প্রথমবার সিনেমার পোস্টারে নিজের ছবি। রাসের পোস্টার বয় বছরের শুরুতেই সেরা প্রাপ্তি?
অবশ্যই সেরা প্রাপ্তি। জুনিয়র আর্টিস্ট থেকে আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি। ১ জানুয়ারি যখন রাসের প্রথম পোস্টারটা রিলিজ করল আর নিজেকে এতজন গুনী অভিনেতার মাঝে দেখতে পেলাম...। অনির্বাণ চক্রবর্তী, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, প্রতীম চট্টোপাধ্যায়, শঙ্কর দেবনাথ, অনসূয়া মজুমদার, বিক্রম চট্টোপাধ্যায় যাদের অভিনয় দেখে বড় হয়েছি বা আমি যাঁদের ফ্যান তাঁদের সঙ্গে যখন সিনেমার পোস্টারে নিজেকে দেখাটা পরম তৃপ্তি। তখন আমার সেই সময়টার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল যখন আমি বাচ্চা শ্বশুর ছবিতে ভিড়ের মাঝে জিৎদার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পোস্টার রিলিজের পরই পাভেল দাকে ধন্যবাদ জানালাম। কারণ ওঁর হাত ধরেই তো জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে গিয়েছিলাম। ৪৫ সেকেণ্ডের একটা স্পেশ্যাল অ্যাপিয়ারেন্স ছিল। আমার মনে হয়েছিল চরিত্র ছোট-বড় হয় না। অভিনেতার কাছে অভিনয়ই শেষ কথা। সেখান থেকে আজ নিজেকে এই জায়গায় দেখার সুযোগ এল। অপরাজিত, পারিয়া, রাপ্পা রায়, রাস-এর মধ্যে দিয়ে নিজেকে বারবার নতুন করে খুঁজে পাচ্ছি। পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।
অপরাজিত-র পর লম্বা বিরতি। তথাগতর হাত ধরে পারিয়াতে পুর্নজন্ম?
আমি সবসময় মনে করি কোনও মানুষ যদি সৎভাবে কোনও কিছুর জন্য চেষ্টা করে সেটা ঠিক পায়। চরম হতাশা যখন গ্রাস করে তখন বোধ হয় পৃথিবীর কোনও পজিটিভ পাওয়ার তাঁর কাছে চলে এসে বলে আমার হাতটা শক্ত করে ধর। শুনতে রূপকথার মতো লাগলেও এটাই কিন্তু, সত্যি। অপরাজিত-র পর অনেকদিন কাজ পাইনি। ভাল চরিত্রের অপেক্ষায় ছিলাম। অপরাজিত-র সুব্রত মিত্র চরিত্রের জন্য সকলের প্রশংসা পেয়েছি। শ্যাম বেনেগাল, প্রদীপ সরকার, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের মতো স্বনামধন্য মানুষদের থেকে প্রশংসা পেয়েছি। এরপরও আমি পছন্দের চরিত্রে কাজ পাইনি। একটা সময় মনে হয়েছিল, আমার চেহারার জন্যই তাহলে...? যখন আমি দিশাহানী তখন তথাগত মুখোপাধ্যায় পারিয়ার জন্য আমাকে 'লাট্টু' -র কথা বলে। শুনে আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিলাম। অপরাজিত-র পর আমার ওই ইমেজটা ব্রেক করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। পারিয়া আমার কাছে ম্যাজিক-পুর্নজন্ম সব কিছু।
বলিউডেও তো কাজ করছেন। পাকাপাকি বন্দোবস্তের কোনও পরিকল্পনা না দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে যাবেন?
হ্যাঁ,শুধু খাকি ২ নয়। আরও একটা ছবি আছে, শীর্ষ রায়ের 'ঘুমঘুমা'। এখানে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কেকে মেননের সঙ্গে কাজ করেছি। যদিও কেকে মেননের সঙ্গে খুব বেশি স্ক্রিন টাইম নেই। খাকি ২-তে নীরজ পাণ্ডের সঙ্গে কাজ করলাম। তবে টলিউড-বলিউড দুই জায়গায় কাজের প্রসঙ্গে সৃজিত দার একটা ডায়লগ মনে পড়ে গেল, ভাত-ডাল-বিরিয়ানির মধ্যে তফাৎটা বুঝতে হবে। টলিউড আমার কাছে ভাত-ডাল আর বলিউড বিরিয়ানি। বর্তমানে তো ভাত-ডালই খাচ্ছি। সেই সঙ্গে যতটা পারছি বিরিয়ানিটাও চেখে দেখছি। দুই নৌকাতে পা দিয়েই আপাতত চলার চেষ্টা করছি।
বলিউডে প্রথম কাজের সুযোগটা কী ভাবে এসেছিল?
