/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/01/dev4-2025-09-01-10-07-03.jpg)
কে এই অভিনেতা?
হিন্দি সিনেমার ১০০ বছরের ইতিহাসে যদি একটি গ্রন্থ রচিত হয়, সেখানে দেব আনন্দকে নিয়ে আলাদা একটি অধ্যায় লেখা অনিবার্য। এই কিংবদন্তি অভিনেতা ও চলচ্চিত্রকার টানা ৬৫ বছর ধরে সক্রিয় ছিলেন পর্দায়। স্বাধীনতার আগেই মুক্তিপ্রাপ্ত হাম এক হ্যায় (১৯৪৬) সিনেমায় অভিষেক থেকে শুরু করে ২০১১ সালের শেষ ছবি চার্জশিট । সেই বছরই, ৮৮ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তবে তাঁর ছেলে সুনীল আনন্দের চলচ্চিত্রজীবন কখনোই বাবার সমান হয়ে উঠতে পারেনি। ১৯৫৬ সালে দেব আনন্দ ও অভিনেত্রী-স্ত্রী কল্পনা কার্তিকের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন সুনীল। জন্মের স্থানও একেবারে সিনেমাটিক—সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। যখন তাঁর বাবা-মা যাচ্ছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রে কার্লোভি ভ্যারি চলচ্চিত্র উৎসবে। ফলে, জন্মের মুহূর্তেই তিনি উৎসবের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন।
ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে ডিগ্রি শেষ করে সুনীল অভিনয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭০-এর শেষভাগ ও ৮০-র দশকের শুরুতে তিনি বাবার পরিচালনায় সহকারী হিসেবে কাজ করেন। অবশেষে ১৯৮৪ সালে দেব আনন্দের পরিচালিত আনন্দ অউর আনন্দ-এর মাধ্যমে পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। ছবিটিতে দেব আনন্দ নিজে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন, আর সুনীল ছিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। সে সময়কার বেশিরভাগ তারকা-সন্তানের মতো স্বতন্ত্র লঞ্চপ্যাড তাঁর ভাগ্যে জোটেনি- যেমন সঞ্জয় দত্ত (রকি, ১৯৮১) বা সানি দেওল (বেতাব, ১৯৮৩)-এর ক্ষেত্রে হয়েছিল।
Mithun Chakraborty: 'বাবাকে নয়, নিজের প্রতিভাকেই ভরসা করি', অকপট মন্তব্য মিঠুন পুত্রের
তবে আনন্দ অউর আনন্দ বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। এরপর ১৯৮৬ সালে সুনীল অভিনয় করেন সমীর মালকানের কার থিফ-এ, বিজয়তা পণ্ডিতের বিপরীতে। সেই ছবিও বড় কোনো সাফল্য পায়নি। আরও একবার সুযোগ আসে কাকা বিজয় আনন্দের পরিচালনায় ম্যায় তেরে লিয়ে (১৯৮৯)-তে, যেখানে সুনীলের বিপরীতে ছিলেন মীনাক্ষী সেশাদ্রী। দেব আনন্দের প্রযোজনা সংস্থা নবকেতন ফিল্মস প্রযোজিত এই ছবিতে রাজেন্দ্র কুমার ও আশা পারেখও ছিলেন, তবে ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়নি। পরে আশা পারেখ স্বীকার করেন, মূল উদ্দেশ্য ছিল সুনীলের ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবন।
ক্রমশ দীর্ঘ বিরতিতে চলে যান সুনীল। অবশেষে ২০০১ সালে ফিরে আসেন নিজের পরিচালনায়- মাস্টার নামের একটি মার্শাল আর্ট চলচ্চিত্র নিয়ে। এজন্য তিনি হংকং-এ উইং চুন কুংফুর বিশেষ প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। কিন্তু ছবিটি ব্যর্থ হলে তাঁর অভিনয় ও পরিচালনা- দুই পথই কার্যত থেমে যায়।
২০১১ সালে দেব আনন্দের মৃত্যুর পর সুনীল নবকেতন ফিল্মসের দায়িত্ব নেন। তিনি ভ্যাগেটর মিক্সার নামে একটি আন্তর্জাতিক সহ-প্রযোজনা প্রকল্প ঘোষণা করেন, যা গোয়ার প্রেক্ষাপটে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। এটিকে তিনি বাবার স্বপ্নপূরণের প্রচেষ্টা হিসেবে তুলে ধরেন। তবে সহ-প্রযোজকদের মধ্যে আইনি জটিলতার কারণে আজও ছবিটি আলোর মুখ দেখেনি।
তবুও সুনীলকে একবার আন্তর্জাতিকভাবে নজরে আনা সম্ভব হয়েছিল- ২০০৮ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেব আনন্দের কালজয়ী ছবি গাইড (১৯৬৫) প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে মুম্বাইয়ে দেব আনন্দের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে পিভিআর চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁকে জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল।
উল্লেখযোগ্য যে, সুনীলের আত্মীয়তার সূত্রেও চলচ্চিত্র জগতে আরেকটি উজ্জ্বল নাম জড়িয়ে আছে। তিনি পরিচালক শেখর কাপুরের তুতো ভাই। যেখানে সুনীল ব্যর্থতার মধ্যেই আটকে গেলেন, সেখানে শেখর কাপুর বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত ছবি নির্মাণ করেছেন- মাসুম (১৯৮৩), মিস্টার ইন্ডিয়া (১৯৮৭), ব্যান্ডিট কুইন (১৯৯৪) থেকে শুরু করে এলিজাবেথ (১৯৯৮) ও এর সিক্যুয়েল, এবং সাম্প্রতিক হোয়াটস লাভ গট টু ডু উইথ ইট? (২০২২) পর্যন্ত।