Television Industry in Bengal Faces Financial Crisis, Scam: টেলিজগতের একটি বিরাট আর্থিক দুর্নীতির কথা সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়েছে শিল্পীদের সংগঠন আর্টিস্টস ফোরাম। ২৫ মে-র ওই বৈঠকে ফোরামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত কিছু অসৎ ব্যক্তি তাঁদের স্বার্থের কারণেই এই দুর্নীতিটি ঘটিয়েছেন। এই সংস্থা অনির্দিষ্টকাল শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের পেমেন্ট বাকি রেখেছে এবং গত আর্থিক বর্ষে তাঁদের পারিশ্রমিক থেকে টিডিএস কেটে নেওয়া হলেও, সরকারি কোষাগারে টিডিএস জমা পড়েনি, এমনটাই জানানো হয়েছে প্রেস বিবৃতিতে। দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া-র কর্ণধার বলে পরিচিত, প্রযোজক রানা সরকার ছাড়াও গতকালের সাংবাদিক বৈঠকে কয়েকটি নাম উঠে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম ওই সংস্থার প্রাক্তন ক্রিয়েটিভ হেড ও সংস্থার প্রাক্তন ডিরেক্টর অদিতি রায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র পক্ষ থেকে অদিতি রায়ের সঙ্গে এই প্রসঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথন হয় এবং অদিতি জানিয়েছেন যে শিল্পীদের পারিশ্রমিকের টাকা বাকি রাখা এবং টিডিএস না জমা দেওয়াতে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। কারণ তিনি ছিলেন ক্রিয়েটিভ হেড। পেমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে কোনওদিন তাঁর কোনও অংশগ্রহণ ছিল না, যতদিন তিনি ওই সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। যে ইস্যুতে এই মুহূর্তে শিল্পীদের পেমেন্ট আটকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে, সেই নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের ব্য়বস্থা করা তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না কারণ তিনি ক্রিয়েটিভ হেড এবং কোম্পানির ডিরেক্টরের পদ থেকে মার্চ মাসের গোড়াতেই পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: Bengali Television Industry Payment Issues: টেলিজগতের আর্থিক দুর্নীতি! ট্যাক্স কারচুপির অভিযোগ
অদিতি জানালেন, ''আমি বুঝতেই পারছি না, পেমেন্ট বাকি রাখার ক্ষেত্রে কেন আমার নামটা আসছে, যেখানে ওই কোম্পানির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই নেই। যেটা অনেকেই জানেন না তা হল, আমি নিজে প্রায় পাঁচ মাসের বেতন পাইনি। এই ইন্ডাস্ট্রিতে তো পেমেন্ট সব সময় নিয়মিত হয় না। অনেক সময়েই দু'মাসে পুরো টাকা পাওয়া যায়। তাই আমরা মানিয়ে নিই। গত বছর অক্টোবর থেকে আমি বেতন পাইনি, তাও কাজ করে গিয়েছি। কারণ যাই হোক না কেন, এপিসোড ঠিক সময়ে চ্যানেলের কাছে যাতে পৌঁছে যায়, সেই দায়িত্বের জায়গাটা থেকেই গিয়েছিল। তার পরে ৭ মার্চ আমি পদত্যাগ করি।''
অদিতি জানালেন, মার্চ মাসে পদত্যাগের পরে প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত 'জউবা কর্প' ওয়েবসাইটে দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার কোম্পানি-তথ্য়াবলীর মধ্যে তাঁর নামটি ডিরেক্টর হিসেবে রয়েছে। পাশাপাশি আর এক প্রাক্তন ডিরেক্টর অরিন্দম পালের নামটিও এখনও সেখানে রয়েছে। তিনিও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন যে মার্চ মাসেই পদত্যাগ করেছেন। অদিতি ও অরিন্দমের পদত্য়াগের বিষয়টি দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার লিগাল সেল থেকে সংশ্লিষ্ট চ্য়ানেলকে ইমেল মারফত জানিয়ে দেওয়া হয়।
অদিতি রায়ের দেওয়া তথ্য় অনুযায়ী, ডিসিএম-এর লিগাল সেল-এর পক্ষ থেকে যে মেল গিয়েছিল সংশ্লিষ্ট চ্য়ানেলগুলির কাছে, সেখানে উল্লেখ করা হয়, 'অদিতি রায় এবং অরিন্দম পাল দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার ডিরেক্টরের পদ থেকে পদত্য়াগ করেছেন এবং কোম্পানি তাঁদের পদত্য়াগপত্র গ্রহণ করেছে। তাঁদের কোম্পানি সংক্রান্ত সব ধরনের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করা হচ্ছে নির্দিষ্ট তারিখ থেকে। ভবিষ্য়তে কোম্পানির কোনও বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও ক্ষমতা তাঁদের থাকছে না।' ওই মেলের বয়ানে এটাও বলা হয় যে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যেন ভবিষ্যতে কোম্পানি সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে অরিন্দম পাল ও অদিতি রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ না করেন।
আরও পড়ুন: Artists’ Forum Press Conference: বিশাল আর্থিক দুর্নীতি টেলিজগতে, আন্দোলনের ইঙ্গিত ফোরামের
অদিতির বক্তব্য, তার পর থেকে তিনি একাধিকবার রানা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁর নিজের পেমেন্ট নিয়ে। শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের পেমেন্টের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্যেও তিনি বার বার আবেদন জানান রানা সরকারের কাছে। অদিতি বলেন, ''রানাদার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল মে মাসের শুরুতে। তখন এই পেমেন্ট মিটিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, ইউ প্লিজ স্টে আউট অফ ইট।''
কিন্তু ওয়েবসাইটে যে ডিরেক্টর হিসেবে এখনও তাঁর এবং অরিন্দম পালের নামই দেখা যাচ্ছে! অদিতির বক্তব্য, তিনি ওই কোম্পানির বেতনভুক ডিরেক্টর ছিলেন। কোনও কোম্পানি থেকে পদত্য়াগের পরে তার যাবতীয় পাবলিক কমিউনিকেশন থেকে নামটি সরিয়ে নিতে কিছুদিন সময় দিতে হয় এমনটাই কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয় তাঁকে। নাম সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে পদত্য়াগের পরেই তিনি দুবার রিমাইন্ডার দেন কোম্পানিকে এবং আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই সমস্য়ার কোনও সুরাহা হয়নি বলেই তিনি জানান।
অদিতি জানালেন, ''শিল্পীদের জন্য আর্টিস্টস ফোরাম রয়েছে, টেকনিসিয়ানদের জন্য ফেডারেশন রয়েছে কিন্তু দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার অফিসে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁরা, আমি, অরিন্দমদা, আমরা তো এই সংগঠনের মধ্যে পড়ি না। আমাদেরও লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। আমাদের তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে এগোতে হচ্ছে। আমি আন্তরিকভাবেই চাই যে এই অচলাবস্থাটা কেটে যাক। শুধু আমার জন্য় বলছি না, আমি চাই সবাই, যাদের যাদের টাকা বাকি রয়েছে, তারা প্রত্য়েকেই টাকা পেয়ে যাক।''