Bollywood: জীবনে এমন এক সময় আসে, যখন সবচেয়ে সাধারণ স্মৃতিগুলিও বিশেষ হয়ে ওঠে। নব্বইয়ের দশকের বাচ্চাদের জন্য সেই সময়টি কয়েক বছর আগেই চলে এসেছে—যখন ল্যান্ডলাইন ফোন, ক্যাসেট টেপ, আর নাদিম-শ্রাবণের গানগুলো হঠাৎ করে মনে নস্টালজিয়া জাগাতে শুরু করে। সেই সুর আর স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দেয় সহজ-সরল সময়ের কথা। যখন জীবন মানেই ছিল স্কুল পালানোর প্ল্যান, পরীক্ষার জন্য দুশ্চিন্তা, আর ল্যান্ডলাইন ফোনে কিশোর-কিশোরীদের লুকানো প্রেমালাপ।
এই অতীতের মুহূর্তগুলো প্রায়ই ভালোবাসা আর মমতায় ভরা স্মৃতিতে পরিণত হয়, যদিও সেগুলো তখন হয়তো ততটা উপভোগ্য ছিল না। ঠিক এই রোমান্টিক দৃষ্টিকোণ থেকেই কিছু সিনেমা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তা পায়, এমনকি খুব বেশি পুরনো না হলেও। অনেক সময় এগুলো এমনভাবে আলোচিত হয় যেন সিনেমার ইতিহাসেরই অংশ।
এমনই একটি ছবি হলো ধর্মেশ দর্শনের 'ধড়কন' (২০০০), যেখানে অভিনয় করেছিলেন শিল্পা শেঠি, সুনীল শেঠি ও অক্ষয় কুমার। ছবিটি ২৫ বছর আগে মুক্তি পায়। এই তিনজনই ৯০-এর দশকের গোড়ায় সিনেমায় কাজ শুরু করেছিলেন, আর ধড়কন ছিল তাদের ক্যারিয়ারের অন্যতম জনপ্রিয় কাজ। ছবিতে সুনীলের বহুল আলোচিত সংলাপ—“অঞ্জলি, তুম সির্ফ মেরি হো”—এই নিয়ে এখনও মিম ঘুরে বেড়ায়। অক্ষয় অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে। ছবির শুটিং চলাকালীন শিল্পা ব্যক্তিগত জীবনে হৃদয়ভঙ্গের মুখোমুখি হন, যা পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া ধড়কন, মহব্বতে ও কহো না পেয়ার হ্যায়—সবক’টিই ছিল রোমান্টিক ধাঁচের ছবি। দর্শক রোমান্সে ক্লান্ত হননি, তবে ধড়কন বিশেষভাবে মনে থাকে নাদিম-শ্রাবণের সুরের জন্য। ছবিটি বানাতে লেগেছিল প্রায় তিন বছর, আর সেই সময়েই নাদিম গুলশান কুমার হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ায় সুরসৃষ্টি বন্ধ করে দেন। পরে জানা যায়, ছবির 'দিল নে ইয়ে কাহা হ্যায় দিল সে' ও 'আকসার ইস দুনিয়া মে' গান দুটি আসলে চুরি করা সুর। ছবির গল্প ছিল এক প্রেমের ত্রিভুজ, অনেকটা হাম দিল দে চুকে সানাম-এর মতো, যদিও চেহারায় মনে হত যেন কোনো বালাজি টিভি সিরিয়াল।
ধড়কন মুক্তি পায় এক বিতর্কিত সময়ে। যখন অক্ষয় ও শিল্পার দীর্ঘদিনের প্রেম ভেঙে যায়। শিল্পা পরে সাক্ষাৎকারে জানান, অক্ষয় টুইঙ্কল খান্নার সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন, যাকে তিনি পরবর্তীতে বিয়ে করেন। শিল্পার কথায়, যখন তিনি ভালোবাসতেন অক্ষয়কে, তখন টেরই পান নি, যে তাঁকে ঠকানো হচ্ছে, সেটা ভীষণ কষ্টের বলেই সম্বোধন করেন তিনি। তাঁর কথায়, "আমি ভাবিনি, সে আমাকে একবার নয়, দু’বার আঘাত দেবে।" তিনি শুটিং চলাকালীন চুপ ছিলেন, যাতে ছবির কোনও ক্ষতি না হয়, কিন্তু মুক্তির পর সব খুলে বলেন। টুইঙ্কলকে দোষ না দিয়ে তিনি বলেন, "অন্য কোনো মহিলাকে দোষ দেওয়ার মানে নেই; পুরো দোষ তার (অক্ষয়ের)।"
অক্ষয়ও এক সাক্ষাৎকারে বিচ্ছেদের কথা স্বীকার করেন, তবে শিল্পার অভিযোগের জবাব দেননি। তিনি বলেন, "হৃদয়ভঙ্গ জীবনের অংশ। তার উচিত নিজের জীবনে এগিয়ে যাওয়া, আর আমাকে আমার জীবন নিয়ে থাকতে দেওয়া উচিত।" পরিচালক ধর্মেশ জানান, ছবির শুটিং- এ দেরি হয়েছিল মূলত তার অন্য প্রজেক্টের (মেলা) কারণে। তবে গুঞ্জন ছিল, এর পেছনে শিল্পা-অক্ষয়ের অস্বস্তিকর সম্পর্কই দায়ী। এমনকি অক্ষয় ও সুনীল শেঠির মধ্যেও মতবিরোধ ছিল। মোহরা ছবির পর থেকেই তাঁদের মধ্যে গণ্ডগোল চলছিল।
শেষ পর্যন্ত নির্মাতারা গল্পে প্রাণ আনতে মহিমা চৌধুরীকে যুক্ত করেন। ধড়কন পরবর্তীতে স্যাটেলাইট চ্যানেলে বারবার প্রচারিত হয়, এবং সূর্যবংশম-এর মতোই "টিভিতে সবসময় চলা"- ছবির তালিকায় চলে আসে। যদিও এটি সময়ের সেরা ছবি নয়, তবু যারা কিশোর বয়সে পকেটমানি জমিয়ে এর অডিও ক্যাসেট কিনেছিলেন, তাদের কাছে এটি এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি।