ছবি: দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন
পরিচালনা: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়ে: আবির চট্টোপাধ্যায়, ঈশা সাহা, অর্জুন চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, খরাজ মুখোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, জুন মালিয়া, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, আরিয়ন
রেটিং: ৩/৫
উপেন্দ্রকিশোর, সত্যজিৎ পরীক্ষার সময়েও বইয়ের মধ্যে যাঁরা লুকিয়ে পড়েছেন তাঁরা জানেন, রহস্য আর ধাঁধা মাথায় কিলবিল করার দুরন্ত অনুভূতিটা। তবে তাদের অনেকেই নাক সিটকোতেন ইতিহা...স পড়ার নামে। ইয়া বড় বড় লেখা! পাগল নাকি! সাল তারিখ মুখস্থ করো, যত ঝক্কি। দোষটা যদিও তাঁদের নয়, আবার এদের অনেকেই বড় হতে হতে সেই ইতিহাসকেই ভালবেসে ফেলেছেন। যাক গে যাক, এত যে কথা বলছি তার কারণ, এবারেও কথা রাখলেন 'সোনাদা'।
সোনাদা গোয়েন্দা নন, 'গুপ্তধনের সন্ধানে' থেকেই একথা বারবার বলে এসেছেন ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন' যেন বাংলার ফেলে আসা ইতিহাস এবং প্রাচীন স্থাপত্যের চোখ ধাঁধানো সমাহার। সুবর্ণ সেন অক্সফোর্ডে বছর সাত অধ্যাপনার করার পর দেশে ফিরে ইতিহাসের অধ্যাপনাই করেন। তাঁর দুই সাগরেদ আবির ও ঝিনুক। পেশায় আইনজীবী আবির, পিএইচডি করছে ঝিনুক। হঠাৎ তাঁদের কাছে আসে চুরি হয়ে যাওয়া একটি ছুরি, যা মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় দিয়েছিলেন তাঁর পরম বন্ধু এক জমিদার দুর্গাবতি দেব রায়। সেই হারিয়ে যাওয়া ১৮ দশকের ছুরি এবং সেই সময়ের গুপ্তধনের খোঁজেই দুর্গেশগড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা সোনাদা অ্যান্ড কোম্পানির। গোপাল ভাঁড়, সিরাজৌদ্দোলা, জগৎ শেঠদের নিয়ে অজানা ইতিহাসের পাতা খুললেন পরিচালক।
আরও পড়ুন, মুক্তি পেল রোমাঞ্চ ও রহস্যতে পরিপূর্ণ ‘সাগরদ্বীপে যকের ধন’-এর টিজার
পরিচালকের চিত্রনাট্যের প্রশংসা না করলেই নয়। অভিনয়ে আবির, অর্জুন ও ঈশা সাবলীলতা বজায় রেখেছেন। ভাল খরাজ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, লিলি চক্রবর্তী, আরিয়ন। তবে গল্প জমজমাট না হলে সিনেমার গাড়িটা ঠিক করে চলে না। সুতরাং শুভেন্দু দাশমুন্সিকে কুর্নিশ চেনা রহস্যের গল্পে ইতিহাস-পুরাণ-লজিককে একসঙ্গে মিশিয়ে 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন'-কে বাঙালিয়ানায় সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। 'অ্যাভেঞ্জার্স' জ্বর থেকে রক্ষা পায় নি এই ছবির ক্ষুদে সদস্য, কিন্তু বাঙলার চালচিত্রের ইতিহাস থেকে দুর্গাপুজোর সাবেকী ধারা, সবটা দু'ঘন্টায় তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন পরিচালক। যোগ্য সঙ্গত আবহ ও ছবির গানের। গান ছাড়া ছবিটাই সম্ভব হত না।
ছোটদের গরমের ছুটিতে নিজের ছোটবেলার স্বাদ ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ধ্রুব। সেই নিরিখে তিনি সফল। তবে বুড়ো (অর্থাৎ বড়) চোখে গ্রাফিক্স, জলের নীচে অতক্ষণ একজন নতুন সাঁতারুর শ্বাস বন্ধ করে থাকা, এবং এখনকার সময়ে গুহায় ভাল্লুক দেখলে হয়তো ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে। সোনাদার মারামারি করার দৃশ্যও আপনাকে এড়িয়ে যেতে হবে। পোশাক এবং মেকআপে সাবেকিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতা দেখা গিয়েছে। সম্পাদনায় নতুনত্ব চোখে পড়েনি। তবে ছোটদের দিনটা ভাল করে দেওয়ার মতো অনেক রসদ রয়েছে 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন'-এ।