Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

মানুষের পাশে দাঁড়াতে ক্যামেরা ছেড়ে স্টেথোস্কোপ তুলে নিলেন কমলেশ্বর

'মেঘে ঢাকা তারা', 'চাঁদের পাহাড়'-এর মতো সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন বাংলার সিনে ইন্ডাস্ট্রিকে। এরপর আর ফেরা হয়ে ওঠেনি পুরোনো প্রফেশনে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সময় পেরিয়েছে প্রায় ১৪ বছর। সিনেমা আর থিয়েটারের টানে স্টেথোস্কোপ ছেড়ে ২০০৬ সালের পর ক্যামেরা হাতে তুলে নিয়েছিলেন একদা মেডিকেল কলেজের ছাত্র কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। 'মেঘে ঢাকা তারা', 'চাঁদের পাহাড়'-এর মতো সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন বাংলার সিনে ইন্ডাস্ট্রিকে। এরপর আর ফেরা হয়ে ওঠেনি পুরোনো প্রফেশনে। কিন্তু আমফান বিপর্যস্ত বাস্তুহারাদের জীবন ফের স্টেথোস্কোপ ফিরিয়ে আনল পরিচালক কমলেশ্বরের জীবনে।

Advertisment

সোশাল মিডিয়ায় এই বিষয়টিকে উল্লেখ করে পরিচালক লেখেন, "বঙ্গোপসাগর ছুঁয়ে থাকা ব-দ্বীপ আমাদের বাংলা। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই বারবার বঙ্গোপসাগর থেকে উৎসারিত ঘূর্ণিঝড়ে এই নদী সমৃদ্ধ এলাকায় নেমে আসে চরম বিপর্যয়। সেখানকার চাষ বা মাছের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় ; স্থানীয় মানুষের বাড়ি ঘর ধ্বংস হয় - প্লাবিত হয় ; জীবন ও জীবিকার সর্বনাশ হয়।গত দশকে ঘূর্ণিঝড় 'আইলা' যেমন এই অঞ্চলের মানুষের ও অরণ্য-বাস্তুর ক্ষতি করেছিল (সেবার যদিও অনেক বেশি সংখ্যায় বাঁধ ভেঙেছিল - কারণ সেবার ঝড় এসেছিলো ভরা কোটালে), এই দশকেও ঘূর্ণিঝড় 'উম-পুন্' তছনছ করে দিয়ে গেছে এলাকার জনজীবন ও নিসর্গ বিন্যাস। এবং সবচেয়ে বড়ো চিন্তার বিষয় হলো, যখন বিশ্বজুড়ে 'করোনা প্যান্ডেমিক' - এর সংক্রমণ সার্বিকভাবে মানুষকে পর্যদুস্ত করছে ও দেশের তথা রাজ্যের অর্থনীতি অথৈ জলে তখন প্রকৃতি নিঃস্ব ভাতের পাতে ঝড় দিলো । তাতে এলাকার প্রান্তিক মানুষের দুর্দশা আজ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।" তাই সেই ভালো না থাকা মানুষদের পাশে পরিচালক হিসেবে নয় চিকিৎসক হিসেবে দাঁড়ালেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন, করোনার প্রকোপ! কোন পথে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব?

উল্লেখ্য, মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি শেষ করার পর কার্ডিওলজি বিভাগের হাউস স্টাফ হিসেবে এসএসকেএম-এ প্র্যাকটিস করতেন কমলেশ্বর। পরবর্তীতে রাজ্যের বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও আইসিইউ বিভাগে কাজ করেছেন তিনি। তবে পরিচালকের মতে অবস্থার প্রেক্ষিতে পুরোনো পেশায় ফিরে মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি সর্বদাই রাজি।

আমফান বিধ্বস্ত দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের পাশে দাঁড়াতে তাই একাধিক হেলথ ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন পরিচালক। সেখানে চিকিৎসক এবং সহকারী উভয় দায়িত্বই পালন করেন কমলেশ্বর। অনেক সময় ক্যাম্পে আসা লোকজনদের সামাজিক দূরত্ব মানতে সাহায্যও করেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রস বাংলাকে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেন, " করোনা আর আমফানের পর মানুষের পাশে চাইছিলাম। সেই কারণে আমি আমার বন্ধুদের এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সঙ্গে যোগদান করি হেলথ ক্যাম্পগুলিতে। তবে ওখানে থাকা হয়ে ওঠেনি, যাওয়া আসা করছি। সমস্ত সুরক্ষা মেনেই কাজ চলছে।"

করোনা-লকডাউনে এমনিতেই বিপর্যস্ত হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন-গোসাবা-কুলতলী-কাকদ্বীপ-সহ একাধিক এলাকার জনজীবন। এর মধ্যে আমফানের বাঁধভাসি জলে ভেসে গিয়েছে মাথার ছাদটকুও। চিকিৎসক কমলেশ্বরের কথায় এই সব এলাকার বেশিরভাগ মানুষই ভুগছেন অপুষ্টিতে। অনেকের রয়েছে চর্মরোগও। এখন বন্যা পরিস্থিতিতে ডায়েরিয়ার মত জলবাহিত রোগ হতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন পরিচালক-চিকিৎসক। বাংলার এই লড়াইকে অবশ্য ভিন্নভাবেই দেখছেন কমলেশ্বর। ক্ষুরধার শব্দেই তাই ফেসবুকে পরিচালক লেখেন, "প্রশ্নটা নিজের চেষ্টায় কে কতটুকু করতে পেরেছেন - তা নয়; কথা হলো আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতার পরাজয় ঘটছে - সামাজিক সমন্বয়ের বিকাশ হচ্ছে। ইতিহাস এই অধ্যায় ভুলবে না। তাই আমি মনে করি, 'এ বড়ো সুখের সময় নয় ' ঠিকই - তবু মানুষ বুঝি 'সাতটা রঙের ঘোড়ায় চাপায় জিন'।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

kamaleswar mukharjee
Advertisment