/indian-express-bangla/media/media_files/2025/05/29/zfOPYlC74ROYtC5Ko2df.jpg)
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বলিউডে যে ছবিগুলো হয় সেই বাজেটের সঙ্গে বাংলার কোনও তুলনাই চলে না: শুভ্রজিৎ
১ মে ছবি মুক্তির দিন ঘোষণার পরও কেন বদলে পুজো রিলিজ করা হল?
মে মাসেই ছবির কাজ শেষ হল। তারপর প্রচারের জন্যও তো একটু সময় প্রয়োজন। তাই মুক্তির তারিখটা অগত্যা পিছতে হল। এটা তো এই বছরের বিগ রিলিজ। পুজোর আবহে সকলে সিনেমা দেখতে ভালবাসেন। তাই দেবী চৌধুরানীকে পুজো রিলিজ হিসেবেই চূড়ান্ত করা হল। আরও অনেক বাংলা ছবি পুজোয় মুক্তি পাবে। সেগুলোর জন্যও শুভ কামনা। কারণ যত বেশি বাংলা ছবি তৈরি হবে ততই ইন্ডাস্ট্রি লাভবান হবে।
পদ্মাবত বা বাজিরাও মস্তানির মতো সিনেমার সঙ্গে দেবী চৌধুরানীর তুলনা যুক্তিযুক্ত?
আমি আমার মতো করে আমার ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে দেবী চৌধুরানী তৈরি করেছি। কারও সঙ্গে কোনও তুলনায় যেতে চাই না। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বলিউডে যে ছবিগুলো তৈরি হয় সেটার বাজেটের সঙ্গে বাংলার কোনও তুলনাই চলে না। ওই বাজেটে হয়ত চারটে বাংলা ছবি তৈরি হয়ে যাবে।
পুজোয় 'রক্তবীজ ২' আর 'রঘু ডাকাত'-র সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য তাহলে প্রস্তুত?
না, আমি কোনও লড়াইয়ে সামিল হই না। কোনওরকম প্রতিযোগীতায় আমি বিশ্বাসী নই। নিজের সেরাটুকু দিয়ে সিনেমা তৈরি করি। দর্শকের রায়ে ভাল-মন্দ বিচার হবে। বক্স অফিস নম্বরে আমার বিশেষ আগ্রহ নেই। আমার তো মনে হয় এবার পুজোয় যে তিনটি ছবি আসছে সম্পূর্ণ ভিন্নস্বাদের। তাই তিনটি ছবিই দর্শকের হলে গিয়ে দেখার আগ্রহ থাকবে। একজন বাঙালি দর্শক হিসাবে কিন্তু, আমি তিনটি ছবির তুলনা কখনই করব না। বরং টিকিট কেটে তিনটি আলাদা রকমের ছবি হলে গিয়ে দেখে আসতাম। যারা দেবের ভক্ত তাঁরাও নিশ্চয়ই আমার আর শিবুর ছবি দেখবে। আবার যাঁরা বুম্বাদার ভক্ত তাঁরা শিবু আর দেবের ছবিও দেখবে। দর্শককে তো বলব চতুর্থী থেকে ছবি দেখা শুরু করতে হবে। ষষ্ঠী পর্যন্ত তিনটে ছবি দেখতে হবে।
দেবী চৌধুরানীর মত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ছবি তৈরির ভাবনা কেন?
আমি যে ধরনের ছবি দেখে বড় হয়েছি সেই ধরনের ছবি পরিচালক হিসেবে দর্শককে উপহার দিতে চাই। ছেলেবেলার জ্ঞানার্জনটাই তো বড় হয়ে সঠিক জায়গায় ব্যবহার করার আদর্শ সময়। আকিরা কুরোসওয়া, রিডলি স্কট সহ আরও অনেক স্বনামধন্য পরিচালকের ছবি দেখে বড় হয়েছি। আমি মণিরত্নম, সঞ্জয়লীলা বনশালীরও বিরাট ভক্ত। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে একদম ভালবাসি না। কী ধরনের ছবি হচ্ছে বা হচ্ছে না সেটা নিয়ে একদম মাথাব্যাথা নেই। নিজের ভাবনায় ছবি তৈরি করি।
বাংলা সিনেমার বাজেট তুলনামূলক কম, দেবী চৌধুরানীর কস্টিউম থেকে জুয়েলারি, ঘোড় সওয়ার ট্রেনিংয়ের জন্য তো মোটা টাকা খরচ। এটা ম্যানেজ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
