেই করতে হয়। কর্মজীবন সামলে আমি অভিনয়টা করি। এটা আমার নেশা। আমার পক্ষে একটানা অনেকদিনের শুটিং সামলানোটা অসুবিধা হয়ে যায় কিন্তু, শনিবার বা রবিবার কিংবা ছুটির দিন, কাজের শেষে শুটিং সিডিউল হলে সুবিধা হয়। পরিচালক-প্রযোজক আমার সঙ্গে সেই সহযোগীতাটুকু করেন। পুলিশের চাকরি আমার পেট চালানোর জন্য আর সিনেমা-সিরিজ মন ভাল রাখার জন্য।
কর্মজীবন আর অভিনয়জগৎ এই দু'ক্ষেত্রে অলোক সান্যালকে ১০-এ কত করে নম্বর দেবেন?
পেশাজীবনে নিজেকে এগিয়ে রাখব। সরকারের তরফে সবরকম পুরস্কার ইতিমধ্যেই আমার ঝুলিতে। বুদ্ধবাবুর থেকেও পেয়েছি এখন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর থেকেও সম্মানিত হয়েছি। তাই এক্ষেত্রে নিজেকে ১০-এ আট দেব। আর সিনেমা-সিরিজ মিলিয়ে পাঁচের বেশি আমি নিজেকে দিতে পারব না।
অবসরের পর পুরোদস্তুর অভিনয়ই করবেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। জগদ্ধাত্রী, অনুরাগের ছোঁয়া সহ বেশ কয়েকটি সিরিয়ালে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছিলাম। কিন্তু, সময়ের অভাবে সেটা চালিয়ে যেতে পারিনি। কিন্তু, অবসরের পর অনেকটা সময়। তখন আমি সিনেমা, সিরিজ, সিরিয়াল পুরোদমে করব।
ইন্ডাস্ট্রির এমন কোনও পরিচালক-অভিনেতা আছে যার সঙ্গে কাজের ইচ্ছে?
পরিচালকের লিস্ট অনেক লম্বা। রাজের সঙ্গে আরও অনেক কাজ করতে চাই। তবে শিবুর সঙ্গে কাজ করতে পারলে আমার মন ভাল হয়ে যাবে। এছাড়াও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রদীপ দাসগুপ্তকেও আমার পছন্দ। আর অভিনেতা বললে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম পছন্দ বুম্বা দা। টোটা রায়চৌধুরী, আবিরকে আমার খুব ভাল লাগে। ওঁদের মতো প্রতিভাবান অভিনেতাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলে ভাল লাগবে।
মুম্বইয়ে কাজের প্রস্তাব পেলে যাবেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি নিজেও চেষ্টা করছি।
কাজের ব্যস্ততার মাঝে সিনেমা দেখার সুযোগ পান?
হ্যাঁ, আমি নিয়মিত দেড় থেকে দু'ঘণ্টা সিনেমা দেখি। রোজ রাতে সাড়ে দশটা থেকে সিনেমা দেখি আর সেখান থেকে শিক্ষা অর্জন করি। আমি ক্লাসিক মুভি বেশি দেখি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে সবরকম ভাষার অনেক ভাল সিনেমা-সিরিজ আছে সেগুলো দেখি। প্রতি মুহূর্তে আমি কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করি। নিজেকে আরও ভাল করে ঘষামাজা করে পেশাদার অভিনেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টাটাই চালিয়ে যাচ্ছি।
পাইপলাইনে আর কী কী রয়েছে?
সিনেমা-সিরিজ মিলিয়ে অনেকগুলোই কাজ আছে। যেমন 'রেখা', 'হুল', 'বেলা দে', 'শেষবেলা', 'টেক কেয়ার ভালবাসা', 'ইন্দু ৩', 'আমি যখন হেমামালিনী', 'বামাক্ষ্যাপা' ।