হাতে গোনা আর মাত্র ক'দিন। দোরগোড়ায় শারোদৎসব। দুর্গাপুজো (Duga Puja 2021) মানেই বাঙালিদের কাছে দেদার আড্ডা, কবজি ডুবিয়ে খানাপিনার সঙ্গে নতুন সিনেমা দেখা। প্রত্যেকবছরই পুজোর আগে সিনেদর্শকদের আলাদা একটা কৌতূহল থাকে যে, এবারের পুজো রিলিজ কোন কোন সিনেমা, তা নিয়ে। কিংবা প্রিয় তারকার কোনও ছবি রিলিজ করছে কিনা, সেদিকেও নজর থাকে ষোলো আনা! অতঃপর ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে শুরু হয় অপেক্ষার পালা। আর এবার তো সেই আমেজের পাল্লা আরও ভারী বই কম নয়! কারণ, গত দেড় বছর ধরে অতিমারী আবহে বিনোদুনিয়া বেজায় ভুগেছে। তবে ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ খোলার ছাড়পত্র থাকলেও দর্শকদের কাছে হলমুখো হওয়া এযাবৎকাল নৈব নৈব চ-ই ছিল। তবে এবার পুজোর আগে একের পর এক সিনেমা রিলিজের ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেই তালিকায় দেব, জিৎ, কোয়েল মল্লিক, মিমি চক্রবর্তী থেকে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী কে নেই?
কোন কোন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে এবারের পুজোয়? একনজরে দেখে নেওয়া যাক-
গোলোন্দাজ (Golondaaj)- ভারতীয় ফুটবলের জনক নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর বায়োপিক। পরিচালনায় ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সিনেমার দৌলতেই বছর খানেক বাদে প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন অভিনেতা দেব। আগামী ১০ অক্টোবর নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর ভূমিকায় সিনেপর্দায় আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন দেব। যে ছবি এক অনন্য লড়াইয়ের গল্প বলে। গোরাদের বিরুদ্ধে সিনেপর্দায় ফুটবলের ময়দানে জবাব দিতে দেখা যাবে বাংলার ফুটবলারদের। উল্লেখ্য, এই ছবির জন্য কম কসরত করেননি দেব। পায়ের ভাঙা আঙুল নিয়ে ফুটবল প্র্যাকটিস পর্যন্ত করেছেন। এমনকী, ফুটবল খেলার অ-আ-ক-খ যিনি জানতেন না, দিন-রাত এক করে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অতঃপর দেবকে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর ভূমিকায় দেখতে দর্শকরা যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, তা বলাই বাহুল্য। দেব ছাড়াও অভিনয় করেছেন ইশা সাহা (Isha Saha), শ্রীকান্ত আচার্য-সহ আরও অনেকে।
হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী (Hobu Chandra Raja Gobu Chandra Mantri)- এই ছবিটিও ১০ অক্টোবরই মুক্তি পাচ্ছে। একই দিনে রিলিজ করছে দেবের দুটি ছবি। 'গোলোন্দাজ'-এ তিনি অভিনয় করেছেন, আর 'হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী'র প্রযোজক তিনি। অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, শুভাশীষ মুখোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, বাংলার সিনেদর্শকদের জন্য বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রযোজক দেব (Dev)। সিনেমাহল নয়, হবু চন্দ্র আর গবু চন্দ্রর আগমন তিনি ঘটাতে চলেছেন টেলিভিশনের পর্দাতেই। নিঃসন্দেহেই পুজোর বাজারে যেখানে একাধিক সিনেমা মুক্তি নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে, সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে প্রযোজক হিসেবে এটা যে এক বিরাট ঝুঁকি, তা বলাই বাহুল্য।
কী বলছেন প্রযোজক দেব (Dev)? তাঁর কথায়, “শুধু বাংলার জন্য নয়, গোটা পৃথিবীজুড়ে বাংলা সিনেমার দশর্ক রয়েছেন, আর তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া। আমার কাছে আমেরিকা-বাংলাদেশ, তাছাড়াও আরও অনেক জায়গা থেকে অনুরোধ এসেছে এই ছবিটা দেখার জন্য। গোড়া থেকেই ভেবেছিলাম এই সিনেমাটা বিশাল সংখ্যক দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেব। যেহেতু এইধরনের ছবি ভীষণই বিরল বাংলা সিনেমায়। সিনেমাহলে ছবিটা দেখার মজা আলাদা। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গোটা পরিবার একসঙ্গে বসে দেখুক, এটাই চাই।”
FIR- পুজোয় বক্স অফিস কাঁপাতে দেব-জিতের পাশাপাশি রয়েছেন অঙ্কুশ হাজরা আর বনি সেনগুপ্তও। এক ভিন্ন ধারার গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। প্রেক্ষাগৃহে আসছে ১০ অক্টোবর। অঙ্কুশ-বনি দুই অভিনেতাই পুজো রিলিজ নিয়ে বেজায় উচ্ছ্বসিত।