মল্লিকা শেরাওয়াতের সঙ্গে নাকাব (সিরিজ) আর বিজেন্দ্র কালাজির সঙ্গে মাস্ক-এ কাজ করেছি। সেই হিসেবে মুম্বইয়েই আমার ডেবিউ। লকডাউনের সময় অনেক ভিডিও বানিয়েছিলাম। সেগুলোর মধ্যে একটা ভিডিও জিৎ-দার এত ভাল লেগেছিল যে নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করে লিখেছিলেন, বাচ্চা শ্বশুরের সেটেই বুঝে গিয়েছিলাম তুমি একজন অত্যন্ত ট্যালেন্টেড অ্যাক্টর। তোমার ভবিষ্যতের জন্য আমার শুভকামনা রইল। তথাগত দা, অনীক দত্ত, দেবলীনা দি নিজেদের প্রোফাইলে শেয়ার করেন। এই সময় আমার সত্যিই একটা পুর্নজন্ম হয়। ওঁরা যদি এগুলো শেয়ার না করতেন তাহলে আমি এখানে পৌঁছতে পারতাম না। 'বাচ্চা শ্বশুর', 'ব্রহ্মা জানে গোপন কম্মটি', 'স্যুইজারল্যান্ড' আর 'দ্বিতীয় পুরুষ'- এ তখন আমি কয়েক সেকেণ্ডের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম। ওই ভিডিওগুলো অনীক দা অনেক কাস্টিং ডিরেক্টরকে পাঠিয়েছিলেন। তথাগত দা অনেক অভিনেতাদের পাঠিয়েছিলেন। এরপর মানুষ আমাকে ধীরে ধীরে একটু একটু করে চিনতে থাকে। অভিনয়ের পথটা আরও প্রসারিত হয়।
বলিউড-টলিউডের মধ্যে কোন জায়গায় কাজ করে বেশি আনন্দ পান?
টলিগঞ্জে আমরা পরিবারের মতো কাজ করি। দাদা-দিদি বলে ডাকতে পারি। সম্পর্কের ভিত্তিতে কাউকে ইচ্ছে বলে জড়িয়ে ধরতে পারি। কিন্তু, মুম্বই ভীষণ প্রফেশনাল। সম্পর্ক বলে ওখানে কিছু হয় না। ওখানে বাজেটের স্কেলও অনেক হাই। অভিনেতাদের ট্রিটমেন্টের ধরনও আলাদা। তবে কাজ করে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। খাকি ২ করে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি। প্রত্যেকটি ছবি থেকে নানা বিষয়ে কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করি। 'অপরাজিত', 'পারিয়া' আমার কাছে একধরনের স্কুলিং আবার 'খাকি ২' আর 'ঘুমঘুমা' আমাকে বিরাট মাপের একটা প্রশিক্ষণ দিয়েছে যা ভবিষ্যতে আমার কাজের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে।
টলিউডে কাজের সুযোগ কমছে বলে মনে হয়?
বাংলা ছবির সংখ্যা সত্যিই কমছে। খারাপ সময় যেমন আছে তেমনই আবার ২০২৪-এর ক্রিসমাসে একসঙ্গে চারটি ছবি মুক্তি পেল। একটি ব্লকবাস্টার হলে কিন্তু, ইন্ডাস্ট্রির লাভ হবে না। চারটি ছবিই হিট হতে হবে। আর সেটাই হচ্ছে। বছরের শুরুতে এই চিত্রটা মনে আশা জাগায়। ছবির সংখ্যা না বাড়লে মুম্বইয়ের কথা তো ভাবতেই হবে। এটাও আবার ঠিক যে একটা সময় আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ছবিকেও অনুকরণ করা হয়েছে। এটাও ভুলে গেলে চলবে না ভারত থেকে অস্কারের মঞ্চে পৌঁছেছিলেন একমাত্র বাঙালি সত্যজিৎ রায়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আশাবাদী আমাদের ইন্ডাস্ট্রিরও উন্নতি হবে।
বলিউডে যদি কখনও পায়ের নীচের জমি শক্ত হয়ে যায় তখন তথাগতকে মনে রাখবেন?
বলিউড-হলিউড কেন,পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি তথাগতদাকে মনে থাকবে। যখনই ডাকবে ছুটে আসব। আমার কাছে তথাগত মুখোপাধ্যায়ের সিনেমা মানে আমার নিজের ছবি। সিনেমায় যদি নাও থাকি চিৎকার করে প্রমোশন করব। ওঁর তিনটি দারুণ সিনেমা আসছে। একটি 'গোপনে মদ ছাড়ান' আর অপরটি 'মেমরি এক্স' আর তৃতীয়টা 'গাকি'। যেদিন 'মেমরি এক্স' আর 'গাকি' রিলিজ করবে সেদিন ইন্ডাস্ট্রি অন্য ফ্লেভার পাবে।