অনেকটা সময় নিয়ে ছবিটা তৈরি করেছি। অনেকক্ষেত্রে বাজেট নিজের মতো করে ম্যানেজ করেছি। প্রয়োজনে পার্সোনাল ইনফ্লুয়েন্স ব্যবহার করে কিছুটা কস্ট কাটিং করতে হয়েছে। তবুও আমার লক্ষ্য ছিল দেবী চৌধুরানি তৈরি করা। এই ছবির জন্য যে বাজেট ছিল তাতে হয়তো দু-তিনটে বাংলা ছবি হয়ে যাবে। এই ছবিতে ১১৪২ টা ভিএফএক্স শট আছে। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে বোধহয় এটা প্রথম। প্রতিটি ভিএফএক্স শটে ১৮ থেকে ১৯ টা করে ড্রাফ্ট হয়েছে। ছয়-সাত মাসে ভিএফএক্সে প্রায় ৭৫ জন কাজ করেছে। এক বছর আমি প্রি-প্রোডাকশনের কাজ করেছি। সেটা আমার শুটিংয়ে ভীষণ সাহায্য হয়েছে।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
ওঁর মতো ডিরেক্টর বা প্রোডাকশন ফ্রেন্ডলি সুপারস্টার পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের। আমি একটু খুঁতখুতে। বুম্বাদাকে যে জায়গায় ত্রিশূলটা রাখতে বলেছিলাম যার ফাঁক দিয়ে শ্রাবন্তীর মুখ দেখা যাবে উনি কিন্তু, ঠিক সেটাই করেছেন। একটি ছবির জন্য যে পরিমান রিসার্চ ওয়ার্ক করেন সত্যিই অসাধারণ। এলাম অভিনয় করলাম আর চলে গেলাম সেটা নয়। ছবিটা শেষ হওয়ার পর বুম্বাদা তিনবার দেখেছে। আর দেখার পর বলেছে এটা 'কর্মাশিয়াল ক্লাসিক'। কোনও এক বিশেষ শ্রেনির দর্শকের জন্য ছবিটা নয়। মাস এবং ক্লাসের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে দেবী চৌধুরানী।
অনেকে বলছে দেব-প্রসেনজিতের মুখোমুখি লড়াই...
আমি আবারও সেই কথাটাই বলব, কোনও প্রতিযোগীতায় বিশ্বাস করি না। যাঁরা মনে করছেন তাঁরা দুই অভিনেতার ভক্ত। এটা সম্পূর্ণ ফ্যানেদের ব্যাপার।
দেবী চৌধুরানী থেকে কতটা আশাবাদী?
নিজের ছবির সাফল্য তো প্রত্যেকেই চায়। যত বেশি সংখ্যাক দর্শকের কাছে ছবিটি পৌঁছবে সেটা সিনেমার পক্ষে ভাল হবে। দেবী চৌধুরানী তো শুধু বাংলা ভাষায় মুক্তি পাচ্ছে না, পুরো ভারতজুড়ে রিলিজ হচ্ছে। বিদেশেও মুক্তি পাবে দেবী চৌধুরানী। সেখানের দর্শকও বুঝবে বাংলা টেকনিশিয়ানদের নিয়েও এমন ছবি তৈরি করা সম্ভব। আমরা কোনও অংশে কম নই। বাংলার কথা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমি এগিয়ে চলেছি। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলে সেটাই হবে আমার সাফল্য। আমি চাই আমার ছবি ৫০ বছর পরও মানুষের মনে থেকে যাবে। বৃহত্তর পরিসরই আমার লক্ষ্য।
দেবী চৌধুরানীর লুকের পিছনে রূপটানশিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুর কতটা পরিশ্রম রয়েছে?
যতক্ষণ পর্যন্ত আমার লুকটা পছন্দ হয়নি ততক্ষণ সাজিয়েছেন। বুম্বাদা তো একদিন মজা করে বলেছিল রাত ১২টায় ডেকে বলল, এবার আমি দাড়িটা খুলছি আর পারছি না। এক একজনের মেক আপের জন্য প্রায় দু'ঘণ্টা সময় লেগেছে। সঙ্গে কস্টিউম। আর্টিস্টরা এসে মেক আপ ভ্যানে যেত। একটা রাউন্ড মেক আপের পর কস্টিউম পরত। তারপর অস্ত্র ধরানোর পালা আর্ট ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে। প্রতিটি অভিনেতা-অভিনেত্রীকে তিনটি ডিপার্টমেন্ট সাজিয়েছে। শুধু কেন্দ্রীয় চরিত্রদের ক্ষেত্রেই মেকআপ হয়েছে তা কিন্তু নয়। পিছনে যে ৫০ জন দাঁড়িয়েছিল তাঁদের ক্ষেত্রেও একইভাবে হয়েছে। কস্টিউমটাও কিন্তু, সেই সময়কার আদলেই তৈরি। তখন টেক্সটাইলের বুনোনটা একদম আলাদা হত। হাতে বোনা তাঁতশিল্প ছিল। আমি কিন্তু, সেই বুনোনের কাপড় জোগাড় করে তাঁতিদের দিয়ে থান তৈরি করিয়েছি। ন্যাচরাল ডাই দিয়ে রং করিয়ে জামাকাপড় তৈরি হয়েছে। কারণ তখন তো সিন্থেটিক ডাই ছিল না, সিনেমার স্ক্রিনে দর্শক বুঝবে সেই সময়ের মতো করেই ডাই রং-টা বানানো হয়েছে।