অঙ্কুশ (Ankush Hazra) বললেন, "উচ্ছ্বসিত তো বটেই, তবে এবার যেহেতু অতিমারী এখনও কাটেনি, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি মানুষ যাতে হলমুখী হয়। ৪-৫ বছর আগের মতো যেরকম হলে গিয়ে সিনেমা দেখার প্রবণতা ছিল, সেটা কোথাও গিয়ে করোনার জন্য জং ধরেছে। তো সেই প্রেক্ষিতে একটু চিন্তিত। কারণ, বিগ বাজেট সম্ভবনামূলক বলিউড ছবিগুলোও বাজারে সেভাবে পসার জমাতে পারেনি এবার। আমার মনে হয়, এটা অনেকটা পরীক্ষার মতো, যে দেখা যাক কী হয়.. গোছের। কারণ, টলিউডের প্রথম সারির তারকাদের ছবিও মুক্তি পাচ্ছে পুজোয়। এদিকে প্রেক্ষাগৃহ এখনও ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়েই চলছে। তাই বোঝা খুব মুশকিল যে দর্শকরা কতটা হলে এসে ছবি দেখবেন।"
<আরও পড়ুন: বড় ছেলে ইব্রাহিম খানও বাবার পথেই, করণ জোহরের ছবিতে সহ-পরিচালক সইফ-পুত্র>
বনির (Bonnyb Sengupta) মন্তব্য, "পুজো রিলিজের মজাটাই আলাদা। আর সবাইকে অনুরোধ করব যে করোনা বিধিনিষেধ মেনে যেন সিনেমাহলে যান। এতদিন বাদে একগুচ্ছ বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে, তাই চাইব দর্শকরা যেন হলে পপকর্ন, কোল্ডড্রিংকস নিয়ে সিনেমা উপভোগ করেন।"
বনি- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাসের আঁধারে তৈরি সায়েন্স ফিকশন। মুক্তি পাচ্ছে ১০ অক্টোবর। অভিনয়ে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chatterjee) এবং কোয়েল মল্লিক (Koel Mallick)। এছাড়াও রয়েছেন অঞ্জন দত্ত, কাঞ্চন মল্লিক। প্রযোজনায় সুরিন্দর ফিল্মস। উল্লেখ্য, এই সিনেমার পরিচালনাও করেছেন পরমব্রত খোদ। ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন অনুপম রায়। পুজো রিলিজ মানেই অভিনেতাদের আলাদা অনুভূতি। এপ্রসঙ্গে কোয়েল মল্লিক জানিয়েছেন, বাড়িতে দুর্গাপুজো হলেও শৈশব থেকেই পুজোর কোনও একটা দিন পরিবারের সকলে মিলে হইহই করে বেরিয়ে পড়তেন সিনেমা দেখতে। সেই নস্ট্যালজিয়া আজও একইরকম রয়েছে। আর এবার বনি রিলিজের জন্যও বেজায় আশাবাদী তিনি। বললেন, "বাংলায় খুব একটা সায়েন্স ফিকশন ছবি হয় না। উপরন্তু ছবির গল্প যখন শীর্ষেন্দপ মুখোপাধ্যায়ের সেটাই সিনেমার একমেবাদ্বিতীয়ম ইউএসপি। খুব সুচারুভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির ব্যবহার হয়েছে। এক সন্তানকে বাঁচানোর লড়াইয়ে প্রেক্ষাপটে মা-বাবার করুণ কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। আমি নিজেও তো একজন মা, তাই গল্পটার সঙ্গে কানেক্ট করা খুব সহজ।"
বাজি (Baazi)- অংশুমান প্রত্যুষের পরিচালনায় নতুন ছবি। জুটি বেঁধেছেন জিৎ-মিমি (Jeet-Mimi)। প্রযোজক অভিনেতা জিৎ খোদ। মুক্তি পাচ্ছে ১০ অক্টোবর। বলাোই বাহুল্য, ওই একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে দেব প্রযোজিত 'হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্র মন্ত্রী' এবং অন্যদিকে দেব অভিনীত 'গোলোন্দাজ'। অতঃপর পুজোর বক্স অফিসে দুই চলিউড সুপারস্টারের যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। তেলুগু ছবি 'নান্নাকু প্রেমাথু' ছবির অনুকরণে বাজি'র চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে। সিনেমার কাহিনী বলতে, বাবাহ শত্রুর সঙ্গে প্রতিশোধ নিতে তাঁর মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসায় নায়ক। কিন্তু ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। আর এই ছবির সংগীতের দায়িত্বে যখন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, তখন দর্শক-শ্রোতারা যে ভাল ভাল গান উপহার পেতে চলেছেন, তা বলাই বাহুল্য।
ষড়রিপু - দীর্ঘ দু’ দশক পর পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর (Chiranjeet Chakraborty) ছবি। আর সেই প্রেক্ষিতেই বর্তমানে নয়া আমেজে মেতেছেন বারাসতের বিধায়ক। গোয়েন্দা চন্দ্রকান্তার ভূমিকায় চিরঞ্জিৎ ছাড়াও সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee), অরুণিমা ঘোষ (Arunima Ghosh), রণজয় বিষ্ণু ও দর্শনা বণিককে।
সাইকোলজিক্যাল ক্রাইম থ্রিলার ‘ষড়রিপু ২ জতুগৃহ’র (SHORORIPU 2 Jotugriho) ট্রেলারেই উঠে এসেছে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ (অহংকার) ও মাৎসর্য্যর (হিংসা) কথা। এক দম্পতির জীবনে কীভাবে ঘনিয়ে আসে অন্ধকার? একটা অনভিপ্রেত ঘটনায় বদলে যায় কয়েকটা মানুষের জীবন। সেই গল্পই ‘ষড়রিপু’র সিক্যুয়েলে তুলে ধরেছেন পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী। সিনেমার সংগীতের দায়িত্বে রূপম ইসলাম (Rupam Islam)।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন