নন্দিতা আচার্য
গল্পের অন্দরে গল্প। সম্পর্কের টানাপোড়েনে তৈরি হয়ে ওঠা ভালোবাসার গল্প। সদ্য স্বামী হারানো যুবতী শ্রীমতী এবং তার উকিল জিয়ন। জিয়নের রয়েছে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া অভিজাত এক বিশাল বাড়ি। তেমনই অভিজাত তার সুন্দরী স্ত্রী রুমকি আর সুখী গৃহকোণ।
পরিচালক যখন কৌশিক গাঙ্গুলি... তখন দর্শকের প্রত্যাশা থাকে গগনচুম্বী।
সে প্রত্যাশা পূরণ করে এ ছবি। মেধা, রুচি, স্মার্টনেস; তার সঙ্গে অ্যাওয়ারনেস। এই সচেতনতা সমাজের প্রতি, বেঁচে থাকার যাবতীয় মূল্যবোধগুলোর প্রতিও। তরতর করে এগিয়ে চলা গল্প বিভিন্ন বাঁকে মোচড় দিতে থাকে। দর্শক ভাবনার গভীরে ডুব দেয়... তবে কি এই?
আরও পড়ুন, দৃষ্টিকোণ: ঋতুপর্ণার সঙ্গে কাজ, কৌশিক গাঙ্গুলির পরিচালনায় প্রথম অভিনয়, আর কী কী বললেন প্রসেনজিৎ
সে ভাবনাকে আরও বেশি আলোড়িত করে গল্প কয়েক পলক নিঃশ্বাস নেয় অন্য ডাঙায়।
দুর্ঘটনায় মৃত শ্রীমতীর স্বামী চিকিৎসক পলাশ, যার স্বপ্ন ছিল... অন্ধ জনে দেহ আলো। এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না শ্রীমতী। কেমন ভাবে ঘটে গেল সে দুর্ঘটনা! সে অন্বেষণে চারদিক হাতড়ে বেড়ায় শ্রীমতী। ঠিক সেই সময়ই তার বিষণ্ণ চোখের দৃষ্টি গিয়ে স্থির হয় একটি চোখে। বাস্তবিকই তা একটি চোখ।
কী আশ্চর্য সমাপতন! একজন দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবার অঙ্গীকার নিয়ে লড়াই করতে চেয়েছিল, আর একজন বিশ্বাস হারিয়ে ঘন অন্ধকারের মধ্যেই তার ব্যস্ত জীবন কে স্তব্ধ করে রেখেছিল। পরতের পর পরত খুলতে থাকে, আর দর্শকের সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ হয় পরের পরতের দিকে।
আরও পড়ুন, EXCLUSIVE: অনুপমের দৃষ্টিকোণে গানের সাতকাহন (ভিডিও interview)
অ্যাডভোকেট জিয়নের কাছে শ্রীমতী পৌঁছে যাওয়ার পরেই, এক অমোঘ টান অনুভূত হতে থাকে। কেন এ টান! কেন প্রায় গায়ে পড়া ঘনিষ্ঠতা, যা চরিত্রের সঙ্গে আপাত বেমানান?
এখানেই লুকিয়ে রয়েছে গল্পের প্রাণভোমরা...
অন্য পারে রুমকি বসবাস করে হারানোর বোধ নিয়ে, কিছুটা ভেঙে পড়া নিয়েও।
না, এ কোনও সাধারণ বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের গল্প নয়। এ এক অন্য রকম প্রেমের গল্প, তীব্র ভালবাসার গল্প। জীবনদর্শন, প্রবল অনুভূতিশীলতা, গভীর মেধা এবং ঝকঝকে বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ সমৃদ্ধ এক অন্যরকম ভালবাসা এবং প্রেমের গল্প।
জিয়নের চরিত্রে প্রসেনজিতের স্বাভাবিক, সংযত অভিনয় যে উচ্চতায় পৌঁছে যায়, তা বলার ভাষা রাখেনা। কৌশিক গাঙ্গুলি যে একজন অসাধারণ অভিনেতা- তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন। ঋতুপর্ণা তো ভাল অভিনেত্রীই। তবে নতুন করে মুগ্ধতা জাগান চূর্ণী গাঙ্গুলি। একজন মমতাময়ী মা এবং স্ত্রী; একই সঙ্গে এক এলিগ্যান্ট লেডি ... এক অনায়াস দক্ষতায় তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন!
আরও পড়ুন, প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা কি এবার গিনেস বুকে?
সত্যি, এ এক অন্য দৃষ্টিকোণ, অন্য ভালবাসার গল্প। মুভি শেষ হয়ে যাবার পরও দর্শক সম্মোহিত! কারণ তখন তার চেতনার আনাচে কানাচে উঁকি মারছে অন্য দৃষ্টিকোণ, অন্য আলোর উদ্ভাস।