বাংলার সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান। মুম্বইতে থেকেও বাঙালিয়ানা ভুলতে পারেননি। আর বাংলার প্রতি বাপ্পি লাহিড়ীর সেই টান অনুভব করেই গঙ্গায় অস্থি বিসর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর পরিবার। সম্প্রতি লাহিড়ী ভবনে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পীর। এবার তাঁর অস্থি বিসর্জন করতে সপরিবারে কলকাতায় আসছেন ছেলে বাপ্পা।
সূত্রের খবর, গঙ্গার আউটরাম ঘাটেই বাপ্পি লাহিড়ীর অস্থি বিসর্জন করা হবে। রাজ্য সরকারের তরফে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে লাহিড়ী পরিবারকে। যাতে কোনওরকম অসুবিধেয় না পরতে হয়, তার জন্য দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুকেও বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, বাপ্পির বাবা অপরেশ লাহিড়ীর অস্থিও বিসর্জন করা হয়েছিল এই গঙ্গার ঘাটেই। সেই রীতি অনুসারেই তাঁর অস্থিও এখানেই বিসর্জন করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাপ্পি লাহিড়ী। লতা মঙ্গেশকরের পর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ধাক্কা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সঙ্গীতমহল। তার মাঝেই বুধবার সকালে আরও এক বাঙালি তারকার মৃত্যুর খবর এসেছিল আরব সাগরের পারে মায়ানগরী থেকে। 'ডিস্কো কিং'য়ের আচমকা প্রয়াণে ভেঙে পড়েছিলেন তাঁর সহকর্মীরা।
<আরও পড়ুন: ‘মিস ইউক্রেন’-এর হাতে কালাশনিকভ! মাতৃভূমি বাঁচাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামলেন আনাস্তাসিয়া>
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের অলোকেশ লাহিড়ী তাঁর গানের মাধ্যমে গোটা দেশের শ্রোতাদের নেশা ধরিয়েছিলেন। সাতের দশকে কমবয়সি এই বাঙালি ছেলের মিউজিক কম্পোজিশন শুনে চমকে উঠেছিলেন তৎকালীন বলিউড পরিচালকরাও। উনিশ-কুড়িতেই যে সব হিন্দি গানের সুর করেছিলেন, তাতেই বাপ্পির সোনায় মোড়া মিউজিক কেরিয়ারের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন অনেকে।
মুম্বইতে থেকে বাংলাকে কতটা মিস করতেন বাপ্পিদা? প্রয়াণের পর বাপ্পির স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তুতোদাদা ভবতোষ জানিয়েছিলেন, “বাপ্পি ছিলেন মাছ-পাগল মানুষ। মুম্বইতে ভাল মাছ পাওয়া যেত না বলে দুঃখ করতেন। যখনই উত্তরবঙ্গে কোথাও অনুষ্ঠান করতে এসেছেন, কোনওদিন হোটেলে রাত কাটাতেন না। আর এলেই বিভিন্ন মাছের হরেক পদ খাওয়ার আবদার রাখতেন। ইলিশ-চিতল, কাতলা ছিল বরাবরের প্রিয়। গানের আড্ডা দিতেন চুটিয়ে।” আসলে বাঙালি মানেই তো গানবাজনার আড্ডা আর পাতে হরেক মৎস-পদ, সেদিক থেকে দেখতে গেলে বাপ্পি লাহিড়ী হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির ‘ডিস্কো কিং’ হয়েও আমৃত্যুকাল বাঙালি হয়েই থেকেছেন। এবার তাঁর অস্থিও বিসর্জন হবে এই কলকাতাতেই। গঙ্গায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন